ভিক্টোরিয়া, গড়ের মাঠ, ধর্মতলা কলকাতা চিনতে জরুরি প্রতীক। তার সঙ্গে এক চিহ্ন আছে কলকাতার। যা একেবারেই এই শহরের নিজস্ব। গোটা পৃথিবীর ভোজনরসিকরা এই চিহ্ন দিয়েই চেনে কলকাতাকে। কলকাতার ‘ঐতিহাসিক’ আলু বিরিয়ানি। সেই সূত্রেই যেন বাঙালির সঙ্গে বিরিয়ানির অবিচ্ছেদ্য টান। তবে শুধু এপার বাংলায় নয়, ওপার বাংলাতেও সমান ভাবে জনপ্রিয় বিরিয়ানি। কলকাতার আলু বিরিয়ানির মতো জনপ্রিয় বাংলাদেশের কাচ্চি বিরিয়ানি। দুজনেই ‘বিরিয়ানি’, কিন্তু পার্থক্য বিস্তর।
বাংলাদেশের পুরাণ ঢাকার জনপ্রিয় পদ কাচ্চি বিরিয়ানি। এই কাচ্চি শব্দটি এসেছে উর্দু থেকে। যার অর্থ কাঁচা। মোঘলদের হাত ধরেই এই বিরিয়ানি ঢাকায় প্রবেশ করেছিল। তবে সেই ১৯৩৯ সাল থেকে ঢাকার জনপ্রিয় দোকান 'হাজী' ধরে রেখেছে কাচ্চি বিরিয়ানির স্বাদ। সাধারণত সেদ্ধ খাসির মাংসের সাথে টকদই আলু ও সুগন্ধি চাল দিয়ে তৈরি করা হয় এই বিরিয়ানি। তবে কাচ্চি বিরিয়ানি ছাড়াও ঢাকায় পাওয়া যায় আরও একটি জনপ্রিয় বিরিয়ানি যার নাম তেহারি বিরিয়ানি। এই বিরিয়ানি সরিষার তেলে রান্না করা হয়। এই সরিষার তেলের ঝাঁঝ অন্যান্য বিরিয়ানির থেকে আলাদা স্বাদ এনেছে তেহারি বিরিয়ানিতে। এছাড়াও এই বিরিয়ানিতে মাংস, সুগন্ধি চাল ও বিভিন্ন ধরনের মশলা মিশ্রিত থাকে।
অন্যদিকে কলকাতার আলু বিরিয়ানির ইতিহাস বহু প্রাচীন। প্রায় দেড়শো বছর আগে ১৮৫৬ সালে লখনউয়ের নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ-এর হাত ধরেই কলকাতা প্রবেশ করেছিল বিরিয়ানি। জানা যায়, সেই সময় নবাবের সব সম্পত্তি বাজায়াপ্ত করেছিল ব্রিটিশ সরকার। তাই তিনি কলকাতার মেটিয়াবুরুজে চলে এসেছিলেন।
কলকাতায় এসে তিনিই প্রথম বিরিয়ানি খাবার হিসেবে প্রচলন করেন। তবে আওয়াধি বিরিয়ানির থেকে কলকাতার বিরিয়ানির স্বাদ সম্পূর্ণ অন্য রকম ছিল। আওয়াধি বিরিয়ানির থেকে অনেক কম মশলা দিয়ে তৈরি করা হতো কলকাতার বিরিয়ানি। নবাবের নির্দেশ মেনেই এই নতুন পদ্ধতিতে বিরিয়ানি তৈরি করা শুরু করেন রাঁধুনি। এছাড়াও মাংসের বদলে আলু দেওয়ার কথা বলেছিলেন নবাব। সেই মতোই আজও আলু দেওয়া হয় কলকাতার বিরিয়ানিতে। আর এই আলুই কলকাতার বিরিয়ানি বাংলাদেশের কাচ্চি বিরিয়ানির মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।