মানসিক অবসাদ কাটিয়ে সোনার মালিক সাক্ষী

জীবনে অনেক টানাপড়েনের শেষে সদ্য শেষ হওয়া বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমস '২২-এ মেয়েদের ফ্রি-স্টাইল কুস্তির ৬২ কেজি বিভাগে শেষ মুহূর্তে রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে ভারতের হয়ে কুস্তিতে সোনা জিতেছিলেন সোনার সাক্ষী।

সদ্য শেষ হওয়া বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমস '২২-এ মেয়েদের ফ্রি-স্টাইল কুস্তির ৬২ কেজি বিভাগে শেষ মুহূর্তে রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে ভারতের হয়ে কুস্তিতে দ্বিতীয় সোনা জিতেছিলেন সাক্ষী মালিক। বজরং পুনিয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে কুস্তি থেকে ভারতের ঘরে দ্বিতীয় সোনার পদক নিয়ে আসেন তিনি।

বজরংয়ের মতো সাক্ষীও টানা তিনটি কমনওয়েলথে পদক জিতলেন। তবে সোনা এই প্রথম। এর আগে ২০১৪-র গ্লাসগো কমনওয়েলথ তিনি ৫৮ কেজি বিভাগে রুপো জিতেছিলেন। ২০১৮ গোল্ড কোস্ট গেমসে ব্রোঞ্জ জেতেন। ২০২২-এ বার্মিংহামে পদকের রং বদলে সোনা এল। ৬২ কেজি বিভাগে সোনা পান সাক্ষী। ফাইনালে কানাডার আনা গোদিনেজ গঞ্জালেজের বিরুদ্ধে প্রথমে ০-৪ পিছিয়ে পড়েছিলেন। তারপর দ্বিতীয় রাউন্ডে সাক্ষী এক ঝটকায় ৪ পয়েন্ট সংগ্রহ করেন নেন এবং কানাডিয়ান তারকাকে চিৎ করে টানা চারটি পয়েন্ট জেতেন সাক্ষী। (৪-৪) সমান থাকলেও 'ভিকট্রি বাই ফল'-এর বিচারে সাক্ষী জিতে যান।

বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে মেয়েদের ৬২ কেজি বিভাগের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের কেলসি বার্নসের বিরুদ্ধে জয় তুলে নেন সাক্ষী মালিক। কার্যত ১ মিনিটেই কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াই জিতে নেন সাক্ষী এবং সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেন। ১০-০-র ব্যবধান তৈরি করে টেকনিক্যাল সুপিরিয়রিটির নিরিখে বাজিমাত করেন ভারতীয় তারকা। সেমিফাইনালে ১০-০ ব্যবধানে হারিয়ে দেন শ্রীলঙ্কার নেথমি পরুথোটেগকে এবং ফাইনালের যোগ্যতা অর্জন করেন। আর ফাইনালে গোল্ড মেডেল বাউটে সাক্ষী কানাডার অ্যানা গডিনেজ গঞ্জালেজকে চিৎ করে চ্যাম্পিয়ন হন।

ম্যাচের পর সাক্ষী বলেছেন, "সোনা জেতার জন্য নিজেকে নিংড়ে দিতে তৈরি ছিলাম। শেষ পর্যন্ত লড়তে চেয়েছিলাম। ০-৪ পিছিয়ে পড়ার পরেও চিন্তা করিনি। অলিম্পিক্সে কয়েক সেকেন্ডে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে পদক জিতেছি। তাই জানতাম এখানেও সেটা সম্ভব। আমার হাতে তিন মিনিট সময় ছিল। ১৮ বছর ধরে কুস্তি করছি। এই শট ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও করে দিতে পারব।"

