একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে মহিলারা পুরুষদের থেকে কোনো ক্ষেত্রেই পিছিয়ে নেই। তারা ঘরে যেমন দক্ষতার সঙ্গে সবকিছু সামলাতে পারে, তেমনি আজকে তারা পরিচয় দিচ্ছে সব ক্ষেত্রেই সুযোগ পেলে পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করতে সক্ষম। আজকের প্রতিবেদন রইল তেমনই কাজের দক্ষতাকে কুর্নিশ করে। আমাদের দেশে মেট্রো রেল যাতায়াতের দুনিয়ায় এক আলাদা মাত্রা যোগ করতে সক্ষম হয়েছে। খুব অল্প সময়ে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা সহ সাধারনের দৈনিক যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে নিজেকে যোগ্য করে তুলেছে মেট্রো পরিষেবা। সেই মেট্রো পরিষেবায় মহিলা দ্বারা পরিচালিত একটি সম্পূর্ণ স্টেশন। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন, গোটা একটা স্টেশন পরিচালনা করেন মহিলারা। আসুন তবে এই ব্যাপারে একটু আলোকপাত করা যাক।
কলকাতায় নেতাজি ভবন। রাজ্যে প্রথম সম্পূর্ণ মহিলা পরিচালিত মেট্রো স্টেশন চালু করে। গতবছর অর্থাৎ ২০১৮-র ৮মার্চ নারী দিবসের দিন মেট্রো রেলের সিপিআরও ইন্দ্রাণী ব্যানার্জি আনুষ্ঠানিক ভাবে নেতাজী ভবনকে মহিলা পরিচালিত মেট্রো স্টেশন ঘোষণা করে বলেছিলেন এই সিদ্ধান্ত, ‘উওমেন এমপাওয়ারমেন্টের দিকে আরও এক পা’।
বুকিং কাউন্টার স্টাফ, স্টেশন মাস্টার, আরপিএফ পার্সনাল, ক্লিনিং স্টাফ, টেকনিক্যাল পার্সন নেতাজী ভবন স্টেশনে সব কাজই সামলায় ২৫ সদস্যের এক মহিলা টিম।
মহিলা যাত্রীরাও অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে মহিলা কর্মীদের সঙ্গে।
দেশের প্রথম অল উওম্যান মেট্রো কনসেপ্ট কিন্তু প্রথম বাস্তবায়িত হয় রাজস্থানের জয়পুরে। ২০১৫-র নভেম্বরে। মানসসরোবর- চাঁদপুল রুটের শ্যামনগর স্টেশনে। ৩৪ জন মহিলাকে এই স্টেশনের সমস্ত ধরনের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
জয়পুর মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ দাবী অনুযায়ী তাদের মোট স্টাফের ৩০ শতাংশই মহিলা। রাজ্যে লিঙ্গ বৈষম্য সম্বন্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে ও নারী স্বাধীনতাকে প্রাধান্য দিতেই এই উদ্যোগ।
শ্যাম নগর স্টেশনে সিকিউরিটি থেকে শুরু করে টিকিট ভেন্ডিং সমস্ত কাজে মহিলাদের নিয়োগ করা হইয়েছিল। এমন কী চালকের আসনেও। 'প্রথম মহিলা শক্তি রেলওয়ে স্টেশন' হিসেবে এই স্টেশন আত্মপ্রকাশ করে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। জয়পুর মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশনের তৎকালীন ডিরেক্টর(অপারেশন) সি এস জিনগর জানান, ৩৪ জন মহিলার নিরাপত্তার সব রকম বন্দোবস্ত করা হয়েছে ওই স্টেশনে। এছাড়াও ওই মহিলা কর্মীরা যাতে সুষ্ঠুভাবে নিজেদের কাজ করতে পারেন, তার জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাদের যেহেতু অনেকটা সময় বাড়ির নবাইরে কাটাতে হয়, তাই বাড়ির মত সুযোগ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। ওই বছরই শ্যামনগর স্টেশনে নতুন 'মা' হওয়া মহিলা কর্মীদের জন্য ক্রেশ চালু করা হয়। যাতে তারা সন্তানদের বাড়িতে ফেলে আসার জন্য দুশ্চিন্তা না করেন। ওই ক্রেশে ৫ বছর বয়স অব্দি ২০ জন বাচ্চার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গোটা পরিকল্পনাই ছিল অনুকরণযোগ্য এবং প্রশংসাযোগ্য।
শেনয় নগর মেট্রোতে মহিলা পরিচালিত স্টেশন চালু হয় ২০১৮-র ৩১ জুলাই। তার পরের মাস অর্থাৎ অগাস্টের প্রথম দিন থেকে কোয়েম্বেদুতে চালু হয়। শেনয় নগর মেট্রো স্টেশনে ১৫ সদস্যের মহিলা টিম কাজ করে। দু’ শিফটে কাজ হয়। কোয়েম্বেদু স্টেশনেও একই ব্যাপার। মহিলা যাত্রীদের আলাদা কোচের ব্যবস্থা চালু করেছে চেন্নাই মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
এই বছরের এপ্রিল থেকে হায়দ্রাবাদের মধুরানগর স্টেশন ‘ অল উওম্যান’ স্টেশন ঘোষণা করা হয়েছে। স্টেশনের নাম বদলে ‘ তরুণী মধুরানগর স্টেশন’ রাখা হয়েছে। হায়দ্রাবাদ মেট্রো রেল লিমিটেড -এর পক্ষ থেকে মেনেজিং ডিরেক্টর এনভিএস রেড্ডি জানান, এই স্টেশনটিকে সম্পূর্ণ মহিলাদের সুবিধার্থে তৈরী করা হচ্ছে। সম্পূর্ণ মহিলা দ্বারা পরিচালিত একটা ক্যান্টিন তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও দুই একর জায়গা সম্বলিত স্টেশনটিকে একটি মহিলা পরিচালিত হাব তৈরী করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।