জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেলেন ডঃ অমিতাভ ঘোষ

সর্বকনিষ্ঠ লেখক হিসেবে এবারের ৫৪তম জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেলেন বাঙালি লেখক অমিতাভ ঘোষ। এই প্রথম জ্ঞানপীঠ পুরস্কার দেওয়া হল ইংরিজি সাহিত্যের জন্য। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভারতের সাহিত্যের স্বীকৃতি হিসেবে জ্ঞানপীঠ পুরস্কারকে সর্বোত্তম পুরস্কার হিসেবে ধরা হয়। শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকত্বে অধিকারী লেখকরাই এই পুরস্কারের আওতায় থাকেন।

    সমাজতাত্বিক হিসেবে পরিচিত অমিতাভ ঘোষ সাহিত্যকে তুলে নিয়ে গেছেন এক অন্য মাত্রায়। তাঁর লেখনীতে সমাজের বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে। ভারতীয়, বিশেষ করে বাঙালি সমাজকে তিনি দেখেছেন নিজের মত করে। মানবতাবাদ, ধৈর্য্য এবং আত্মবিশ্বাস- ই পারে মানব সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। তাঁর লেখায় বার বার তা উঠে এসেছে। ডঃ ঘোষের মতে বিভিন্ন ভাষার মধ্যে সেতু গড়ে দেয় এই তিনটি বিষয়, তা অনস্বীকার্যতাঁর লেখা ৩০টির ও বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে 'দ্য শ্যাডো লাইনস'-এর জন্য সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার পান তিনি। ২০০৭ সালে পান পদ্মশ্রী পুরস্কার। তাঁর নতুন গ্রন্থ 'গান আইল্যান্ড' কথা বলেছে দেশত্যাগী, বলা ভালো প্রয়োজনের তাগিদে যাদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হয় তাদের নিয়ে। পাশাপাশি পরিবেশের পরিবর্তন এবং মানব সমাজ ও পক্ষী সমাজের মধ্যে কিছু জায়গার দ্বন্দ্ব ও মিল নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন থেকে ইতালির ভেনিস শহর পর্যন্ত গড়িয়েছে তাঁর কাহিনীর বিস্তার।

   পুরস্কার প্রদান করার সময় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ডঃ গোপালকৃষ্ণ গান্ধী বলেন, "ডঃ ঘোষ হলেন পরিবেশের দার্শনিক এবং সাহিত্যের নাবিক। সাহিত্যের জগতে তাঁর বই হল মূল্যবান রত্নের মত।" অমিতাভ ঘোষ নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে নস্টালজিক হয়ে যান। ঐতিহাসিক এবং নৃতত্ত্ববিদ হিসেবে জীবন শুরু করে যখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, পুরোপুরি লেখক হিসেবে নিজেকে মেলে ধরবেন, তখন দিল্লিতে একটি ছোট কামরায় বলা ভালো 'সার্ভেন্টস কোয়ার্টারে' থেকে একটি ছোট টাইপরাইটারে লিখে প্রথম দুটি বই বের করেছিলেন। সেই সময় অনেকটা সময় দিল্লিতে কাটিয়েছিলেন তিনি। কখনও কল্পনাতেও ভাবেন নি একদিন সাহিত্যের সবচেয়ে বড় সম্মান জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পাবেন। পুরস্কার নিতে এসে সেই দিল্লি যেন অনেকটাই নতুনভাবে ধরা দিয়েছে তাঁর কাছে। তিনি আরও বলেন, এই বইটি লেখার সময় অনেকবার তাঁকে সুন্দরবনে আসতে হয়েছে এবং সেই জায়গা সম্বন্ধে পড়াশুনো করতে হয়েছে। পাশাপাশি তিনি ইতালির ভেনিস শহর নিয়েও যথেষ্ট পড়াশুনো করেছেন। দুই জায়গাকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা এবং জীবনের টানাপোড়েন উঠে এসেছে তাঁর গল্পে।

       চারটি বিষয়ে ডক্টরেট উপাধি পাওয়া ডঃ ঘোষ তাঁর কাজের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক হলেও মনে প্রাণে কিন্তু নিখাদ বাঙালি। তাই তো তাঁর গল্পে বার বার উঠে এসেছে বাঙালি সমাজ ও বাংলার কথা। আমাদের বাঙালিদের গর্বের লেখক অমিতাভ ঘোষ তাঁর লেখনীর মাধ্যমে আরও আন্তর্জাতিক হয়ে উঠুন তাই চাইব।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...