স্যালুট ঐন্দ্রিলা

সে চলে গেলেও থেকে যাবে তার স্পর্শ আমারই হাতের ছোঁয়ায়

নুয়ে পড়বেই স্মৃতিরা যেখানে দেবদারু তার কপাল নোয়ায়।

শুধু চার লাইনে নয়। কবীর সুমনের গোটা গানটাই যেন তাঁর জন্য লেখা। মাটির পৃথিবী ছেড়ে নক্ষত্রলোকে পাড়ি দিলেন যিনি। ঐন্দ্রিলা শর্মা। লড়াই শেষ হল তাঁর। ঐন্দ্রিলা শর্মা এক যোদ্ধার নাম। যিনি নিজের লড়াই দিয়ে ঘটিয়ে গেলেন বিস্ফোরণ।

বিস্ফোরণটা বিশ্বাস আবেগ আর ভালোবাসার জোরে পৃথিবী জিতে নেওয়ার।

মাত্র ২৪ বসন্তের জীবন তাঁর। বহরমপুরে বাড়ি। বাবা চিকিৎসক। মা নার্সিং স্টাফ। দিদি চিকিৎসক।

 ২০১৫ সালে ধরা পড়ে বোনম্যারো ক্যানসার। লড়াইটা শুরু হয়েছিল তখন থেকেই। কেমো থেরাপিতে চুল চলে গিয়েছিল। কিন্তু তাতে কী! স্বপ্ন দেখার চোখ তো ছবি আঁকা বন্ধ করেনি হৃদয়ে।

অভিনয়ের দুনিয়ায় পা রাখলেন। বহরমপুর থেকে কলকাতায় এলেন, সঙ্গে পুরো পরিবার।

ঝুমুর' নামক একটি সিরিয়াল দিয়ে অভিনয় জগতে পা রাখেন ঐন্দ্রিলা। এই সিরিয়ালেই তাঁর বিপরীতে প্রথম সব্যসাচী চৌধুরী।

তারপর জীবন জ্যোতি, জিয়ন কাঠি আরও অনেক। দু'দুবার ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। ফিরে আসেন তীব্র জীবনীশক্তিতে। ওয়েব সিরিজে অভিনয়ও শুরু করেছিলেন। পর্দায় ঝলমলে হাসি আর দুরন্ত এনার্জির মেয়েটাকে দেখে কে বলবে কর্কট যোদ্ধা!

একটু একটু করে ছন্দে ফিরছিল জীবন। কিন্তু এলোমেলো করে দিল ১ নভেম্বর। ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হলেন। ভর্তি হলেন হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে। ভেন্টিলেশনে। পরের ২০ দিন প্রতি মুহূর্তে রুদ্ধশ্বাস যুদ্ধ। এমন লড়াই অনেক দিন দেখেনি দুনিয়া। শুধু আর একটু থেকে যাওয়া আর হাত না ছাড়ার আকুতি। বেডে লড়ে যাচ্ছে চব্বিশ বছরের মেয়েটা। তার শিয়রে প্রহরীর মতো রাত জাগে ভালোবাসা। বলে ফিরতেই হবে। বাড়ি নিয়ে যাব। অপেক্ষা করছে যে ঘর... মেশিন জবাব দিতে চায়। চারপাশ জবাব দিতে চায়। কিন্তু নাছোড় যোদ্ধা কিছুতেই হার মানতে যে রাজি নয়। সে লড়ে যায়... শেষ শ্বাসটুকু সম্বল...

তার পাশে গোটা দুনিয়া। দায়িত্বের কাঁধ পেতে পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিল আর এক শিল্পী। অরিজিৎ সিং। 

একরাতে দশ দশবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয় ঐন্দ্রিলা। এবার সত্যি থেমে যায় মেশিনগুলো। আর ফেরা হয় না ঐন্দ্রিলা শর্মার।

প্রকৃত যোদ্ধার হার নেই জেনেও আজ কাঁদছে শহর। চব্বিশ বছরের মেয়েটা আজ নতুন করে জীবন শিখিয়ে গেল পৃথিবীকে।

মারণ ব্যাধিতে আক্রান্ত বহু মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে থেকে যাবেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। 

সে চলে গেলেও হঠাৎ শিউলি ফুলের গন্ধে তারই সকাল

স্মরণের টানে সামান্য এক মুহূর্ত হবে অনন্তকাল...

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...