দাবার জীবন্ত কিংবদন্তী, বিশ্বনাথন আনন্দ

বুদ্ধির খেলা দাবা, প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী মনে করা হয় দাবার জন্ম ভারতে। সেই দাবার জীবন্ত কিংবাদন্তী হলেন বিশ্বনাথন আনন্দ। বিশ্বের দাবা মানচিত্রে তিনি ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছেন।

১৯৬৯ সালের ১১ই ডিসেম্বের তামিলনাডুতে এই দাবা খেলোয়াড়ের জন্ম হয়। তাঁর বাবা ছিলেন রেলের উচ্চপদস্থ কর্মী এবং তাঁর গৃহবধু। বাবা মায়ের তিন ছেলে মেয়ে মধ্যে সবচেয়ে ছোট হলেন আনন্দ। মা সুশীলা দেবীর প্রিয় খেলা ছিল দাবা। মা সুশীলা দেবীই আনন্দের দাবারু হয়ে ওঠার নেপথ্য কারিগর। আনন্দ ছয় বছর বয়স থেকেই মায়ের কাছে দাবা শিখছেন। তাঁর শিক্ষা জীবন কেটেছে চেন্নাইতেই। অবসর সময় এই কিংবদন্তী বই পড়তে ও গান শুনতে ভালবাসেন।

১৯৮৮ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনিই ভারতের প্রথম গ্রান্ডমাস্টার হন। অবশ্য তারও এক বছর আগে মাত্র আঠারো বছর বয়সে প্রথম এশিয়ান হিসেবে জুনিয়র বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন আনন্দ। বিশ্বের অন্যতম দ্রুতগতির দাবারু হিসেবে তিনি খ্যাত৷ দ্রুত চাল দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে তিনি ওস্তাদ! তাৎক্ষণিক চালেই তিনি বাজিমাত করেন। আনন্দের প্রতিপক্ষরাও স্বীকার করেছেন এই চাল দেওয়ার ক্ষমতাই আনন্দের সবচেয়ে বড় শক্তি।

 

Anand1 (1)

 

এ যাবৎ ইলো রেটিং-এর ইতিহাসে বিশ্ব কেবল চার জন দাবারুই ২৮০০ বা তার বেশি পয়েন্ট পেয়েছেন। বিশ্বের সেই চার জনের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন আনন্দ! ২০০৬ সালে তিনি এই অনন্য নজির অর্জন করেছিলেন। টানা ২১ মাস বিশ্বে দাবায় এক নম্বর স্থান ধরে রেখেছিলেন আনন্দ।

মাত্র ২২ বছর বয়সেই আনন্দ প্রথম সুপার টুর্নামেন্ট জিতেছেন। ২০০০ সালে, আনন্দ ফিড ওয়ার্ল্ড দাবা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এরও সাত বছর পরে, তিনি বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় তাঁর জীবনের স্বপ্ন বাস্তব হয়েছে।

 

Anand2

 

ভ্লাডিমির ক্রমনিক, ভ্যাসেলিন টোপালভ এবং বরিস গেলফ্যান্ডের মতো সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারদের হেলায় হারিয়েছেন আনন্দ, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শিরোপা অর্জন করে ১৩০ কোটিকে গর্বিত করেছেন। ঘটনাচক্রে ২০১৭ সালে ৪৮ বছর বয়সে, আনন্দ একশো জনের বেশি তরুণ প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন এবং র‌্যাপিড চেজ-এ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছেন! বিশ্বনাথন আনন্দকে ইন্সটাফরেক্সের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে ঘোষণা করেছে।

 

Anand3

 

নিজের খেলোয়াড় জীবনে পাঁচ পাঁচবার দাবায় বিশ্বজয়ীর খেতাব জিতেছেন। দেশ-বিদেশের নানান পুরস্কার, সন্মাননা রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। রাজীব খেলরত্ন, অর্জুন পুরস্কার, পদ্মভূষণ সাদা-কালো বোর্ডের লড়াই এ সব পুরস্কারই এনেদিয়েছে তাঁকে। ২০০৮ সালে​​ পদ্মবিভূষণ-এ সম্মানিত হন তিনি। প্রথমবারের জন্য কোনো ক্রীড়া ব্যক্তিত্বকে এই সম্মানে ভূষিত করা হয়। তিনি ও শচীন তেন্ডুলকর যুগ্মভাবে প্রথমবার ক্রীড়াবিদ হিসেবে এই সন্মান লাভ করেন। আজও তিনি খেলে চলেছেন, যদিও আগের থেকে খেলার পরিমান কমিয়েছেন। দেশে দাবা খেলার প্রসার করতে তিনি বদ্ধ পরিকর। ভারতে দাবার উন্নতির জন্য নানান উদ্যোগ নিচ্ছেন। কেবল ভারত নয় বিশ্বে দাবার রোল মডেল তিনি। তাঁর জীবনকে উপজীব্য করে চলচ্চিত্রও তৈরি হতে চলেছে। অগুনিত তরুণের স্বপ্নের নাম বিশ্বনাথন আনন্দ, অনুপ্রেরণার নাম তিনি। ভারতীয় উপমহাদেশের দাবার অপর নাম হয়ে উঠেছেন আনন্দ!

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...