শ্রী বিষ্ণুর পরম সত্ত্বা শ্রীকৃষ্ণ

ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতারের অষ্টম অবতার শ্রীকৃষ্ণ। হিন্দু বিশ্বাস, কৃষ্ণের পূজা চন্দ্রের শুভফল দান করে। তিনি সম্পূর্ণ কলায় মর্ত্যে জন্ম নিয়েছিলেন। তাঁকে বলা হয় শ্রী বিষ্ণুর পরম সত্ত্বা। শ্রীমদ্ভগবত গীতা তাঁরই উপদেশের সংকলন।

বিষ্ণুর সহস্র নামের মধ্যে ৫৭তম নাম হল কৃষ্ণ। সংস্কৃতে কৃষ্ণ শব্দের অর্থ কালো বা ঘন নীল। শ্রীকৃষ্ণের গায়ের রং ঘন নীল। কৃষ্ণ শব্দটির একাধিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। কৃষ এবং ণ এই দুটির সংমিশ্রণে কৃষ্ণ শব্দটির উৎপত্তি। কৃষ শব্দের অর্থ টেনে আনা বা কর্ষণ করা; সেই সূত্রে শব্দটি ভূ মানে পৃথিবী শব্দটির সঙ্গে সংযুক্ত। ণ শব্দটিকে নিবৃত্তি শব্দের প্রতিভূ ধরা হয়। বল্লভ সম্প্রদায়ের মতে কৃষ্ণ নামের মূল শব্দগুলিকে বস্তু, আত্মা ও দিব্য কারণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পাপের বিনাশশক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত।

যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্
পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে
(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা/ জ্ঞানযোগ, শ্লোক- ৭/৮)

যতবার ধর্ম সংকটে পড়বে, পৃথিবীতে অধর্ম বাড়বে ততবার ধর্মাচারী নিরাপরাধ অসহায় মানুষকে রক্ষা করতে ধরায় জন্ম নেবেন ভগবান বিষ্ণু  

গীতাতে তিনি বলেছেন তাঁর জন্ম এবং মৃত্যু দুই অলৌকিক পথে শাস্ত্রীয় বিবরণ ও জ্যোতিষ গণনার ভিত্তিতে লোকবিশ্বাস অনুযায়ী কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল ৩২২৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ১৮ অথবা ২১ জুলাই বুধবার।  তিথির হিসেবে তাঁর জন্ম দিনটি জন্মাষ্টমী হিসেবে পালিত হয়। কৃষ্ণ মথুরার যাদব বংশের সন্তান। পিতা বসুদেব। মাতা দেবকী।

দেবকীর দাদা কংস তাঁর পিতা উগ্রসেনকে বন্দী করে সিংহাসনে বসেন। সহোদরা দেবকীর বিবাহের দিন এক দৈববাণীতে জানতে পারেন দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তান তাঁকে বধ করবে। সেই দিন থেকেই তাঁদের কারাগারে বন্দী করেন কংস। পরপর দেবকীর ছয় সন্তানকে কারাগারেই হত্যা করেন। দেবকী তার সপ্তম গর্ভ  রোহিনী প্রদান করেন। অষ্টম গর্ভে শ্রী কৃষ্ণের জন্ম হয়।

কংসের হাত থেকে সদ্যজাত কৃষ্ণের প্রাণরক্ষা করতে ঝড় ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে বসুদেব গোপুলে নন্দের আলয়ে রেখে আসেন। তাঁর ধর্মপত্নী যশোদা কৃষ্ণের পালক মাতা। বৃন্দাবন, ব্রজধাম এবং কৃষ্ণের মথুরাগমন এই নিয়ে আবর্তিত হয়েছে কৃষ্ণের জীবনকথা।

কৃষ্ণ ভারতীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। প্রেমলীলা থেকে তাঁর কর্মলীলা সবই মিলেমিশে গিয়েছে সাহিত্য সংস্কৃতি, দর্শন এবং চর্চায়। বছরের পর বছর ধরে বয়ে চলেছে সেই ধারা। ভারত থেকে এশিয়ার বাইরে গোটা বিশ্বে।

মহাভারতহরিবংশভাগবত পুরাণ ও বিষ্ণু পুরাণ গ্রন্থের ভিত্তিতে কৃষ্ণের জীবনের একটি বিবরণ পাওয়া যায়। জাভা, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়ায়র শিল্পকলায় কৃষ্ণের প্রভাব আছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...