পদক জয় করে ফেরার পর সাংবাদিকরা সাক্ষীর কাছে জানতে চায় দেশে ফিরে সবচেয়ে বড় উপহার কী পেলেন? উত্তরে সবাইকে চমকে সাক্ষী জানিয়ে ছিলেন, "মায়ের তৃপ্তির হাসি। আলুর পরোটা আর কড়ি চাওয়াল"। পরে আরও যোগ করে জানান, "টানা চার মাস ভাল করে খেতে পারিনি। বাড়িতে সবাই আলুর পরোটা খাচ্ছে দেখেও ধারেকাছে ঘেঁষতে পারিনি। ভাইয়ের কড়া নজর থাকত আমার খাওয়াদাওয়ার দিকে। তাই কাল রিও থেকে বাড়িতে ফিরে সবার আগে মায়ের হাতের আলুর পরোটা আর কড়ি চাওয়ালের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। বাব্বা, এত দিন শুধু স্যুপ আর স্যুপ!"

ছোটবেলা থেকে বিমানে চড়ার স্বপ্ন দেখতেন সাক্ষী। গ্রামের উপর দিয়ে বিমান উড়ে যাচ্ছে আর সাক্ষী তাকিয়ে নেই এমন  ঘটনা নাকি খুঁজে পাওয়া যাবে না। ছোটবেলা থেকেই বিমানে চড়ার শখ মোখরা গ্রামের সাক্ষীর।

হরিয়ানার রোহতক জেলার মোখরা গ্রামে দিল্লি ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের বাস কন্ডাক্টর সুখবীর এবং স্থানীয় স্বাস্থ্য ক্লিনিকের সুপারভাইজার সুদেশ মালিকের মেয়ে সাক্ষী মালিক জন্মগ্রহণ করেন ১৯৯২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। তার বাবার মতে, তিনি তার দাদা বদলু রামকে দেখে কুস্তি করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, যিনি নিজেও একজন কুস্তিগীর। মাত্র ১২ বছর বয়সে রোহতকের ছোটু রাম স্টেডিয়ামের একটি আখড়ায় কোচ ঈশ্বর দাহিয়ার অধীনে কুস্তির প্রশিক্ষণ শুরু করেন সাক্ষী। তার আইডল সুশীল সিংহ। শোনাযায়, সেখানের চারজন কুলদীপ মালিক, ঈশ্বর দাহিয়া, মনদীপ সিং এবং রাজবীর সিং যারা প্রত্যেকে নিজেদের সাক্ষী মালিকের কোচ হিসাবে দাবি করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে, সাক্ষী নিজেই ক্রীড়া বিভাগের কাছে একটি হলফনামা জমা দিয়ে জানিয়েছিলেন যে ঈশ্বর দাহিয়া এবং মনদীপ সিং তার কোচ।

রিওতে পদক জেতার পর কোচ কুলদীপ সিংহের ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সাক্ষী জানিয়ে ছিলেন, "রিওতে পদক জেতার জন্য যদি আমি একশো শতাংশ পরিশ্রম করে থাকি, উনি একশো এক শতাংশ করেছেন। দিন-রাত খেটেছেন। এই পদক যদি দু' ভাগ করা যেত, তা হলে একটা অং‌শ কোচকে দিয়ে দিতাম।"

সাক্ষী রোহতকের মহর্ষি দয়ানন্দ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শারীরিক শিক্ষায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পেয়েছেন। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসলিং ডিরেক্টর হিসেবে নিযুক্ত হন। বর্তমানে তিনি ভারতীয় রেলওয়ের দিল্লি বিভাগের বাণিজ্যিক বিভাগে, উত্তর রেলওয়ে জোনে নিযুক্ত আছেন এবং তিনি JSW স্পোর্টস এক্সিলেন্স প্রোগ্রামের সাথেও যুক্ত। রিও অলেম্পিকে তার ব্রোঞ্জ পদক জয়ের পর, তাকে সিনিয়র ক্লার্ক থেকে গেজেটেড অফিসার পদে উন্নীত করা হয়।

