আমাদের চিকিত্সা ব্যবস্থা যত উন্নত হচ্ছে, আমরা ততই উপলব্ধি করতে পারছি, শুধুমাত্র এলোপ্যাথি চিকিত্সার দ্বারা সুস্থ্ হওয়া ছাড়াও আরো নানারকম চিকিত্সা পদ্ধতি অবলম্বন করলে শরীর ঠিক রাখায় বেশি ভালো ফল পাওয়া যাবে| ক্রমশঃ বাড়তে থাকা দুষণ এবং অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, কাজের চাপ, মানসিক উদ্বেগ, সামাজিক পরিবর্তন আমাদের বিভিন্ন রকম রোগের শিকার করছে| সব রোগের চিকিত্সায় সব সময় এলোপ্যাথি ওষুধের শরনাপন্ন হলে রোগের সম্পুর্ন সুরাহা হয় না, নয়ত কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়| বিশেষ করে মনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অসুখের চিকিত্সা শুধুমাত্র এলোপ্যাথি চিকিত্সার দ্বারা সম্ভব নয়| তাই হোমিওপ্যাথি এবং আয়ুর্বেদ চিকিত্সা বর্তমানে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে| এবারে আরো একটি চিকিত্সাপদ্ধতি পূর্নাঙ্গ চিকিত্সা পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত হল| আকুপাংচারকে স্বীকৃত চিকিত্সাপদ্ধতির আওতায় আনা হল|
২১ফেব্রুযরি কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের চিকিত্সা গবেষনা শাখা জানিয়েছে, ২০১৬ সালে কেন্দ্রের তরফে একটি অন্তর্বিভাগীয় কমিটি গঠিত হয়েছে বিভিন্ন রকম নতুন ধরণের চিকিত্সা পদ্ধতির গ্রহনযোগ্যতা খতিয়ে দেখতে| সেখানেই আকুপাংচারকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আবেদন জমা পড়ে| ২০১৭ এবং ১৮-এই দুই বছরই দুটি বৈঠকে সেই আবেদন খতিয়ে দেখে কমিটি| এরপর গত জুন মাসে এই সংক্রান্ত বেশ কিছু সুপারিশ করে এই কমিটি|
উপযুক্ত পরিস্থিতি দেখে চিকিত্সক এবং বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতেই যদি পঠনপাঠন, প্রশিক্ষণ এবং শংসাপত্র প্রদান করা হয়, তাহলেই আকুপাংচারকে স্বতন্ত্র চিকিত্সা পদ্ধতি হিসেবে মানা যেতে পারে- এই সুপারিশ করা হয়| আন্তর্বিভাগীয় কমিটির আরো সুপারিশ ছিল, আকুপাংচার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে কমিটিতে কি ধরনের লোকজন রাখা উচিত সেটিও জানানো| ‘পাবমেড’ বা সমতুল গ্রহনযোগ্য জায়গায় যাদের গবেষনাপত্র প্রকাশিত হয়েছে, বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাদেরকে রাখা যেতে পারে| এই বিষয়ে ২৭ তারিখ আকুপাংচার-এর স্বীকৃতির দাবিতে দীর্ঘদিন সওয়াল করা নামকরা আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ ও আকুপাংচার সায়েন্স এসোসিয়েশন-এর সাধারন সম্পাদক ডাঃ দেবাশিস বক্সী বলেন, তিনি নব্বই-এর দশক থেকে এই চিকিত্সা পদ্ধতিকে স্বীকৃতি দেবার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন| তাই কেন্দ্রীয় সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি|
সমস্ত রকম সুপারিশ কেন্দ্র মেনে নেওয়ায় আকুপাংচার চিকিত্সার প্রচার ও প্রসার-এর নীতিনিয়ম গঠনের জন্য নয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে| দেশের চিকিত্সা গবেষনা শাখার প্রাক্তন সচিব ডাঃ বিশ্বমোহন কাটোচ, আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ ডাঃ আরনান কাপুর, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব প্রীতি সুদান, এইমস-এর নিউরোলজিস্ট ডাঃ বিনয় গোয়েল, এইমস-এর যোগ শাখার সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ এ মুভেনাথন, রাঁচির একটি বিখ্যাত ইন্সটিটিউট এর ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের ডাঃ এস বন্দ্যোপাধ্যায়, সিএমসি লুধিয়ানার নিউরোলজির অধ্যাপক ডাঃ জি ডি পান্ডিযান, আইসিএমআর-এর চিকিত্সা গবেষনা দপ্তরের যুগ্মসচিব-এই নয় জনকে নিয়ে গঠিত হয়েছে কমিটি|
এবারে দেখার, এই কমিটি তিন মাসের মধ্যে কি কি নিয়ম জারি করে সংশ্লিষ্ট চিকিত্সা পদ্ধতি সম্পর্কে|