মর্যাদা পুরুষোত্তম রাম

বিষ্ণুর দশ অবতারের মধ্যে সপ্তম অবতার রাম। তিনি হিন্দুধর্মের সবচেয়ে লোকপ্রিয় দেবতা। শুধু ভারত নয়, সামগ্রিক দক্ষিণ এশিয়াতেই তাঁর প্রভাব। ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ। এদেশের মানুষের মুখে সুখে জয়রাম, দুখে হে রাম লেগেই থাকে। দেশিয় সংস্কৃতিতে অঞ্চলভেদে বদলে গিয়েছে রামের রূপ। কখনও তিনি আদর্শপুত্রের উদাহরণে রামলালা, কখন আদর্শ রাজা, রাজারাম।তাঁকে বলা হয় ‘মর্যাদা পুরুষোত্তম, অর্থাৎ পুরুষ শ্রেষ্ঠ, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিপতি। তাঁকে ঘিরে জন্ম নিয়েছে এক আস্ত মহাকাব্য। মহাঋষি বাল্মীকি বিরচিত রামায়ণ কথা। 

ব্যক্তিনাম হিসেবে "রাম" শব্দটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগ্বেদে। বিষ্ণুর সহস্রনাম স্তোত্রে বিষ্ণুর ৩৯৪তম নামটি হল রাম। 

সূর্যবংশে জন্ম নিয়েছিলেন রাম। উক্ত বংশের রাজা রঘুর নাম অনুসারে সেই বংশের পরে নাম হয় রঘু বংশ। রামনবমীতে রামজন্মোৎসব পালিত হয়। ত্রেতা যুগে অযোধ্যায় তাঁর জন্ম। পিতা রাজা দশরথ, মাতা কৌশল্যা। রামের স্ত্রী সীতা। মনে করা হয় তিনি লক্ষ্মীর অবতার।

পিতার সম্মানরক্ষার্থে তিনি সিংহাসনের দাবি ত্যাগ করে চৌদ্দ বছরের জন্য বনে গিয়েছিলেন। স্ত্রী সীতা ও ভাই লক্ষ্মণও তার বিচ্ছেদ সহ্য করতে পারবেন না বলে তার সঙ্গে গিয়েছিলেন। তারা একসঙ্গে চৌদ্দ বছর বনে কাটিয়েছিলেন। বনবাসকালে লঙ্কার রাজা রাবণ সীতাকে হরণ করে লঙ্কায় নিয়ে গিয়েছিলেন। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর রাম হনুমানের মাধ্যমে জানতে পারেন যে সীতা লঙ্কায়। তখন বানর সেনা দিয়ে লঙ্কায় যাওয়ার জন্য সেতু নির্মাণ করেন। আর রাবণের বিরাট রাক্ষস বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। এই যুদ্ধে রাবণ পরাজিত হন। রাম সীতাকে উদ্ধার করে অযোধ্যায় ফিরে আসেন। সেখানে তার রাজ্যাভিষেক হয়। পরে তিনি একজন সম্রাটে পরিণত হন। তার রাজ্যে প্রজারা সুখে, শান্তিতে বাস করত এবং রাজ্যের সমৃদ্ধি ও ন্যায়বিচার অব্যাহত ছিল।

রামের জীবনের কাহিনি যাত্রাপথ নিয়ে সংস্কৃত ভাষায় রামায়ণ রচনা করেছিলেন মহর্ষি বাল্মীকি। রামায়ণ কথার অর্থ শ্রী রামের যাত্রারামায়ণ ৭টি কাণ্ড (পর্ব) ও ৫০০ সর্গে বিভক্ত ২৪,০০০ শ্লোকের   ৩২-অক্ষরযুক্ত  অনুষ্টুপ ছন্দে রচিত।  সর্বপ্রাচীন পুথিটি খ্রিষ্টীয় একাদশ শতাব্দীতে লিখিত। বাংলায় রামায়ণ অনুবাদ করেন কৃত্তিবাস ওঝা।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...