ওড়িশা ট্রেন দুর্ঘটনায় নিজের বাঁ হাতটাকে হারিয়েছিল ওই কিশোর। প্রায় ১১ মাস পর নিজের বাঁ হাত ফিরে পেল রিয়াজ আফ্রিতি। সোমবার এসএসকেএম হাসপাতালে কৃত্রিম হাত লাগানো হল রিয়াজের। সেই হাতটা দেখে যা সে কি করবে ভেবে উঠতে পারছিল না! খুশি হয়ে সে বলল, ‘‘এই দিনটারই অপেক্ষায় ছিলাম।’’
গত ২ জুন দুর্ঘটনার মুখে পড়ে রিয়াজ আফ্রিতি ও তাঁর ভাই রজব আলি। সেইদিন দুর্ঘটনার পর ভাই রজব কোনওমতে দাদাকে খুঁজে পেয়ে তাঁর ক্ষতবিক্ষত হাত ভিডিয়ো কল করে দক্ষিণ দিনাজপুরের বাড়িতে দেখিয়েছিল।
দুর্ঘটনার পরে ওড়িশার দু’টি হাসপাতাল ঘুরে পিজির ট্রমা কেয়ারে ভর্তি হয়েছিল কিশোর রিয়াজ। সেখানেই তার হাত বাদ দিতে হয়। এরপর সেইসময়তেই মুখ্যমন্ত্রী রিয়াজকে দেখতে আসে এবং কৃত্রিম হাত লাগানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
এরপরেই সমস্ত প্রস্তুতি শুরু করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দফায় দফায় ভর্তি করা হয় রিয়াজকে। তাঁকে শেখানো হয় যে কিভাবে বাঁ কাঁধ নড়াচড়া করবে।
সোমবার পিজির ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন (পিএমআর) বিভাগে রিয়াজের বাঁ কাঁধের নীচ থেকে যখন কৃত্রিম হাত লাগানো হয়, তারপর দাদাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে রজব। সে জানিয়েছেন যে তার দাদার শরীরের বাঁ দিকটা কেমন যেন ফাঁকা লাগত। এখন থেকে আর কেউ বলবে না যে ওর (দাদা) হাত নেই।
পিএমআরের বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিক জানিয়েছেন যে রিয়াজের কাঁধের একেবারে গোড়া থেকেই হাতটা বাদ দিতে হয়েছিল। ফলে, চিকিৎসকদের কাছে বিষয়টি খুব চ্যালেঞ্জের ছিল। কারণ, মাংসপেশী বেশি থাকলে কৃত্রিম হাত নড়াচড়া করা সহজ হয়। কিন্তু রিয়াজের তেমনটা না হওয়ায় ওর কাছে কৃত্রিম হাতের ব্যবহার অনেক বেশি কঠিন ছিল।
তিনি আরও জানিয়েছেন যে গত কালীপুজোর সময়ে এবং সম্প্রতি বেশ কয়েক দিন ওই কিশোরকে ভর্তি করে বাঁ কাঁধের বিভিন্ন ব্যায়াম শেখানো হয়েছে।
অন্যদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে সাধারণ যে কৃত্রিম হাতগুলি হয়, সেগুলোয় অনেক বেশি চাপ দিয়ে কাজ করতে হয়। কিন্তু রিয়াজের পক্ষে তা সম্ভব নয় দেখে ইংল্যান্ড থেকে ওই রোবোটিক কৃত্রিম হাত আনানোর পরিকল্পনা হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন যে এই কৃত্রিম হাতের ভিতরে একটি সেন্সর রয়েছে। সেটি রিয়াজের বাঁ কাঁধ স্পর্শ করে থাকবে এবং তাতে কাঁধের মাধ্যমেই সে কনুই ও আঙুল নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
অপারেশন সম্পন্ন হওয়ার পর কনুই থেকে হাত ভাঁজ এবং আঙুল মুঠো করতে পেরে রিয়াজের চোখে-মুখে দেখা গিয়েছিলএ ক অন্যরকম হাসি। সেই হাসি দেখে উপস্থিত চিকিৎসকেরা বলেছিলেন যে রিয়াজের কঠিন লড়াইয়ে পাশে থাকতে পেরে তাঁরাও খুশি।
চিকিৎসকেরা আরও জানিয়েছেন যে সাধারণ ভাবে মানুষ ১৩৫ ডিগ্রি কোণে কনুই থেকে হাত ভাঁজ করতে পারে। তবে, এই রোবোটিক কৃত্রিম হাতটি ক্ষেত্রে সেটি ১২০ থেকে ১২৫ ডিগ্রি পর্যন্ত করা যাবে। পাশাপাশি, আঙুল দিয়ে কোনও জিনিস ধরা থেকে, চামচ দিয়ে মুখে খাবার তুলে খেতেও পারবে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া রিয়াজ।
ডাক্তার রাজেশ উন্নত প্রযুক্তির হাতটির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এদিন কৃত্রিম হাত লাগানোর পরেই বাড়ি ফেরার আর্জি জানায় রিয়াজ। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানান যে কৃত্রিম হাত লাগানো অবস্থায় আরও কয়েক দিন তাকে পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে কিশোরকে। এরপর গায়ে খয়েরি রঙের গেঞ্জি গলিয়ে এবং সঙ্গে থাকা সেই চাদর ভাইয়ের হাতে দিয়ে রিয়াজ বলে যে বহুদিন ধরে চাদর চাপা দিয়ে ঘুরছে। এবার আর সেটার দরকার লাগবে না।
যে সংস্থার মাধ্যমে ওই কৃত্রিম হাত বিদেশ থেকে আনা হয়েছে, সেটির তরফে মিনতি সবত ও সুজাতা দাস জানিয়েছেন যে ওই রবোটিক হাতটিতে যে ব্যাটারি রয়েছে, তাতে টানা ৭২ ঘণ্টা চার্জ থাকবে। এরপর সেটিকে চার্জ দিতে হবে। এছাড়া একটি অতিরিক্ত ব্যাটারিও দেওয়া হয়েছে।