৪৬ বছর পর পুনরায় খোলা হল পুরীর রত্নভান্ডার। ১৪ই জুলাই রবিবার দুপুরে ওই ঘরের তালা খোলা হয়েছে। প্রায় ৩ ঘন্টা সময় লেগেছে এই ভান্ডার খুলতে।
জগন্নাথদেবের এই রত্নভান্ডার দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি বহির্ভান্ডার ও অন্যটি অন্তর্ভান্ডার। রবিবার বেলা ১টা ২৮ মিনিটে এই ভান্ডারের তালা খোলা হয়। মূলত বহির্ভান্ডারের তালা খুলে যাবতীয় জিনিস অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা হয় এবং ভিডিওগ্রাফির পর সেটা আবার সিল করে দেওয়া হয়। এরপর অন্তর্ভান্ডার খোলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ৪৮ বছর বন্ধ থাকার কারণে তালা ভাঙতে হয়। এরপর সেই দরজায় নতুন তালা লাগিয়ে তা কোষাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
জানা যায়, ১৯২৬ সালের পুরীর তৎকালীন রাজা গজপতি রামচন্দ্র দেব জগন্নাথদেবের রত্নভান্ডারের তালিকা তৈরি করে। তালিকা অনুযায়ী, এই ভান্ডারে রয়েছে, জগন্নাথ দেব, বলভদ্র দেব এবং সুভদ্রার দেবীর প্রায় ১৫ কেজিরও বেশি স্বর্ণালঙ্কার, সোনার মুকুট, ১৫০টি সোনার অলঙ্কার সহ ৮৩৭ রকম অমূল্য সম্পদ। আইন অনুযায়ী, রত্ন ভাণ্ডারটি প্রতি তিন বছর অন্তর অডিট করা হলেও কোনও কাজে রত্ন ব্যবহার করা হয় না।
১৯৭৮ সালে শেষবার এই কক্ষ খোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় ওই কক্ষের মাত্র দু-টি ঘর খোলা গিয়েছিল। ওড়িশা ম্যাগাজিন অনুসারে জানা যায়, সেখানে রয়েছে সাতটি ঘর। বহু ভক্তেরা বিভিন্ন সময়ে জগন্নাথদেবের প্রতি অলঙ্কার নিবেদন করেছিলেন, সেইগুলিই রাখা রয়েছে ওই গুপ্ত কুঠুরিতে।
প্রথম ঘরটি ২০/২০ ফুটের। সেখানে রয়েছে বেশ কিছু আলমারি এবং তিন চারটি ট্রাঙ্ক। বাইরের ঘরটিতে রয়েছে জগন্নাথদেবের সোনার মুকুট, তিনটি সোনার হার যা ‘হরিদাকন্ঠী মালি’ নামে পরিচিত। এক একটি হারের ওজন প্রায় ১২০ তোলা। ভেতরের ঘরটিতে প্রায় ৭৪ গুলি স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে, যার প্রতিটির ওজন ১০০ তোলা-রও বেশি। সেখানে রয়েছে সোনা, হীরা, প্রবাল, মুক্তা দিয়ে তৈরি তালা। এ ছাড়াও রয়েছে ১৪০টিরও বেশি রুপোর গয়না। এই ভান্ডারে মোট সোনা রয়েছে ১২৮ কেজি ও রুপো রয়েছে ২২১ কেজি।
রবিবার বিশেষজ্ঞ প্যানেলের বেশ কিছু সদস্য সহ মন্দিরের কয়েকজন সেবায়েত রত্ন ভাণ্ডারের ভিতরে প্রবেশ করেন। প্রাথমিকভাবে রত্ন ভান্ডারের আসল চাবি না পাওয়া গেলে অন্য চাবি বানিয়ে তা দিয়েই তালা খোলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সেই কাজে অসফল হয়ে শেষ পর্যন্ত তালা ভেঙে প্রবেশ করেন তারা।
তবে রত্ন ভাণ্ডারের দরজা খুলতেই বেড়িয়ে এসেছিল ঝাঁক ঝাঁক বাদুড়ের দল। শ্রী মন্দিরের বৈশি পঞ্চরের দিকে বাদুড়গুলি উড়ে যায়। ভিতরে প্রবেশ করে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং সাপুড়েদের দল এবং বাইরে বেরিয়ে তারা জানান, সাপ নয় বরং ইঁদুরের বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে রত্ন ভাণ্ডারের ভেতরে।
রত্ন ভাণ্ডার থেকে বেরিয়ে জগন্নাথ মন্দিরের অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মুখ্য প্রশাসক অরবিন্দ পাড়ি জানিয়েছেন, রত্ন ভাণ্ডারের বাইরের দিকের কুঠুরির সমস্ত সোনাদানা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভিতরের কুঠুরির সমস্ত রত্ন, আলমারি এবং সিন্দুকে তোলা রয়েছে। সময় অতিবাহিত হওয়ায়, ভিতরের কুঠুরির সমস্ত রত্ন একদিনে বের করা সম্ভব হয়নি। ফলে ভিতরের অংশের সোনাদানা বের করার জন্য আরও একটি দিন ধার্য করা হবে।