অলিম্পিক্স পদক জয়ের পর এক সাক্ষাৎকারে সমালোচকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন, "ওই লোকগুলোর কথা যাঁরা মনে করতেন, মেয়েদের দিয়ে কুস্তি হবে না। যাঁরা প্রতি পদক্ষেপে আমাকে টিটকিরি দিতেন। পদক হাতে নিয়ে প্রথমেই ভাবলাম, এ বার ওদের ভুল ধারণাটা বদলাতে পারব আমি।" সাংবাদিকরা মজা করে হাতে বন্দুক থাকলে তো গুলি করে দিতেন মনে হচ্ছে জিজ্ঞাসা করলে সাক্ষী বলেন, "গুলি কেন করব? ওঁরা তো ফুলের মালা পাওয়ার যোগ্য। ওঁরা ছিল বলেই তো নিজের ভেতর জেদটা তৈরি করতে পেরেছিলাম। মরিয়া ছিলাম একদিন দেখিয়ে দেব, মেয়েরাও কম নয়। আমরা যদি জন্ম দিতে পারি, তা হলে পৃথিবীর যে কোনও কাজ করতে পারি। সবার চেয়ে ভাল করতে পারি"।

২০১৭ সালে ভারতীয় ফ্রিস্টাইল কুস্তিগীর সত্যবর্ত কাদিয়ানকে বিয়ে করেন সাক্ষী মালিক। ওই বছরই চতুর্থ সর্বোচ্চ ভারতীয় জাতীয় সম্মান পদ্মশ্রী পান তিনি। ঠিক তার আগের বছর ২০১৬ সালে অলেম্পিকে ব্রোঞ্চ পদক অর্জনের পর ভারতের সর্বোচ্চ ক্রীড়া সম্মান মেজর ধ্যানচাঁদ খেল রত্ন দেওয়া হয় সাক্ষীকে।

এই প্রথম কমনওয়েলথ গেমসের গোল্ড মেডেল গলায় ঝোলালেন সাক্ষী মালিক। তখন সময়টা আবার মনের মধ্যে রি-ক্যাপ করলেই দেখতে পাওয়া যায়, গলায় তখন ঝুলছিল পদক। বার বার সেটাকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখছিলেন সাক্ষী মালিক। বার্মিংহামের কভেন্ট্রি সেন্টারে জাতীয় সঙ্গীত বেজে ওঠার সময় নিজেকে সামলে রাখতে পারলেন না। চোখ বুজে এল। কোণ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল জল। হয়তো আশপাশে যা হচ্ছে, সেটাকে স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছিল সাক্ষীর। বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে তিনি সোনা জিতে ফেলেছেন।

এর কিছুদিন আগেই একটা মানসিক অবসাদ গ্রাস করেছিলো সাক্ষীকে। মানসিক সমস্যা আধুনিক ক্রীড়াবিদদের কাছে খুবই সাধারণ। প্রতিনিয়তই কোনও না কোনও ক্রীড়াবিদ মানসিক সমস্যার কথা তুলে ধরেন। চাপ বা প্রত্যাশা সামলাতে না পেরে অনেকেই হাল ছেড়ে দেন। সাক্ষীও প্রায় সেই দলেই নাম লিখিয়ে ফেলেছিলেন। ২০১৭-র কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপের পর আর কোনও পদক জেতেননি। রিংয়ে নামলেই লোকে ভাবে সাক্ষী নিশ্চয়ই পদক জিতবে। এত মানুষের প্রত্যাশা কিছুটা হলেও চাপ তো তৈরি করেই খেলোয়াড়দের ওপর। ভাগ্য বা দুর্ভাগ্য, যাই বলুন না কেন। ভাগ্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় সঙ্গে ছিল না সাক্ষীর। এশিয়ান গেমসে শেষ দু'সেকেন্ডে হেরে যান তিনি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ০.৭ সেকেন্ডে। শেষ মুহূর্তে বাউট শেষ করতে পারছিলেন না। হেরে যাচ্ছিলেন। যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি টোকিয়ো অলিম্পিক্সের। সেই প্রসঙ্গে সাক্ষী বলেছেন, "আত্মবিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। রোজ অনুশীলন করছিলাম, কিছুতেই মনে এই বিশ্বাস আসছিল না, যে জিততে পারব। কোচেরা বার বার বলছিলেন কুস্তিগিরদের মধ্যে আমি অনেক ফিট। নিজের মধ্যে সেই বিশ্বাস আসছিল না। ভাবছিলাম সময় খারাপ যাচ্ছে। তবে একটা সময় বুঝতেই পারছিলাম না কী হয়ে চলেছে চারপাশে।"

