সারারাত প্রচেষ্টার পর অবশেষে ভোররাতে হাওড়ায় উদ্ধার হল পাহাড়ি অজগর

 

রাতভর প্রচেষ্টার পর অবশেষে হাওড়া পুরনিগম এলাকা থেকে উদ্ধার হল ১০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট অজগর। সোমবার, জগাছার মৌখালি এলাকার স্থানীয় ক্লাবের সদস্যদের অনবরত যৌথ প্রয়াসের ফলে এই পাহাড়ি অজগরটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। 

স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার এলাকা জুড়ে চলছিল মহরমের প্রস্তুতি। আনুমানিক সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা নাগাদ একটি ফাঁকা মাঠে অবস্থিত আগাছার জঙ্গলের মধ্যে সাপটিকে প্রত্যক্ষ করেন স্থানীয়রা। এলাকার কিছু মানুষ সাপটিকে ধরার চেষ্টা করলেও অন্ধকারের সুযোগে ঝোপের আড়ালে গা ঢাকা দেয় সে। এর পর টর্চ আর লাঠিসোটা নিয়ে চলে সাপ সন্ধান প্রক্রিয়া। অনেক খোঁজার পর রাত ১১টা নাগাদ জানা যায়, স্থানীয় ব্যায়াম সমিতির মাঠের পাশে একটি পরিত্যক্ত কারখানা লাগোয়া ঝোপে লুকিয়ে রয়েছে সাপটি।

তবে দেখা মিললেও কারখানার সামনে স্তূপাকারে রাখা লোহার রডের স্তূপের ভেতর আশ্রয় নেয় সে, প্রাণভয়ে সেখানে কুন্ডলী পাকিয়ে বসে থাকে। টর্চের আলোয় দীর্ঘক্ষণ সাপটির গতিবিধি লক্ষ্য করেন ক্লাবের সদস্যরা। এর পর সুকৌশলে জাল দিয়ে সম্পূর্ণ রডের স্তূপটি ঘিরে ফেলা হয়। প্রথমে একটি দড়ি দিয়ে অজগরটিকে বেঁধে রডের স্তূপের মধ্যে থেকে বের করে আনার চেষ্টা করলেও, কয়েক ঘন্টার লড়াইয়ের পর দড়িটি ছিঁড়ে যায়। বাধ্য হয়ে বিকল্প রাস্তা খুঁজে না পেয়ে অবশেষে কোনোরকমে সাপটিকে টেনে বের করে জালবন্দী করেন উদ্ধারকারীরা। পুলিশ ও বনদপ্তরের কাছে খবর দেওয়া হয়।

 তখন ভোর প্রায় ৩টে। প্রথমে সাপটিকে ধরে দড়িতে ঝোলানো হলেও পরে একটি বৃহৎ আকারের অ্যাকোয়ারিয়ামে তাকে রাখা হয়। বৃহদায়তনের অজগরটিকে চর্মচক্ষে প্রত্যক্ষ করতে অসংখ্য কৌতুহলী মানুষের সমাগম ঘটে ক্লাব প্রাঙ্গণে। মঙ্গলবার সকালে বনদপ্তরের কর্মীরা এসে সাপটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।

উদ্ধার করার পর হাওড়ার বিভাগীয় বনাধিকারিক (ডিএফও) সোমনাথ সরকারের মন্তব্য, আপাতদৃষ্টিতে সাপটিকে সুস্থ বলেই মনে হচ্ছে। আমরা সেটিকে সল্টলেকের প্রাণী উদ্ধারকেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছি।

তবে ইতিমধ্যেই পাহাড়ি অজগরটির হাওড়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আন্দোলনের কর্মী শুভ্রজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া সাপটি ইন্ডিয়ান রক পাইথন (পাইথন মল্যুরাস) প্রজাতির। মূলত পাহাড়ি অঞ্চল, পাথুরে মালভূমি অথবা বড় ঘাসে ঢাকা ঝোপে এদের দেখতে পাওয়া যায়। দক্ষিণবঙ্গের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান এবং বীরভূমের রাঢ় অঞ্চল এদের আশ্রয়স্থল। হাওড়া জেলায় এদের উপস্থিতি নেই।

হাওড়া জেলায় এদের উপস্থিতি না থাকলে কিভাবে এল এই অজগর?

ক্লাব সদস্য হাফিজুল মন্ডলের প্রতিক্রিয়ায়, আমাদের এলাকায় কখনও অজগর দেখা যায় নি। কিভাবে সাপটি এখানে এল তা বুঝে উঠতে পারছি না।

প্রসঙ্গটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সোমনাথ সরকার জানিয়েছেন, যে এলাকা থেকে সাপটি উদ্ধার হয়েছে, তার আধ কিলোমিটারের মধ্যেই কোনা এক্সপ্রেসওয়ে এবং রেললাইন। মনে হচ্ছে মালবাহী ট্রেন বা ট্রাকে করেই কোনোভাবে সাপটি এখানে চলে এসেছে।

কিছুদিন আগেই হাওড়ার ধূলাগড় এলাকায় জনাকয়েক সাপুড়েকে গলায় অজগর ঝুলিয়ে ঘুরতে দেখা গেছে। অনেকে মনে করছেন সেখান থেকে কোনোভাবে একটি সাপ পালিয়ে আসতে পারে। পাশাপাশি আলোচনায় অন্য একটি সন্দেহও দানা বাঁধছে, লড়ি বা ট্রাকে করে অজগরটিকে পাচার করতে যাচ্ছিল কোনো চোরাচালানচক্র, কোনোভাবে জাল ছিঁড়ে সেখান থেকে পালিয়ে এসে থাকতে পারে এই পাহাড়ি অজগর।

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...