#EXCLUSIVE: নিজের হাতে মূর্তি গড়ে পুজো ১৩ বছরের ‘বিশেষ ভাবে সক্ষম’ কিশোরের

ছোটো থেকেই হাতের কাছে কিছু পেলে তা দিয়ে পুতুল, পাখি, ফল –এরকম বিভিন্ন কিছু তৈরি করে ফেলত নিমেষে। এবার গোটা দুর্গা প্রতিমাই গড়ে ফেলল দমদম বৈদ্যনাথ ইনষ্টটিউশনের অষ্টম শ্রেনীর পড়ুয়া বছর ১৩ এই কিশোর আকর্ষন দাস। এই প্রথম মাটি দিয়ে দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ করলেও এর আগে পরপর তিন বছর আটা দিয়ে তৈরি করেছিল দুর্গা ঠাকুর। বাড়িতে পুরোহিত ডেকেই পুজো হয়েছিল সেই প্রতিমার।

১৩ বছরের প্রতিভা সম্পন্ন কিশোর একটা দুর্গা প্রতিমা গড়তেই পারে,  কিন্তু আকর্ষনের কাছে ব্যাপারটা একটু বিশেষ। দমদম ক্যান্টমেন্টের কবি মুকুন্দ দাস রোডে বাড়ি আকর্ষণের। বাবা অমল কৃষ্ণ দাসের রয়েছে একটি মিষ্টির দোকান। জন্ম থেকেই কিছু শারীরিক সমস্যা থাকায় বছরে অধিকাংশ দিনই স্কুলে যেতে পারেনা ‘বিশেষ ভাবে সক্ষম’ আকর্ষণ। তবে পড়াশুনোয় সব রকম সাহায্য করে স্কুল, তা নিজেই জানায় আকর্ষন। পাড়া বা স্কুলে বিশেষ বন্ধু নেই তার। বন্ধু বলতে ছবি আঁকা, মাটির জিনিস গড়া ও আর তার একমাত্র দিদি। এই তিন থাকলে সব কিছুই যেন তার কাছে সহজ।

আকর্ষনের বাবা অমল কৃষ্ণ দাস যখন স্নায়ু রোগে শয্যাসায়ী তখন কোনও মতে চলত সংসার। তার দিদি তখন মাধ্যমিকের ছাত্রী। স্কুলের ফিস দিতে না পারায় প্রাইভেটেই পরীক্ষা দিয়েছিল তার দিদি। তার মা তার বাবাকে চিকিৎসার জন্য হায়দ্রাবাদে নিয়ে গেলে দিদিমার কাছেই থাকত সে। সারাদিন বসে বসে কিছু না কিছু জিনিস তৈরি করত । এরকমই খেলার ছলে একদিন দুর্গা ঠাকুর তৈরি করবে বলে ঠিক করে সে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। বাড়িতে থাকা আটা দিয়েই শুরু হল সেই কাজ। সে তৈরি করে ফেলে একটি দুর্গা প্রতিমা।

প্রায় দেড় মাস চিকিৎসার পর বাড়ি ফিরে ছেলের এই সৃষ্টি দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি আকর্ষণের মা বাবা। পুজো আসতে বাড়িতেই ছোট করে হয় দুর্গা পুজো।

বাবার কেটে দেওয়া বাঁশ দিয়ে প্রথমে আকর্ষন নিজেই বাঁধে কাঠামো। সেই বাঁধার কাজে খানিকটা তাঁর বাবা খানিকটা সহযোগিতা করলেও বাকি সব কাজ সে নিজেই সম্পন্ন করেছে। বাবার মিষ্টির দোকানকেই ষ্টুডিও হিসেবে ব্যবহার করে সে।

FotoJet (218)

খড় দিয়ে ধীরে ধীরে বেঁধেছে লক্ষী, কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী, দুর্গা’র অবয়ব। তার ওপর ধীরে ধীরে মাটির প্রলেপ। বাবাকে সঙ্গে করে বিভিন্ন জায়গা থেকে জোগাড় করে মাটি। কিছুটা মাটি কিনে নিয়ে আসে স্থানীয় প্রতীমা শিল্পির কাছ থেকে। দেবীর মুখের ছাঁচ তো নেই। তাই প্লাস্টিকের কাপের ওপর মাটি চাপিয়ে নিজেই তৈরি করেছে দেব দেবীর মুখ। নিজেই গড়েছে শরীর, এঁকেছে চোখ।

কিন্তু প্রকৃতির ভ্রুকূটিতে প্রতিমার মুখ কিছুতেই শুকানো যাচ্ছিল না, তাই বাবার মিষ্টির দোকানে যে বাক্সে সিঙ্গাড়া, নিমকি রাখা হয় সেই বাক্সে ৬০ ওয়াটের বাল্বের আলোয় চলে মুখ শুকানোর কাজ। সমস্ত কাজ শেষে রং চাপিয়ে, সাজসজ্জা পরিয়ে সম্পূর্ন হয় প্রতিমা গড়ার কাজ। রং লাগানোর আগে অবশ্য কিছুটা পদ্ধতি সে জেনেছে স্থানীয় এক প্রতিমা শিল্পীর কাছ থেকেই।

FotoJet (217)

নিজের সমস্ত প্রতিকূলতা প্রতিবন্ধকতাকে এক লহমায় দুহাতে সরিয়ে তখন সেও হয়ে ওঠে কোনও এক হারকিউলিক্সের শ্রষ্ঠা। এভাবেই হয়তো কোনও এক অজানা মুহুর্তে জন্ম নেয় এক শিল্পী। একদিন এরকমভাবে আকর্ষনের হাত ধরেই হয়তো জন্ম নেমে কোনও ঐতিহাসিক স্থাপত্য।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...