গরু অন্ত প্রান সুদানের মুণ্ডারি উপজাতি

পেশায় রাখাল বলা চলে।জীবন যাপনে যাযাবর।সত্যজিত রায় অন্তিম লগ্নের ছবি- আগন্তুক। উৎপল দত্ত ওরফে মনমোহন মিত্র উত্তাল কণ্ঠে বলছেন, আমি বর্বর হতে চাই। আলতামিরার গুহায় বাইসন আঁকতে চাই...না , না ঠিক গৌরচন্দ্রিকা নয়। প্রাসঙ্গিক কারণেই উঠে এল এই উদাহরন।আজকের বিবৃতির স্বাপেক্ষে। 

গড়নে ও বরণে দক্ষিন আফ্রিকা মহাদেশের অন্যান্য উপজাতি গোষ্ঠী গুলোর সঙ্গে সাদৃশ্যে বিশেষ ফারাক নেই এদের। ফারাক শুধু অন্তরের । অন্তরের সবটা জুড়ে রয়েছে শুধু গরু আর গরু।তাঁরা মুণ্ডারি উপজাতি। দক্ষিন সুদানের বিচিত্রতার স্বাক্ষর।মা নয়, গরু সেখানে সন্তানরূপে লালিত ।

cow1

প্রায় সদ্য জন্মানো একটা নতুন দেশ দক্ষিন সুদান।পৃথিবীর মানচিত্রে নয়া সংযোজন।গৃহ যুদ্ধ আর ঠাণ্ডা লড়াইয়ের আবহাওয়ায় তাপমাত্রার উষ্ণতা দিনে দিনে বাড়ছে। এর মধ্যেই হাসি মুখে গরুর পাল সামলাচ্ছেন মুণ্ডারিরা; সন্তানস্নেহে।

নীল নদ কে ঘিরেই বসবাস । যদিও গরুর প্রধান খাওয়ার ঘাস এর সন্ধানে এরা স্থান বদলাতেও পিছপা হয়না । এভাবেই জুটেছে যাযাবরের জীবন।আগলে রাখার মত বিষয়-আশয় কিছু নেই । তবুও সঙ্গে রয়েছে বড় বড় মেশিন গান। সন্তানসম গরুদের রক্ষার্থে । এক একটা গরুর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় ৫০০ ডলার ছুঁয়েছে। 

cow2

বিরাট শিং ওয়ালা এইসব গরুরা নাকি সকল গোত্রের রাজা। এরকম গরু স্বয়ং ইশ্বরের দান।ভাবতে বাকি নেই যে চোরা শিকারীদের নজর এই নিস্পাপ গোষ্ঠীর উপর পড়াটা স্বাভাবিক।এখনও পর্যন্ত তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার গরু ও তাদের রক্ষা করতে গিয়ে দুই হাজার মুণ্ডারি মৃত্যু বরণ করছে ফি বছরে।হ্যাঁ , গরুদের জন্য এরা জীবন দানেও প্রস্তুত।

দৈনন্দিন জীবনের সকল ক্ষেত্রেই অপরিহার্য গরু। প্রধান খাদ্য গরুর দুধ।তাতেই জীবন ধারণ । যুবক ছেলেরা চুলের বিভিন্নতর রঙ পেতে মাথা পেতে নেয় গো মূত্র। গো হত্যা মহাপাপ। তাই মাংস খাননা এরা। গরুই এখানে সামাজিক মর্যাদা ও প্রভাব প্রতিপত্তির মাপকাঠি। বিয়ের সময় যৌতুক হিসাবেও গরু দেওয়া নেওয়া হয়। গরুরাও এতটাই প্রভুভক্ত যে সারাদিন যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়ালেও , ঠিক দিনের শেষে ফেরৎ আসে নিজের ঠিকানায়। প্রভুর স্নেহের আশ্রয়ে।

প্রভুরাও প্রভুত্বের কথা রাখে। গরুর শুকনো গোবরই তাদের আরামদায়ক বিছানা। সুঠামদেহী মুণ্ডারিরা আবার একটু আমুদে স্বভাবের। সূর্য মুখ লোকালেই কুস্তি খেলায় মেতে ওঠে সকলে। এমনকি বিভিন্ন কুস্তি প্রতিযোগিতাতেও নাম লেখায় তারা। আফ্রিকার মরুতে, জলে, মাটিতে লেখা তাদের বীর গাথা। হবে নাই বা কেন! মানুষের সঙ্গে অন্য প্রানীর সুদৃঢ় সম্পর্কের এমন নজির সত্যিই বিরল। মানবতার প্রকৃষ্টতম উদাহরণ বলা চলে এদের।

cow3

আদিবাসীদের প্রাচীন , বর্বর বলেই ক্ষান্ত শহুরেরা।পারস্পরিক নির্ভরশীলতার জ্যান্ত দলিল মুণ্ডারি জাতি এবং তাদের স্নেহভাজন গরু। কোথায় পাবে তারা এহেন সম্পর্কের ছবি? কালের স্রোতে অটুট থাকুক এই স্নেহের বন্ধন , লালনের বন্ধন। প্রকৃতি ফিরে পাক তাঁর সকল আত্মজকে , পুরনো গন্ধে-ছন্দে-বর্ণে; ভেদাভেদ ভুলে। 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...