উজ্জ্বল হলুদ রং চোখ টেনে নেয় সহজেই। স্বাদে টক-মিষ্টি। কারুর রসনায় আবার ঈষৎ কষা।
আম-জাম-কাঁঠাল-কমলালেবুর ভিড়ে এই ফল খানিক যেন ভিনদেশি অতিথির মতো। বাজারে নাম জিজ্ঞাসা করলে বলে ‘ট্যাপারি’। তবে এই ফলের একাধিক নাম। ভৌগলিক অঞ্চল যত বদল হয়েছে তত নতুন নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে ট্যাপারি।
কেউ বলেন বনট্যাপারি। কেন বলেন ঠুসকা। হিন্দিতে ‘রসভরি’, ‘ট্যাপোরিয়া’। কানে কাছাকাছি শুনতে লাগলেও ‘রাসবেরি’র সঙ্গে কিন্তু কোনও সম্পর্ক নেই। অঞ্চলভেদে বদলে যায় নাম। ম্যাকাও নামেও ডাকা হয়। বাংলা নাম যেমন, ইংরেজি নামও এই ফলের একাধিক। ইংরেজি নাম কেপ গুসবেরি। এছাড়াও গোল্ডেন বেরি। ইনকা বেরি, গ্রাউন্ড বেরি একাধিক নাম আছে।
এই ফলের আসল বাড়ি মূলত পেরু ও চিলিতে। তবে উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের এক অংশের মত এই ফলের আসল উৎস ব্রাজিল। দক্ষিণ ও মধ্য আফ্রিকা হয়ে এই ফল আসে অস্ট্রেলিয়া। মনে করা হয় ১৭৭৪ সালে কেপ গুসবেরি প্রথম ইউরোপ তথা ইংল্যান্ডে প্রবেশ করে। ‘কেপ গুসবেরি’ নামটি দেওয়া হয় অবশ্য আঠারো শতকে। ‘কেপ অফ গুড হোপ’ থেকেই এমন নামকরণ। কেপ গুসবেরির এদেশে মানে ভারতে আসে আনুমানিক ১৮৩০ নাগাদ। উত্তর এবং পূর্ব ভারত, পশ্চিমবঙ্গে তার নাম হয়ে যায় ‘ট্যাপারি’। কেউ কেউ বলেন যে মাটিতে টমেটো ভাল হয় সেই মাটিতে ট্যাপারিও ভাল ফলে। ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস ট্যাপারির সময়। গাছে ফল ধরার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পেকে ওঠে।
এই ফল কি খাওয়া যায়?
হ্যাঁ, এই ফল ভীষণভাবেই খাওয়া যায়। ভিটামিন সি-এর গুণে ভরপুর। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ত্বকের জন্য খুব উপকারী। ফাইবার থাকে সেই কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধানে কাজ দেয়।
ভিটামিন এ-তে সমৃদ্ধ। চোখের অসুখ কমায়।
স্যালাড থেকে ডেসার্ট সবেতেই ব্যবহার চলে। জুস করে খাওয়া যায়। তবে পাকা অবস্থাতেই। এই ফল অপক্ক অবস্থায় খেলে দেখা দিতে পারে পেটের সমস্যা।
প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, এই ফল নিয়মিত খেলে কফ, সর্দি রোধ করে। দক্ষিণ ভারতে উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে জন্ডিসের ওষুধ হিসেবে ট্যাপারির চল।
বাজারে বসন্ত আর গ্রীষ্মে পাওয়া যায় ট্যপারি ফল। খুব পাকা ট্যপারি দিয়ে অনেকেই আচার জেলি বানিয়ে থাকেন। ভাল জাতের ট্যাপারি রেফ্রিজারেটারে বেশ কয়েকদিন রাখাও যায়।