শিল্পীর দায় শুধু শিল্পের কাছে নয়, সমাজের কাছেও। শিল্পীর মধ্যে জাগ্রত যে শিল্পবোধ তা চোখের বাইরে থেকে যাওয়া জগতের কাছে পৌঁছে দেওয়া, আপন থেকে বাহির হয়ে বিশ্বলোকে নিজেকে মেলে ধরা এই তার নিরন্তর চলন।
শিল্প আর শিল্পীর সেই দায় থেকেই জন্ম শিল্পচর্চা ফাউন্ডেশনের। শিল্পচর্চা ফাউন্ডেশন সারা বছর ধরে নানা ধরণের শৈল্পিক কর্মকান্ড করে থাকে। এর মধ্যে শিল্পপ্রদর্শনী, শিল্পকর্মশালা, শিল্প-সংক্রান্ত ডকুমেন্টরি সিনেমা এবং লোকশিল্পের প্রচার ও প্রসার।
সম্প্রতি উত্তর কলকাতার নটী বিনোদিনী মেমোরিয়াল আর্ট গ্যালারিতে এই সংস্থা আয়োজন করেছিল এক অনন্য শিল্প প্রদর্শনীর। অংশগ্রহণ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার শহরতলী থেকে আগত শিল্পীরা।
দুই বাংলার সম্ভাবনাময় শিল্পীরা যাঁরা নিভৃতে তাদের শিল্পচর্চা করছেন অথচ সঠিক ভাবে প্রদর্শনী অথবা প্রচারের আলোয় আসতে পারছেন না, শিল্পচর্চা ফাউন্ডেশন তাদের জন্য এই প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে চলেছে। সতেরো জন তরুণ শিল্পী এবং পাঁচজন স্বনামধন্য অতিথি শিল্পী এই প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন।
টেম্পারা, অ্যাক্রিলিক, ইঙ্ক- পেন, অয়েল, ডিজিটাল কোলাজ, সেরামিক ভাস্কর্য,ডিজিটাল পেইন্টিং এবং paper mache-এর ভাস্কর্য প্রদর্শিত হয়েছে।
প্রতিটি ক্যানভাসে উঠে এসেছে দর্শন। তা কখনও মিথোলজি কখনও দেবমহিমা আবার কখনও আমাদের চোখে দেখা সমকাল।
শিল্পীদের ব্যক্তিগত সংগ্রাম, বেঁচে থাকা ধরা দিয়েছে ছবিতে।
প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন বর্ষীয়ান শিল্পী দেবব্রত চক্রবর্তী, শিল্পী অভিশংকর মিত্র, জনপ্রিয় আর জে রাকেশ ( সিওও জিয়ো বাংলা), আর জে প্রজ্ঞা (প্রধান সম্পাদক জিয়ো বাংলা)
যেহেতু লোকশিল্পকে বিভিন্নভাবে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া এই ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য, তাই সম্মানীয় অতিথিবরণ এবং অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল টেরাকোটার 'পাবনা পুতুল'। শিল্পচর্চা-২ শিরোনামের প্রদর্শনীটি কিউরেট করেছেন শিল্পী অমিত বিশ্বাস এবং শিল্পী চিন্ময় মুখোপাধ্যায়।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে শিল্পী চিন্ময় মুখোপাধ্যায় জানান, প্রতিবার নতুন নতুন শিল্পী এবং তাঁদের কাজকে প্রদর্শনীতে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। সারা বছর ধরে নানাভাবে সেই খোঁজ চলতে থাকে।
প্রদর্শনীর পাশাপাশি শিল্পকর্মশালার আয়োজন করা হয়। বর্ষীয়ান শিল্পী পার্থপ্রতিম দেবের পৌরহিত্যে। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা শিল্পকর্মশালায় অংশ নেন।
প্রদর্শনী চলবে ৭ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত।