আমাদের আশপাশে এমন অনেক মানুষের খোঁজ পাওয়া যায়, যাঁরা নিজেদের জীবনের উদ্দেশ্য অর্থবহ করেছেন অপরের হিতার্থে। নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছেন, অপরের সেবা করার মাধ্যমে। এমনই একজন পরোপকারী মানুষ হলেন বনহুগলির বাসিন্দা মধুসূদন সিকদার এবং তাঁর স্ত্রী শিবানী শিকদার। ডাক্তারি পড়ার খরচ না থাকায় বন্ধ হয়েগিয়েছিল ডাক্তারি পড়া। কিন্তু নিজের অভাবনীয় শখ তাঁকে করে তুলেছে অনন্য। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল তথা তাঁদের সমসাময়িক কিংবদন্তিদের কণ্ঠস্বরের রেকর্ডিং সংগ্রহ করা তাঁর নেশা। এমন বহু রেকর্ডিং তাঁর সংগ্রহে রয়েছে। তাছাড়াও নিজের জমানো টাকা দিয়ে কেনেন হাসপাতালের জন্য বিভিন্ন রকম মেশিন। যাতে গরিব মানুষেরা চিকিৎসার সুযোগ পায়। এই কাজে পাশে পেয়েছেন নিজের স্ত্রীকে শিবানীদেবীকেও। নিজের জমানো টাকা উৎসর্গ করেছেন গরিব মানুষের সেবায়। ইতিমধ্যেই দুজনে মিলে ২০১৭ সালের এপ্রিলে আর জি কর মেডিক্যাল হাসপাতালকে দিয়েছেন প্রায় ৬ লক্ষ টাকা দামের ডায়ালিসিস মেশিন এবং ২৯ হাজার টাকা দামের অপথ্যালমোস্কোপ। নেফ্রোলজির ডাক্তারদের অনুরোধে আরও আধুনিক প্রক্রিয়ায় রোগীদের ডায়ালিসিস করতে তাঁর কেনা প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা দামের মেশিন চলে এসেছে তিন মাস আগেই। সদ্য কিনেছেন চোখের বিভাগের জন্য তিন লক্ষ টাকা দামের স্লিট ল্যাম্প। এগুলি এখন হাসপাতালে দেবার অপেক্ষা।
আরও অবাক হওয়ার বিষয় হল এগুলি কিনতে কোনো ডাক্তার বা কোনো কর্তা অথবা কোনো কোম্পানির কোনো লোকজনকে নাক গলাতে দেননি মধুসূদন বাবু। সরাসরি চিঠি লিখেছেন সংশ্লিষ্ট মেশিনের কোম্পানির পদাধিকারীদেরকে। নিজের উদ্দেশ্যের কথা জানিয়ে দরদামও করেছেন। সম্প্রতি যে ডায়ালিসিস মেশিনটি কেনা হয়েছে, সেটির দাম প্রথমে কোম্পানি চেয়েছিল ১৬ লক্ষ টাকা। তা দরাদরি করে ৮ লক্ষ টাকায় কিনেছেন তিনি। ৮৬ বছর বয়স, তাই ১৪ বছর ধরে শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যান্সার। তবু কোনোকিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি মধুসূদনবাবুর সেবা করার বাসনার বিরুদ্ধে। ভাগ্নে জামাইয়ের কিডনির অসুখ ছিল। কিন্তু ডায়ালিসিস মেশিন খারাপ থাকায় সময়মতো চিকিৎসা পাওয়া যায়নি, আবার অল্প সময়ের মধ্যে কোনো হাসপাতালে জায়গাও মেলেনি। তাই শেষ সময়ে একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছিল ভাগ্নে জামাই। সেই জন্য যাতে কোনো গরিব রোগী মেশিনের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়, তাই অশক্ত স্বামী-স্ত্রীর এই অভিনব পণ, যা হাসপাতালের ডাক্তারদেরও মুগ্ধ করেছে।