উলুবেড়িয়া জায়গাটা আমাদের অনেকের কাছেই পরিচিত জায়গা। এখানে খুব সুন্দর পিকনিক স্পট রয়েছে। তা ছাড়াও এখানকার পর্যটন কেন্দ্র গড়চুমুক-ও পরিচিত নাম। গড়চুমুক-আটান্ন গেট থেকে উলুবেড়িয়ার দিকে যাওয়ার রাস্তায় দু'কিলোমিটার গেলেই পড়বে ধান্দালি স্টপেজ। ধান্দালি থেকে বোয়ালিয়া যাওয়ার রাস্তার পাশে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা 'পূর্ণেন্দু স্মৃতি শিল্পগ্রাম'। শহরের জেট গতির জীবনের মাঝে শান্ত এই গ্রাম শিল্পের পরশে অপরূপ হয়ে উঠেছে। গ্রামটির প্রতিষ্ঠাতা লেখক, কবি, চিত্রশিল্পী, চিত্র পরিচালক প্রয়াত পূর্ণেন্দু পত্রীর শিষ্য, তাঁর কাছের মানুষ আর এক লেখক, কবি, শিল্পী, শিক্ষক রণজিৎ রাউত। গ্রাম সাজানোর পরিকল্পনা করেছেন নিজেই।
প্রায় সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে পাঁচিল ঘেরা গ্রামটিতে ঢুকলে চোখ জুড়িয়ে যায়। রয়েছে ছোটদের ছবি আঁকার আসর আকডুম, চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পূর্ণেন্দু স্মৃতি শিশু শিক্ষা নিকেতন। চিত্র, ভাস্কর্য, হস্তশিল্পের মুক্ত সংগ্রহশালা। সেখানে আছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করে আনা শিকড়-বাকড়ে তৈরী নানা শিল্পবস্তুও। পূর্ণেন্দু পত্রী স্মরণে তৈরী এই শিল্পগ্রামে রয়েছে একটি বড় নিমগাছ। যার নিচে বসার জায়গা করা হয়েছে। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বট, শিমুল, বকুল, আম, সবেদার মত দুশোরও বেশি গাছ। সেখানে শোনা যায় পাখির কলকাকলি। আছে ঘণ্টাবৃক্ষ। যাতে বাঁধা আছে পঞ্চাশটির বেশি ঘন্টা। শিল্পী রণজিতের কথায়, অসমের শিবসাগর জেলার দুলিয়াজন এলাকার বাসিন্দারা তাঁদের ইচ্ছাপূরণে গাছে ঘন্টা বেঁধে রাখেন। অসমের লোকসংষ্কৃতিকে তুলে ধরা হয়েছে এই 'ঘন্টাবৃক্ষের' মধ্যে দিয়ে। গাছগাছালি ঘেরা অঞ্চলে রাখা চারটি বড় বড় মাটির জালা। এই জেলাগুলির নাম দেওয়া হয়েছে 'কৃষ্টি কলস'। এখানে রাখা হয়েছে দেশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আনা টেরাকোটার জিনিসপত্র। বাগানের পাশে একটা ঘরে রয়েছে ঢেঁকি। সেখানে রয়েছে হাতে আঁকা বিভিন্ন ছবি। এখানে যাঁরা পিকনিক করতে আসবেন, তাঁদের কথা ভেবে তৈরী করা হয়েছে 'রাঁধাবাড়ার ঘর'। সংলগ্ন পুকুরে ফুটেছে লাল শালুক। দুলকি চালে চলেছে রাজহাঁসের দল। আছে 'পূর্ণেন্দু স্মৃতি তোরণ', 'পূর্ণেন্দু স্মৃতি মুক্তমঞ্চ'। স্থায়ী এই মঞ্চে তৈরী করা হয়েছে ছ'টি সিমেন্টের চেয়ার। সামনে বেশ খানিকটা জায়গা- যেখানে পাঁচ-সাতশো জনকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করাই যেতে পারে। রয়েছে কংক্রিটের বাঁধানো 'স্বপ্নসৃজন বেদী'। তার সামনে আছে পূর্ণেন্দু পত্রীর আঁকা বেশ কিছু ছবি। সেখানকার শিল্প প্রদর্শনশালায় শিল্পীর ষোলটি ছবি রয়েছে। এ ছাড়াও ওই প্রদর্শনশালায় যাতে ছোটরা বসে ছবি আঁকতে পারে, তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
আসলে শিল্পী রণজিৎ রাউতের মতে পূর্ণেন্দু পত্রীর মত শিল্পীর সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। তাই বলা যেতে পারে, ছাত্র হিসেবে শিক্ষকের প্রতি গুরুদক্ষিণা হিসেবেই এই অভিনব ভাবনা রণজিৎ বাবুর। ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মাধবী মুখোপাধ্যায় এই শিল্পগ্রামের সূচনা করেছিলেন।