‘বহেনো অউর ভাইয়ো’, ‘ভাইয়ো অউর বহেনো’...।
ঘরের কোণে রাখা কাঠের যন্ত্র। ভিতর থেকে এক্ষুণি বেরিয়ে আসবে লোকটা!
আচ্ছা, লোকটা কোথায় থাকে?
শুধু এই প্রশ্নের উত্তর জানতে জানতেই কেটে গিয়েছে কতকাল। বয়স বেড়েছে। সময় বদলেছে। বুড়ো হয়েছে সেই কাঠের যন্তর, কিন্তু বদলায় নেই বাক্সের ভিতর থেকে আসা কন্ঠের আকর্ষণ। সেই ব্যারিটোন ভয়েজের। যে কন্ঠস্বর এক সুতোয় বেঁধেছিল গোটা দেশকে।
প্রয়াত হলেন সেই কণ্ঠের মালিক ভারতীয় বেতারের ‘গ্র্যান্ড ওল্ডম্যান’ আমিন সায়ানি। বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। বুধবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। পুত্র রাজিল সায়ানি সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন পিতার সংবাদ।
রেডিয়ো আর আমিন সায়ানি-মিলেমিশে গিয়েছিল দুই নাম। রেডিয়োতে আসার অনেক আগে থেকে শুরু হয়েছিল তাঁর ভাষার চর্চা।
১৯৩২ সালের ২১ ডিসেম্বর মুম্বইতে জন্ম। বাড়িতে ভাষা এবং সাহিত্য চর্চার আবহ। খুব ছোটবেলায় মায়ের কাছেই হাতে কলমে শুরু হয়েছিল জার্নালে এডিটিং-এর কাজ। মহাত্মা গান্ধীর উদ্যোগে হিন্দি, গুজরাটি এবং উর্দু ‘রেহবার’ নামে একটি পাক্ষিক জার্নাল প্রকাশিত হত। সেই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁর মা কুলসুম সায়ানি । ইংরেজি ব্রডকাস্টার হামিদ সায়ানি সম্পর্কে আমিনের দাদা, তিনিই রেডিয়োর সঙ্গে পরিচয় করান তাঁকে। ১৯৫১-তে রেডিয়ো সিলনে যোগ দেন। প্রথমে ইংরেজিতে পরে হিন্দি ভাষায়।
‘নমস্কার ভাইয়ো অউর বহেনো’, ম্যায় আপকা দোস্ত আমিন সায়ানি বোল রাহা হুঁ’
এই কন্ঠস্বরে রাতারাতি মুগ্ধ হয়েছিল ভারতীয় শ্রোতারা। তাঁর স্টাইল, ভাষার ব্যবহার, উপস্থাপনা ভেঙে দিয়েছিল শহর গ্রামের শ্রোতার ভেদাভেদ। আমীনের গলা শোনার জন্য মুখিয়ে থাকত মানুষ। চিঠি আসত দফতরে। পঞ্চাশের দশকে রেডিয়ো সিলনে প্রতি সপ্তাহে ‘বিনাকা গীতমালা’ ৩০ মিনিটের একটি শো করতেন তিনি। হিন্দি সিনেমার গানের অনুষ্ঠানটি বেতার মাধ্যমে জনপ্রিয়তার সব রেকর্ড চুরমার করে দেয়। ১৯৫২ থেকে ১৯৯৪ টানা বিয়াল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছে! প্রথমে সিলনে পরে বিবিধভারতী প্রচার তরঙ্গে।
ছয় দশকেরও বেশি সময়ের কেরিয়ার তাঁর। আমিন সায়ানি ৫৪,০০০টিরও বেশি রেডিও প্রোগ্রামের জন্য প্রযোজনা,ভয়েস-ওভার রেকর্ড করেছেন। প্রায় ১৯,০০০ জিঙ্গেলের ভয়েসওভার প্রদানের জন্য লিমকা বুক অফ রেকর্ডসেও তাঁর নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তিনি ‘ভূত বাংলা’, ‘তিন দেবিয়ান’ এবং ‘কাতল’-এর মতো চলচ্চিত্রেও ঘোষক হিসেবে কাজ করেছেন।
আমিন সায়ানির কণ্ঠস্বর সময়ের চিহ্ন। পঞ্চাশের দশকে কেমন ছিল রেডিয়ো দিন সেই গল্পই যেন বলে যান তিনি। গানে, গল্পে জীবনের উদযাপনে আমিন অনন্য!