এক টাকায় রক্তপরীক্ষা

রক্তে ব্লাড সুগারের মাত্রা কি আবার ওঠানামা করছে? কিংবা হঠাৎ খুব দুর্বল লাগছে? হিমোগ্লোবিন কমে যায়নি তো? না, একবার না মাপলেই নয়। কিন্তু তার জন্যেও আবার যেতে হবে নিকটবর্তী কোনো ডাক্তারখানায় কিংবা ওষুধের দোকানে। 

গ্রামের দিকের মানুষজন আর্থিক সমস্যার কারণে প্রেশার বা সুগার পরীক্ষাই করা হয়ে ওঠেনা।সেইসব মানুষজনের কথা মাথায় রেখে সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে এমন একটি যন্ত্র, যার মাধ্যমে রক্ত পরীক্ষা করতে খরচ হবে মাত্র এক টাকা। কেমন সেই মেশিন

 

সম্প্রতি খড়গপুর আইআইটির একদল বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছেন এমন একটি যন্ত্র যার মাধ্যমে রক্তপরীক্ষার জন্য খরচ হবে মাত্র এক টাকা। যন্ত্রের সাথে ব্যবহৃত হয়েছে একটি স্মার্টফোন।কিছু সহজ পদ্ধতির ব্যবহারে এই যন্ত্র পেয়েছে এক নতুন রূপ। 

বিভিন্ন পরিবেশে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করার পরেও দেখা গেছে রক্তপরীক্ষার ফলাফল দিয়ে অব্যর্থ এই যন্ত্রটি

গ্রামাঞ্চলের প্রত্যন্ত স্থান যেখানে নূন্যতম স্বাস্থ্য পরিষেবাটুকুও মেলে না, সেইসব জায়গার মানুষদের কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়াই মূল উদ্দেশ্য এই যন্ত্র আবিষ্কারের পিছনে।

আজ থেকে প্রায় সাত বছর আগে শুরু হয়েছিল গবেষণা।সম্প্রতি 'রয়্যাল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রি'র জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাটি।জানা গেছে, সাত বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর আবিষ্কৃত হয়েছে এই যন্ত্রটি।'আল্ট্রা লো কস্ট ব্লাড টেস্ট ডিভাইস' নামক এই মেশিনটি বানানো খুব জটিল ছিল না, জানালেন গবেষকরা। তাদের মতে, যন্ত্রটিকে সঠিকভাবে কাজ করানোর জন্য প্রয়োজন একটি স্মার্টফোন ও সেই স্মার্টফোনকে রাখার জন্য একটি হোল্ডার।হোল্ডারে অবশ্য থাকা চাই একটি এলইডি লাইট।এই লাইটের আলো ফিল্টার পেপারের মধ্যে দিয়ে গিয়ে ক্যামেরার লেন্সে পড়বে।এই ফিল্টার পেপারের মধ্যেই থাকবে রক্তের নমুনা। এরপর ক্যামেরার মাধ্যমে ওঠা ছবি থেকেই নির্ধারণ করা যাবে হিমোগ্লোবিনের পরিমান কিংবা ব্লাড সুগারের পরিমান।প্রথমে এক ফোঁটা রক্ত দেওয়া হবে ফিল্টার পেপারে। ফিল্টার পেপারে পড়ার ফলে সেইখানেই আলাদা হয়ে যাবে রক্তরস এবং রক্ত কণিকা।বর্তমানে রক্তের সমস্ত উপাদান দিয়েই রক্তে শর্করার পরিমান নির্ণয় করা হয়। 

কিন্তু আইআইটির গবেষকদের আবিষ্কৃত নতুন যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে সুগার টেস্টের সময় প্রয়োজন পড়বে না রক্তকণিকার।শুধুমাত্র রক্তরসের মাধ্যমেই নির্ণয় করা যাবে রক্তে শর্করার পরিমান।

 

এক ফোঁটা রক্ত থেকে পাওয়া রক্তরস টেস্ট টিউবের মধ্যে দিয়ে গিয়ে সারফেস টেনশনের ফলে গিয়ে পড়ে পেপারের অপর প্রান্তে আগে থেকে তৈরী করে রাখা কিছু রাসায়নিকের উপরে।রাসায়নিকের সঙ্গে রক্তরসের বিক্রিয়ার ফলে রক্তরস ধীরে ধীরে বাদামি রং ধারণ করবে। রক্তরস যত বেশি বাদামি হতে থাকবে বোঝা যাবে সেই রক্তে শর্করার পরিমান তত বেশি।তবে এর জন্য লাগবে একটি মোবাইল অ্যাপ। সেই অ্যাপটি রক্তরসের রঙের বদল দেখে জানিয়ে দেবে রক্তে ঠিক কতটা পরিমান শর্করা উপস্থিত।এই একই পদ্ধতিতেই নির্ণয় করা যাবে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান।

 

গবেষকরা জানিয়েছেন, খুব স্বল্প ব্যায়েই সমগ্র কর্মকান্ডটি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। প্রধান জিনিস যেটি লেগেছে সেটি হলো একটি স্মার্টফোন এবং একটি এলইডিযুক্ত হোল্ডার। এছাড়া ফিল্টার পেপার কিনতে যেটুকু খরচ হয়েছে তা নগণ্যই বলা চলে।পরীক্ষাগারের বাকি রাসায়নিকের কথা বাদ দিলে এই যন্ত্রের মাধ্যমে রক্ত পরীক্ষা করতে খরচ হবে মাত্র ১ টাকা

তাছাড়া গবেষকরা জানিয়েছেন, এইভাবে রক্ত পরীক্ষার জন্য লাগবে না এক সিরিঞ্জ রক্তএক বিন্দু রক্তই জানান দেবে রক্তে কতটা বেড়েছে শর্করার পরিমান আর কতটাই বা হিমোগ্লোবিন রয়েছে রক্তে। এই পদ্ধতি আবিষ্কারের ফলে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষজন নূন্যতম স্বাস্থ্য পরিষেবা পাবে, এমনটাই আশা গবেষকদের

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...