সাক্ষী শুধু এটুকু বুঝতে পেরেছিলেন, কোথাও না কোথাও মানসিক সমস্যা হচ্ছে। তিনি সিদ্ধান্ত নেন মনোবিদের শরণাপন্ন হওয়ার। সাক্ষী

বলেছেন, "মনোবিদ আমাকে বলেন নিয়মিত ডায়রি লিখতে। কোথায় সমস্যা হচ্ছে, কী অনুশীলন করা দরকার, সব লিখে রাখতাম। মনের ভিতরে যে নেতিবাচক ভাবনা চলছে সেটা নিয়েও ওঁর সঙ্গে আলোচনা করতাম। অনুশীলনে কোনও সমস্যা হত না। প্রতিযোগিতায় নামলেই মনে হত সব শেষ। এর পর মনোবিদ আমাকে নির্দিষ্ট কিছু কাজ করতে দেন। সেগুলো করে অনেকটা শান্তি পাই।" এখনও রোজ ডায়রি লেখেন সাক্ষী। প্রতিযোগিতা চলাকালীন লেখার সময় পান না।

গত কয়েক বছর ধরে সাক্ষীকে যাঁরা কাছ থেকে দেখেছেন, একমাত্র তাঁরাই জানেন কতটা কষ্ট লুকিয়ে রয়েছে ওই চোখের জলে। ২০১৬ সালে রিয়ো অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ জিতে গোটা দেশের নয়নের মণি হয়ে উঠেছিলেন তিনি। দিকে দিকে তখন তাঁরই চর্চা। পরের কয়েকটা বছর বাস্তব তাঁকে মাটিতে আছড়ে ফেলেছিল। হেরে যাচ্ছিলেন অখ্যাত এবং জুনিয়র কুস্তিগিরদের কাছেও। যাঁরা এক সময় তাঁকে নিয়ে নাচানাচি করেছিলেন, তাঁরাই সমালোচনায় বিদ্ধ করতে থাকেন। রাগে-দুঃখে-অভিমানে খেলাই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন সাক্ষী। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। ভাগ্যিস এসেছিলেন! না হলে বার্মিংহামের এই রাত তাঁর দেখাই হত না।

শেষে জাতীয় কুস্তিতে আবার স্বমহিমায় সাক্ষী মালিক। কমনওয়েলথে এর আগে দু'টি পদক থাকলেও সোনা ছিল না। সাক্ষী বিশ্বাস করেন, তাঁর সোনা জেতার এটাই শেষ সুযোগ ছিল। সেটা কোনও ভাবেই হাতছাড়া করতে চাননি। ফাইনাল পর্যন্ত কোনও সমস্যা হয়নি। সোনা জয়ের শেষ ম্যাচে কানাডার আনা গদিনেজের বিরুদ্ধে অবশ্য শুরুতে একটু বিপদে পড়েন। প্রতিপক্ষ এগিয়ে গিয়েছিলেন ০-৪ পয়েন্টে। এক মুহূর্তের জন্যেও নিজের উপর বিশ্বাস হারাননি। পছন্দের 'ডাবল লেগ অ্যাটাক' দিয়েই প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করে ফেলেন। 'ডাবল লেগ অ্যাটাক' সাক্ষীর খুবই পছন্দের। রিয়ো অলিম্পিক্সেও এই আক্রমণে সাফল্য এসেছিল। কমনওয়েলথে সোনা এনে দিল।

