জ্বলছে পৃথিবীর ফুসফুস, রেকর্ড পরিমাণ অগ্নিকান্ডে বিপর্যস্ত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ রেইনফরেস্ট আমাজন

সমগ্র পৃথিবীর বায়ুমন্ডল জুড়ে ২০ শতাংশ অক্সিজেন প্রদানস্বরূপ আমাজনকে পৃথিবীর 'ফুসফুস' বলা হয়ে থাকে। আর সেই ফুসফুসেই এবার গভীরভাবে ছড়িয়ে পড়লো ব্যাধি। তারই দরুণ, এখনও জ্বলছে পৃথিবীর অন্যতম গভীর অরণ্য আমাজন। আগুনের শিখা ক্রমশ দুরবর্তী হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। সোমবার আমাজোনাস ও রনডোনিয়া রাজ্যের বনাঞ্চলে লাগা আগুনের ধোঁয়া ২,৭০০ কিলোমিটারেরও অধিক দূরত্ব অতিক্রম করে সাও পাওলো’তে এসে পৌঁছলে, বিকেল তিনটের পর অন্ধকারে ডুবে যায় ব্রেজিলের এই শহর। ব্ল্যাকআঊটের সুবাদে দেশ জুড়ে জারি হওয়া জরুরী অবস্থা এখনও বহাল রয়েছে।

FotoJet (131)

যদিও আমাজনে আগুন লাগার ব্যাপারটি নতুন কিছু নয়, ২০১৩ সালের পর আমাজনের অগ্নিকান্ডের রেকর্ড রাখা শুরু হয়, আর তারপর থেকে হিসেব করলে এখনও অবধি এটাই সর্বোচ্চ, ব্রেজিলের দ্যি ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ সূত্রের খবর, গত বছরের তুলনায় এ বছর ৮৩ শতাংশ বেশী অগ্নিকান্ডের দৃশ্য দেখা গেছে। বিবিসি বলছে, ব্রাজিলে শুষ্ক মৌসুমে দাবানল স্বাভাবিক হলেও গবাদিপশুর চারণভূমি সৃষ্টি করতে আমাজনের অনেক এলাকায় ইচ্ছা করেও আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

ইতিমধ্যেই এ নিয়ে তুমুল হইচই পড়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে। বিশ্বের অধিকাংশ মিডিয়া এই নিয়ে নিশ্চুপ থাকায় ক্ষোভ উগড়ে দিতে দেখা গেছে অনেককে।

ইনপে’র তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আমাজনে ৭২,০০০-এরও বেশি অগ্নিকান্ড ঘটেছে, যেখানে ২০১৮ সালে হওয়া অগ্নিকান্ডের সংখ্যা ছিল ৪০,০০০-এরও কম।

অন্যদিকে, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচারের (ডব্লিউডব্লিউএফ) আমাজন কর্মসূচির প্রধান রিকার্ডো মেলো জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক বিভিন্ন তথ্যে বনাঞ্চল ধ্বংসের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার যে চিত্র নজরে এসেছে তারই ধারাবাহিকতায় এ অগ্নিকাণ্ডের পরিমাণ বাড়ছে।

অগ্নিকান্ডের পরিমাণ আমাজোনাস ও রোনডোনিয়াতে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেলেও মাতো, গ্রোসো ও পারা রাজ্যে তা কিছুটা হলেও কমেছে। মহাকাশের ছবিতে ব্রাজিলের একেবারে উত্তরের রাজ্য রোরাইমা কালো ধোঁয়ায় ঢেকে আছে বলে দেখা গিয়েছে; অগ্নিকাণ্ডের কারণে পার্শ্ববর্তী আমাজোনাসে ইতিমধ্যেই জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন স্যাটেলাইট প্রোগ্রাম ‘কোপারনিকাস’ একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে; যেখানে দেখা যাচ্ছে, অগ্নিকান্ড থেকে নির্গত ধোঁয়া ব্রেজিল ছাড়িয়ে পূর্ব আটলান্টিক উপকূলের দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। ব্রেজিলের প্রায় অর্ধেক অংশ ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়ার পাশাপাশি তা প্রতিবেশী দেশ পেরু, বলিভিয়া ও প্যারাগুয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

 সম্প্রতি বিশ্ব জুড়ে দ্রুত আবহাওয়া পরিবর্তন ও ঊষ্ণায়নের যে চিত্রগুলি চোখে পড়েছে, তার গতি শ্লথ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে বিশ্বের বৃহত্তম এই অরণ্য, আমাজন। এই রেকর্ড মাত্রার অগ্নিকান্ডের ফলে শুধু বিরাট অংশের বনাঞ্চল তথা অক্সিজেনের ভান্ডারই শুধু শেষ হয়ে যাচ্ছে না, লক্ষাধিক প্রজাতির উদ্ভিদের পাশাপাশি বৃহৎ সংখ্যক বন্যপ্রাণীর প্রাণও এই মূহুর্তে সংকটাবস্থায়।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...