ক্যালিফোর্নিয়ার মন্টেরি উপসাগরের ঠিক ৩০০০ ফিট নিচে পাতা আছে একটি কেবল যা কিনা বিজ্ঞানীদের সামুদ্রিক জীবন সম্পর্কে নানা তথ্যের খোঁজ এনে দেয়| প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে ৩২ মাইল পথ জুড়ে বিছানো রয়েছে এই কেবল| সামুদ্রিক জীবদের থেকে পাঠানো নানা শব্দ ও আলোক তরঙ্গ তারা গ্রহণ করে এবং পাঠিয়ে দেয় বিজ্ঞানীদের কাছে| বিষাক্ত শ্যাওলার থেকে নিঃসৃত আলো থেকে শুরু করে ডলফিনের হাই পিচ সাউন্ড এই কেবলে ধরা পড়ে সবটাই|
সম্প্রতি, ইউনিভার্সিটি অফ রাইস এবং ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক এই কেবলের এক অন্য ব্যবহার আবিষ্কার করেছেন| তাঁরা জানিয়েছেন, এই কেবলের মাধ্যমে সমুদ্রের তল থেকে সৃষ্টি হওয়া ভূমিকম্পের খোঁজ আগে থেকেই এনে দিতে পারবে এই কেবল| বিগত বছরে একদল গবেষক এই নিয়ে চারদিনের একটি গবেষণা চালান| গত ২৮শে নভেম্বরের ‘সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায় সেই গবেষণার সময় ১২ মাইলের কেবলের মাধ্যমে তাঁরা সমুদ্রতলের গতির খোঁজ পেয়েছেন| তাঁরা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের মার্চ মাসে এই গবেষণার মাধ্যমে তাঁরা খোঁজ পেয়েছিলেন ৩.৫ ম্যাগনিটিউডের একটি ভূমিকম্পের যা কিনা ঘটেছিল ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরের একটি শহর গিলরয় অঞ্চলে| এছাড়া তাঁরা আরও জানান, এই গবেষণার ফলে তাঁরা সমুদ্রের গভীরের একটি ফল্ট সিস্টেমও আবিষ্কার করেছেন| গবেষকরা জানিয়েছেন, কেবলটির এই নতুন কাজ আবিষ্কারের ফলে তাঁরা সমুদ্রতল সম্পর্কে অনেককিছু জানতে সমর্থ হয়েছেন|
সমুদ্রের নিচে এই প্রজেক্টটি নিয়ে কাজ শুরুর আগে তাঁরা এই প্রজেক্টির ব্যবহার করেন স্থলে| সেখানে ডিপার্টমেন্ট অফ এনার্জির সাহায্যে তাঁরা পাতেন ১৪,০০০ মাইলের একটি ভূগর্ভস্থ ফাইবার অপটিক কেবল| স্থলভাগে পরীক্ষার সময়, তাঁরা কেবলের শেষপ্রান্তে যোগ করেন একটি আলোক বিচ্ছুরণের| ভূগর্ভস্থ মাটি সরে যাওয়ার সাথে সাথে কেবলের উপর টান পরার ফলে সেই কেবল থেকে আলোর বিচ্ছুরণ হতে শুরু করে| সেই আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য মাপার মধ্যে দিয়ে সেই স্থানের ভূমিকম্পের ম্যাগনিটিউড জেনেছিলেন বিজ্ঞানীরা| ৬ মাস স্থলভাগে পরীক্ষার পর বিজ্ঞানীরা সমুদ্রতলে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেন| মন্টেরি অ্যাকসেলেরেটেড রিসার্চ সিস্টেমের সহযোগিতায় গবেষকরা সমুদ্রের নিচে পাতেন প্রথম এই আন্ডারওয়াটার ফাইবার অপটিক কেবল| জানা গেছে, প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর এই কেবলের রক্ষণাবেক্ষণের কারণে কাজ বন্ধ রাখা হয়|