অমৃতলাল বসু ছিলেন একাধারে নাট্যকার, নাট্যসংগঠক ও অভিনেতা। অমৃতলাল বসুর জন্ম হয় ১৮৫৩ সালের ১৭ এপ্রিল বসিরহাটে। ১৮৬৩ সালে তিনি কলকাতার অ্যাসাব্লিজ ইনস্টিটিউশন থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। দু বছর কলকাতাতে ডাক্তারি পড়ার পর কাশীতে গিয়ে তিনি হোমিওপ্যাথিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। তারপর কলকাতাতে ফিরে এসে চর্চা করেন। এছাড়াও তিনি বেশ কিছু পেশার সাথে যুক্ত ছিলেন। যেমন স্কুল শিক্ষক, পোর্টব্লেয়ারে সরকারি চিকিৎসক, পুলিশ প্রভৃতি। কিন্তু থিয়েটারের প্রতি আকর্ষণের জন্য কোনো পেশাতেই শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারেননি। উনিশ শতকে বাংলা রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি নাটক রচনা ও অভিনয়ের প্রতিও মনঃসংযোগ করেন। ১৮৭২ সালে অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফির হাত ধরেই তিনি ন্যাশনাল থিয়েটারে নীলদর্পণ নাটকে সৈরিন্ধ্রিও চরিত্রে প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন।
নাট্যজগৎ-এর সম্রাট গিরিশ ঘোষের সঙ্গে তার সখ্যতার সম্পর্ক তৈরী হয়। ১৮৭৫ সালে তিনি গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারে ম্যানেজার পদে যুক্ত হন। প্রিন্স অফ ওয়েলসের কলকাতায় আসা ও জনৈক রাজভক্তের চাটুকারিতাকে ব্যঙ্গ করে লেখা 'জগদানন্দ ও যুবরাজ প্রহসনে অভিনয়ের কারনে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এবং এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন চালু করেন ১৮৭৬ সালে। ১৮৮৮ সালে গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার ভেঙে যায়। এরপর অমৃতলাল স্টার থিয়েটারে যোগ দেন। টানা ২৫ বছর তিনি স্টার থিয়েটারে যুক্ত ছিলেন এবং এখানে তিনি বহু নাটকে অভিনয় ও পরিচালনার কাজ করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের নাট্যকার হিসাবে দেশ জুড়ে খ্যাতি লাভ করেন। প্রহসন ও নাটক সংক্রান্ত তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা ৪০ টি। তার মধ্যে কয়েকটি উল্ল্যেখযোগ্য হল তিলতর্পন (১৮৮১), বিবাহ বিভ্রাট (১৮৮৪), তরুবালা (১৮৯১), কালাপানি (১৮৯২), বাবু (১৮৯৩), বিমাতা (১৮৯৩), আদর্শ বন্ধু (১৯০০), অবতার (১৯০২) প্রভৃতি। তিনি প্রহসন ও ব্যাঙ্গ রচনাতেই সর্বোচ্চ সফলতা লাভ করেছিলেন। রঙ্গ ব্যাঙ্গমূলক নাটক রচনা ও তাতে অভিনয় করাতে সুধীর সমাজ তাঁকে রসরাজ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯২৯ সালের ২ রা জুলাই অমৃতলাল পরলোক গমন করেন