ওজন কমানোর তাগিদ কিংবা হালকা খিদে মেটানো, এর জন্য অনেকেই ভরসা করে থাকেন ড্রাই ফ্রুটসের উপর। আর ড্রাই ফ্রুটস বললেই যে দুই ড্রাই ফ্রুটসের কথা আমাদের মাথায় আসে সেগুলো হলো, আমন্ড এবং আখরোট।
এক এক ফলের এক একরকম গুন। কোন ফলের কি গুন আর সেই ফল কখন ও কতটা পরিমানে খাওয়া উচিৎ তা না জেনেই আমরা সেইসব ফল খেয়ে থাকি। কিন্তু এর ফলে যা উপকার সেই ফলের থেকে পাওয়ার কথা, তা পাওয়া যায় না। কোনো ফল যতটা পরিমান খাওয়ার কথা তার থেকে বেশি পরিমানে খাওয়ার ফলে অনেকসময় বিপরীত ক্রিয়া হতে পারে অর্থাৎ উপকারের জায়গায় অপকার করতে পারে সেই ফল। জেনে নেব আমন্ড ও আখরোটের কিছু উপকারী বৃত্তান্ত-
আমন্ডের উপকারিতা-
আমন্ড গাছ সাধারণত ভারত, নর্থ আফ্রিকা এবং মধ্য পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন দেশে দেখতে পাওয়া যায়। জানা যায় বন্য আমন্ডে প্রচুর পরিমানে টক্সিন থাকে। কিছু গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, আমন্ড খাওয়ার ফলে শরীরের কোলেস্টেরল লেভেল কমে। ‘জার্নাল অফ আমেরিকান ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশনে’-র একটি গবেষণাপত্রে প্রকাশিত হওয়া প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, আমন্ড রক্তের প্লাজমায় ভিটামিন ই- এর পরিমান বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ভিটামিন ই শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট হওয়ার কারণে শরীরের বিভিন্ন কোষের ধ্বংস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও ভিটামিন ই এর প্রভাবে কোলেস্টেরলের ফলে আর্টারি ক্লগ হয়ে যাওয়ার সমস্যার থেকেও বাঁচা যায়। তাই প্রতিদিন যদি এক মুঠো করে আমন্ড খাওয়া যায় তাহলে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমান ভিটামিন ই শরীরে প্রবেশ করে। ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য প্রটেকটিভ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে আমন্ড। গবেষণা থেকে যেখান গেছে, যাদের প্রতিদিন আমন্ড খাওয়ার অভ্যেস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা ২ থেকে ৩ গুন কমে যায়। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যদি আমন্ড রাখা যায় তাহলে একদিকে যেমন হার্টের রোগ কম হয় সেরকমই রক্তে শর্করাও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এতো গেলো আমন্ডের উপকারিতার কথা। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমানে আমন্ড খেলে কি কি শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, জেনে নেওয়া যাক সে বিষয়ে-
অতিরিক্ত কোনোকিছুই শরীরের জন্য ভালো নয়। অতিরিক্ত আমন্ডও শরীরের জন্য খারাপ বলে প্রমাণিত হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, অতিরিক্ত আমন্ড খাওয়ার ফলে পেটে ব্যথা থেকে শুরু করে নসিয়া, ভমিটিং, ডায়রিয়া প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের আমন্ডে অ্যাল্যার্জি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট এবং গলা ব্যথার সমস্যাও হতে পারে। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমানে আমন্ড খেলে ওজন বাড়ার সমস্যাও দেখা যায়।প্রতি ১০০ গ্রাম আমন্ডে ২৫ গ্রাম করে ভিটামিন ই উপস্থিত থাকে। অতিরিক্ত আমন্ড খেলে ভিটামিন ই-এর ওভারডোজ হতে পারে। তাই চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন ৪০ গ্রাম করে আমন্ড খাওয়াকে সেফ লিমিট বলে মনে করা হয়।
এবার আসা যাক আখরোটের কথায়। আখরোটের উপকারিতা-
আখরোটে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট কানায় কানায় পূর্ণ থাকে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অন্য যেকোনো ধরণের বাদামের থেকে আখরোটের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। এছাড়াও আমন্ডে উপস্থিত থাকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ই এবং মেলাটোনিন। এছাড়াও আখরোটের খোসায় উপস্থিত থাকে একধরণের উদ্ভিজ্য কম্পাউন্ড পলিফেনল। অন্য বাদামের তুলনায় আখরোটে প্রচুর পরিমানে উপস্থিত থাকে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। প্রতি ২৮ গ্রাম আখরোটের থেকে ২.৮ গ্রাম করে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। ওয়ালনাট বা আখরোট থেকে যেধরনের ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায় তা হলো আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড (এএলএ)। নানা গবেষনা থেকে প্রমাণিত হয়েছে প্রতিদিন ১ গ্রাম এএলএ ইনটেক হৃদরোগের সম্ভাবনা প্রায় ১০% কমিয়ে দেয়। টাইপ ২ ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, ক্যান্সার প্রভৃতি রোগের ক্ষেত্রে ইনফ্লেমেশনটাই সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। জানা গেছে, আখরোটে উপস্থিত পলিফেনল অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও ইনফ্লেমেশন কমাতে সাহায্য করে থাকে।গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে, আখরোট বেশ কয়েকধরণের ক্যান্সারের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে থাকে। হরমোন রিলেটেড ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের থেকে শরীরকে রক্ষা করে আখরোট। আখরোটে প্রচুর পরিমানে ক্যালোরি উপস্থিত থাকার দরুন খিদে মেটাতে সবচেয়ে ভালো কাজ দেয়। আমন্ডের মতো আখরোটও রক্তে শর্করার পরিমান নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। এর সাথে সাথে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
কিছু গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, আখরোট খেলে মোটেও ওজন বৃদ্ধি হয় না। আখরোটে প্রচুর পরিমানে ক্যালোরি থাকার ফলে অল্প পরিমানে আখরোট রোজকার খাদ্যতালিকায় রাখা উচিৎ। অতিরিক্ত আখরোট খাওয়ার ফলে ডায়রিয়ার সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও যাদের বাদামে অ্যাল্যার্জি রয়েছে তাদের আখরোট না খাওয়াই ভালো।
দুইধরনের ড্রাই ফ্রুট সম্পর্কেই খোঁজখবর পাওয়া গেলো। কোন রোগের ক্ষেত্রে কোনটি উপকারী জানা গেলো তাও। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ড্রাই ফ্রুটস অবশ্যই রাখা উচিৎ। বিকেলের হালকা খিদে ঢাকতে কাজু, কিশমিশ, আমন্ড ও আখরোট মিলিয়ে মোট ৫০ গ্রাম ওজন করে নিন। প্রয়োজন হলে এক জায়গায় সবধরণের ড্রাই ফ্রুটস একসাথে মিশিয়ে রাখুন। হালকা খিদের সময় সেখান থেকে প্রয়োজনমতো পরিমান তুলে নিন।