যদিও নিঃসন্দেহে একথা স্বীকার করতেই হয়, সাক্ষীর জীবনের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব অলিম্পিক্স পদক। ২০১৬ রিয়ো অলিম্পিক্সে ৫৮ কেজি বিভাগে আইসুলু টিনিবেকোভাকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ পদক জেতেন। অলিম্পিক্সে পদক জয়ের পর বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা পাঁচে উঠে এসেছিলেন কুস্তিগির সাক্ষী মালিক। এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে চারটি পদক রয়েছে তাঁর। ২০১৭-য় রুপো পেয়েছিলেন। বাকি তিন বার ব্রোঞ্জ জিতেছেন।

অলিম্পিক্স পদকের পর দীর্ঘ দিন প্রতিযোগিতার বাইরে ছিলেন সাক্ষী। চোট-আঘাত তাঁকে খুবই সমস্যায় ফেলেছিল। বিশেষত হাঁটুর চোটে খেলতে পারেননি অনেক দিন। তবে এ বছর তিনি ছন্দেই রয়েছেন। ইস্তানবুলের ইয়াসার দোগু প্রতিযোগিতায় খেলেছেন। টিউনিশ র‌্যাঙ্কিং সিরিজে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন। তারপরও কমনওয়েলথে আসা এক সময় নিশ্চিত ছিল না সাক্ষীর। লড়তে হয়েছিল ট্রায়ালে। সোনম মালিককে হারিয়ে কমনওয়েলথ গেমসের যোগ্যতা অর্জন করেন। তবে সাক্ষীর ফিরে আসার শুরুটা ফেব্রুয়ারি মাসে। জাতীয় দলের কোচ হিসাবে জিতেন্দ্র যাদব যোগ দেওয়ার পর। সাক্ষীর মনে যে সামান্য দ্বিধা ছিল, সেটা দূর করে দেন জিতেন্দ্র। তিনি বলেছেন, "সাক্ষীর মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখতে পেয়েছিলাম। পুরোটাই মানসিক। ওর টেকনিক বা খেলায় কোনও সমস্যা ছিল না। সাক্ষী ভাবছিল ও ফিট নয়। সেটাই ওর আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি এনেছিল। জাতীয় স্তরেও তাই ভাল খেলতে পারছিল না। হেরে যাচ্ছিল জুনিয়রদের কাছে। আমি এসে দেখতাম ও বেশি ওজনের প্রতিযোগীদের বিরুদ্ধে লড়ছে। আমি কম ওজনের প্রতিযোগীদের বিরুদ্ধে ওকে লড়তে বলি। এতে ওর নড়াচড়া আগের থেকে অনেক ভাল হয়। ওকে বলেছিলাম, কমনওয়েলথে যেতে না পারলে আমি জাতীয় কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেব। সাক্ষী আস্থার দাম রেখেছে।"

কাকে প্রেরণা হিসেবে দেখেন? প্রশ্ন করলে সাক্ষী জানান, "আমার স্বামী (সত্যব্রত কড়িয়ান) আমাকে সব সময় উৎসাহিত করে যায়। আমার কেরিয়ারের ওঠাপড়ায় সব সময় ওকে পাশে পেয়েছি। ও নিজেও কুস্তিগির, অর্জুন পুরস্কারপ্রাপক।"

শুধু জিতেন্দ্রই নয়, সাক্ষীর স্বামী সত্যবর্ত এবং শ্বশুরও ভরসা রেখেছিলেন। নিজের বাড়িতেই আখড়া রয়েছে। সেখানে নিয়মিত অনুশীলন করতেন সাক্ষী। শ্বশুর তাঁকে সাহায্য করতেন। অনুশীলনের মাঝে সত্যবর্তও আসতেন। সাক্ষীর কথায়, "ওঁদের দু'জনের প্রভাব আমার জীবনে বিরাট। আজ যেখানে দাঁড়িয়ে, সেটা ওঁদের ছাড়া সম্ভব ছিল না।"

নিবন্ধকারঃ ঋদ্ধি রিত

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...