আশিতেও ভালোবাসি

একটা বেড়াল নিজেকে খুব চালাক ভাবে। তার প্রতিদ্বন্দী ছোট্ট ইঁদুর। বেড়াল আর ইঁদুরের গল্পে তারা একে অপরের প্রতিদ্বন্দী হবে, এটাই স্বাভাবিক। খাদ্য-খাদক সম্পর্ক অনুযায়ী বেড়ালের জ্বালাতনে অস্থির হওয়ার কথা ইঁদুরের। কিন্তু এখানে হয় একেবারে উল্টো। ইঁদুরের জ্বালায় বিরক্ত এক বেড়াল। বিরক্ত হবে নাই বা কেন! একবার পাউরুটিতে জেলি মাখিয়ে কামড় দিতে গেছে বেড়াল। ইঁদুরের কারসাজিতে নিজের লেজেই সে কামড় দিয়ে বসে! ব্যাস ওমনি ক্ষেপে যায় বেড়াল। বিপদে ফেলতে চায় ইঁদুরকে। ফল উল্টো। নিজেই বিপদে পড়ে যায় বেড়াল।

 

এদিকে সেই বেড়াল দমেনি তখনও। চিজ খাইয়ে ইঁদুরকে বিপদে ফেলার ছক কষে বেড়াল। বুদ্ধিমান ইঁদুর চিজ খেয়ে, ঢেকুর তুলে সেঁধিয়ে যায় নিজের গর্তে। মাঝেমধ্যে সে উঁকি দিয়ে দেখে নেয় সেই বেড়ালের কি অবস্থা। এদিকে বেড়ালের লেজ সেই ইঁদুরকে ছুঁতে পারে না। ইঁদুর ততক্ষণে চিজ খেয়ে ঘুম দিচ্ছে।

 

tomandjerry1

 

আমাদের পরিচিত গল্প। চরিত্ররা শুধুই পরিচিত নয়, আমাদের শৈশবের মনের কাছাকাছি। এই চেনা দুই কমিক চরিত্র আজও সমান জনপ্রিয়। টম অ্যান্ড জেরি। গত বছরই এই চরিত্ররা তাদের বয়স আশি পেরিয়েছে। আশি বছর ধরে লড়ে যাওয়া টম অ্যান্ড জেরির টক-মিষ্টি সম্পর্ক এক অন্য রূপকথা। একে অপরের সঙ্গে খুনসুটি করলেও বিপদে পড়তে দেয় না বন্ধুকে। এই যেমন স্পাইক নামের কুকুরটাকে টমের দিকে লেলিয়ে দিলেও জেরি মাঝে মাঝেই টমকে বাঁচায়ও এই কুকুরের থেকে। একটু এদিক-ওদিক হলেই এই ইঁদুর-বেড়াল ছুটে আসে নিজেদের বাঁচাতে।

 

তখন আমেরিকা ও তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে শুরু হয়েছে ঠান্ডা যুদ্ধ। মার্কিন প্রযোজনা সংস্থা 'এমজিএম স্টুডিয়ো'র অ্যানিমেশন বিভাগে কাজ করতেন বিল হ্যানা। এই সংস্থা তখন নতুন কার্টুন চরিত্র সৃষ্টি করতে চাইছে। মিকি মাউস বা পর্কি পিগ-এর আদলে। অথচ কোথাও যেন একটু আলাদা। বিল হ্যানা ওই স্টুডিয়োর এক ডিরেক্টর জোসেফ বারবেরার সঙ্গে পরামর্শ করতে বসলেন নতুন কার্টুন চরিত্র সৃষ্টি সম্পর্কে।

 

tomandjerry2

 

বারবার তাদের কথায় উঠে এল কোনও আনকোরা চরিত্রের সৃষ্টির কথা। চরিত্রের সংখ্যা একের বেশি হতেই পারে। তবে গল্পের জায়গায় থাকবে শুধুই ছুটোছুটি আর খুনসুটি। কারণ তখন শিশু-কিশোর পাঠক-পাঠিকাদের 'টার্গেট অডিয়েন্স' হিসেবে নির্ধারিত করা হয়েছিল। চিন্তাভাবনা খুব একটা আনকোরা ছিল কিনা বলা যায় না তবুও ঝুঁকি নিয়েছিলেন দুই সহকর্মী।

 

১৯৪০ সালে প্রথমবার টম অ্যান্ড জেরিকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল ছবি 'পাস গেটস দ্য বুট'। যদিও তখন ইঁদুরের নাম ছিল জ্যাসপার আর বেড়ালের নাম ছিল জিঙ্কস

 

শুরুতেই দারুণ সাফল্য। তুমুল জনপ্রিয় হয় প্রথম কাহিনী। 'অ্যানিমেটেড শর্ট ফিল্ম' আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। নির্বাক, সুর দিয়ে সাজানো। সুরের মধ্যেই ভরে দেওয়া ছিল মজার উপাদান। 'কমিক টিউন' ব্যবহার করা হয়েছিল।

 

tomandjerry3

 

অ্যানিমেটেড শর্টফিল্মের ক্যাটেগরিতে অস্কারের জন্য মনোনীত হয় 'জ্যাসপার ও জিঙ্কস'। তখনো অবশ্য এই জুটি নিয়ে তেমনভাবে নিশ্চিত ছিলেন না প্রযোজনা সংস্থা। এই সময়ে টেক্সাস থেকে এক প্রভাবশালী শিল্পপতির চিঠি আসে ইঁদুর-বেড়ালের আবার আবির্ভাবের কথা জানতে চেয়ে। তারপর দীর্ঘ পথ চলা শুরু হয় 'টম অ্যান্ড জেরি'র। আবহে ছিল স্কট ব্র্যাডলির মিউজিক। টমের গলায় মানুষের মতো চিৎকারের শব্দ জুড়ে দিয়েছিলেন বিল হ্যানা নিজেই।

 

এরপর প্রায় দু'দশক ধরে আমাদের দুঃখের গায়ে সোনারকাঠি বুলিয়ে দিয়েছে ইঁদুর আর বেড়াল। প্রায় একশোটির বেশি ছবি তৈরি হয়েছিল। 'এমজিএম প্রযোজনা সংস্থা'র কার্টুন বিভাগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ১৯৫৭ সালে। বাজেটের অভাবে। পরে বিল হ্যানা ও জোসেফ বারবেরা নিজেদের প্রযোজনা সংস্থা খুলেছিলেন। তখন আবার ফিরে আসে টম আর জেরি। এবারে স্রষ্টারা ভার দিয়েছিলেন প্রাগের এক স্টুডিয়োকে। তবে তেমন জনপ্রিয় হয়নি তাদের কাজ। ১৯৭০ সালে আবার স্রষ্টার হাত ধরে ফিরেছিল টম আর জেরি।

 

তবে তখন প্রথমদিকের কিছু এপিসোড নিয়ে বিতর্ক চলছিল। তাই সেই সময়টুকুতে খানিকটা জনপ্রিয়তার ঘাটতি ঘটে। কিন্তু শৈশব, খুনসুটি, দুষ্টুমি, বন্ধুত্ব এই শব্দগুলোর সঙ্গে আজীবন জড়িয়ে থাকবে দুটো নাম, একটাই শব্দবন্ধের মধ্যে- 'টম অ্যান্ড জেরি'।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...