‘তীর্থরাজ’ অমরকন্টক

এই তীর্থকে বলা হয় ‘তীর্থরাজ’। জীবনে একবার অন্তত আসতেই হয় পাহাড়-নদী-জঙ্গল ঘেরা এই প্রান্তে। বাঙালিদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণের তীর্থ অমরকন্টক।

আশির দশকে পরিচালক সুখেন দাস মধ্যপ্রদেশের বিখ্যাত এই তীর্থস্থানের নামানুকরণে ছবি করেছিলেন ‘অমরকন্টক’। নিখাদ বাণিজ্যিক ছবি হলেও সেই ছবির নামের গুণে তীর্থরাজ অমরকন্টক জনপ্রিয় হয়ে বাঙালি পর্যটকদের কাছে। শুধু বাঙালি বলে না, আপামর তীর্থপ্রেমী মানুষের কাছেই অমরকন্টক অবশ্যগামী। প্রধান দ্রষ্টব্য স্থান  নর্মদেশ্বরের মন্দির। এই শহরে সন্ত কবীরের পদধূলি পড়েছিল। অমরকন্টক তাঁর সাধনক্ষেত্র।

১০৬৫ মিটার উচ্চতায় মন্দিরে ঘেরা এক শহর অমরকন্টক। এখানে বিন্ধ্য এবং সাতপুরা মিলিত হয়েছে মহীকাল পর্বতের সঙ্গে। নর্মদা আর শোন নদীর উৎপত্তিস্থল। পুরাণ কাহিনি বলে, সত্যযুগে দেবতা ও অসুরের যুদ্ধে ‘অমরানাং কট’ অর্থাৎ হাজার হাজার বিনাশ ঘটে। ‘অমরানাং কট’ থেকে নাম হয় অমরকন্টক।  

নর্মদা নদীর উৎসস্থল ‘নর্মদা উদ্গম’কে কেন্দ্র করে রয়েছে এক কুণ্ড। তার পাশেই এক মন্দির। বিশাল রাজকীয় প্রবেশদ্বার পেরিয়ে পৌঁছতে হয় মন্দির চত্বরে। নর্মদার উৎসমুখ জলের প্রায় ১২ ফুট নিচে,  অবস্থান করেন নর্মদেশ্বর। মহাদেবের স্বেদগ্রন্থী থেকে সৃষ্ট নর্মদা। বছরে দু’এক বার কুণ্ডের পিছন-দরজা খুলে জল ছেঁচে ফেলার পর ফের কুণ্ড ভর্তি করে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই সময় নর্মদেশ্বরের মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেন দর্শনার্থীরা।

অমরকন্টকের মুখ্য আকর্ষণ এই মন্দির চত্বর। কুন্ড ‘নর্মদা মাইয়া কি উদগম’-এর এক ধারে মন্দিরের ভিতর রয়েছে কষ্টি পাঠরে মা নর্মদার মূর্তি। রেওয়ার মহারাজা গুলাব সিং এই মন্দির নির্মাণ করেন। শিব চতুর্দশী আর নাগ পঞ্চমীতে মন্দির চত্বর সাধু সন্ত আর তীর্থযাত্রীদের ভিড়ে গমগম করে। 

অমরকন্টক ঘুরে হাতে সময় থাকলে অনেকেই ঘুঘুয়া জাতীয় উদ্যানে মধ্যপ্রদেশের দ্বিতীয় আকর্ষণ।   প্ভারতবর্ষের একমাত্র জীবাশ্ম পার্ক এটি। অরণ্য পাথরের গাছ হয়ে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে। কার্বন ডেটিং পরীক্ষায় জানা গিয়েছে, প্রায় ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে এই জায়গায় ছিল ক্রান্তীয় চির সবুজ বৃক্ষের বিশাল এক জঙ্গল। ঘুঘুয়া এবং পার্শ্ববর্তী গ্রাম উমারিয়া নিয়ে প্রায় ২৭ হেক্টর জায়গা জুড়ে এই জীবাশ্ম পার্কের ব্যাপ্তি।

মধ্যপ্রদেশের রাইসেন জেলায়, ভোপাল থেকে প্রায় ৪৬ কিলোমিটার দূরে, বেতোয়া নদীর ধারে, সিন্ধুসভ্যতার সবচেয়ে সংরক্ষিত নিদর্শন সাঁচীস্তূপ। এটি ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ মনুমেন্ট’টি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে এই স্তূপ বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।

অমরকন্টককে কোটি তীর্থ বলা হয়। নদী-পর্বত আর জঙ্গলের মেলবন্ধন ঘটেছে এখানে। সঙ্গে মিশেছে ধর্মচর্চা আর সন্তগাথা, সব মিলিয়ে এই স্থানের মাহাত্ম্য আধ্যাত্ম্যপ্রেমী মানুষ কোনওভাবেই এড়াতে পারেনা। মধ্যপ্রদেশের এই ভূমিতে বারবার ফিরে আসেন কবীর পথের মানুষরা। এখানেই কবীর-কুটিরে নানকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হত সন্ত কবীরের। এই স্থান কবীর চবুতরা নামে পরিচিত। আছে কবীর মন্দির। সন্তজীর পাদুকা রাখা আছে এখানে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...