বয়স মাত্র ২৬২৪ বছর। যীশু খ্রীষ্টের জন্মের আগে থেকেই পৃথিবীর বুকে রয়েছে সে। যুগ বদলেছে, কালের নিয়মে তার সময়ের বেশিরভাগ জিনিসই ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু সে আজও একইভাবে পৃথিবীর বুকে বিদ্যমান। না, কোনো স্থাপত্য বা ভাস্কর্যের কথা বলছি না। এখানে বলা হচ্ছে এমন এক জিনিসের কথা যার প্রাণ আছে। হ্যাঁ, এবার ঠিক বুঝেছেন। একপ্রকার উদ্ভিদের কথা বলছি। খ্রিস্টজন্মের আগে থেকে আজও স্বমহিমায় বিদ্যমান সেই গাছ।
আমেরিকার উত্তর ক্যারোলিনায় ব্ল্যাক নদীর তীরে সম্প্রতি এই অতিপ্রাচীন উদ্ভিদের সন্ধান মিলেছে। এর আগে ধারণা করা হয়েছিল ৬০৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে রোপন করা এক উদ্ভিদই বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন উদ্ভিদ। কিন্তু সম্প্রতি সাইপ্রাস জাতীয় এই গাছ নিজের অস্তিত্বের প্রকাশ ঘটিয়ে সেই ধারণা ভুল বলে প্রমান করে দিয়েছে। প্রাচীন গাছের সন্ধানে গবেষণা করা বিজ্ঞানীদের একটি দল জানান, এই গাছটি যে জঙ্গলে পাওয়া গেছে সেই জঙ্গলটিই বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন একটি জঙ্গল। বিজ্ঞানীরা জানান, এই গাছটি যে অঞ্চলে অবস্থিত সেই জায়গাটি 'থ্রি সিস্টার্স সোয়াম্প' নামে পরিচিত। এই জায়গায় অনেকগুলি বহুপ্রাচীন গাছ আছে বলেই জানিয়েছেন তারা।
কিন্তু এই গাছ এতদিন বেঁচে রয়েছে কিভাবে? কি বলছেন বিজ্ঞানীরা? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই সাইপ্রাসজাতীয় গাছ হলো একধরণের নন ক্লোনাল গাছ। এছাড়া এই অঞ্চলের ব্ল্যাক নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে শুধু এই গাছের সন্ধানই পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই অঞ্চলে অধিষ্ঠান করা বেশিরভাগ গাছই ২ হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো। এই অঞ্চলে গাছের অতি ঘনত্বের জন্য এই অঞ্চলে এখনো মনুষ্য বসতি গড়ে ওঠেনি। তাই ওই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য এখনো নষ্ট হয়নি। এই গাছগুলি শুধু একে অপরের পরিপূরক হয়েই বেঁচে আছে। এই অঞ্চলের প্রতিটি গাছের গায়ে রয়েছে আংটির মতো বলয়ের দাগ। যা এই গাছের বয়স নির্ধারণের পাশাপাশি এই অঞ্চলে কোন সময় কতটা বৃষ্টি হয়েছিল তার হিসেবও দেবে। এই গাছটিকে বিশ্বের প্রাচীনতম গাছ বলে মনে করা হলেও বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এর থেকেও বেশি বয়সী গাছ রয়েছে আমেরিকাতেই। ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫ হাজার বছরের পুরোনো একটি পাইন গাছ রয়েছে যা আজও বিশ্বের প্রাচীনতম গাছের শিরোপা অর্জন করে রয়েছে।