সুপারহিরো-জাদুকর: জাদুকর ম্যানড্রেক

শৈশব। ঠিক যেন রঙিন পুঁতির মালা। ম্যাজিকের মত। দুশ্চিন্তা, আতঙ্ক, জটিলতা, পাওয়া-না-পাওয়ার চিন্তার স্পর্শবিহীন একটা সময়। বয়স যতদিন এক দশকের ঘরে থাকে কল্পনারা জাল বুনতে থাকে। খানিকটা ম্যাজিকের মত। একটা 'বিলিভ ইট অর নট'-এর দুনিয়া। শৈশবে এমন কিছু জাদু থাকে বলেই স্মৃতিরা কখনো ক্লিশে হয় না। আর তাই সুপারহিরোরা আমাদের অন্তরে জায়গা করে নেয়। তেমনি একজন জাদুকর ম্যানড্রেক।

man 11

ম্যানড্রেক চরিত্রের সৃষ্টিকর্তা লি ফক। লি ফক বইয়ের পাতায় সুপারহিরো সৃষ্টির জনক। আচ্ছা, কেমন করে এই লেখকের মনে এসেছিল 'সুপারহিরো'-দের সৃষ্টির কথা?

লি ফক তখন স্কুলপড়ুয়া। কিশোর। স্কুলের ম্যাগাজিনের কাজ ভালো লাগে তার। সেই কাজ সারার জন্য স্কুল থেকে বেশ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরছিলো লি। হঠাৎ করে শুনতে পেল এক বৃদ্ধের চিৎকার। ছোট্ট কিশোর তখন ভীত, সন্ত্রস্ত। একটা টেলিফোন বুথ এর আড়ালে লুকোলো সে। দেখতে পেল চারজন সশস্ত্র দুষ্কৃতী মারধর করে এক বৃদ্ধের সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে। সেদিনের সেই কিশোর কিছুই করতে পারেনি, পারেনি নির্যাতিতকে সাহায্য করতে। কিন্তু তখনই তার মনে হয়, কোনো এক জাদুকর বা অতিমানব যদি দুষ্টের দমন করতে পারে! বাস্তবে আর কোথায় এমন মানুষ? তখনই কমিক সিরিজের পাতায় সুপারহিরো সৃষ্টির চিন্তা মাথায় আসে। বাস্তবে না হোক লি-এর কল্পনার হাত ধরেই জন্ম নিতে থাকে সুপারহিরোরা। এভাবেই ধীরে ধীরে আবির্ভাব হয় ফ্যান্টম, জাদুকর ম্যানড্রেকের।

১৯৩৪ সালের ১১ জুন প্রথমবার 'কিং ফিচারস সিন্ডিকেট' পত্রিকা থেকে প্রকাশিত হতে শুরু করে জাদুকর ম্যানড্রেকের কাহিনী। বিখ্যাত জাদুকর লিওন ম্যানড্রেকের আদলে তৈরি চরিত্র। বিশ্বজুড়ে ঘটে চলা অন্যায়-অপরাধ জাদুর মাধ্যমে দমন করার চিন্তাভাবনা থেকেই এই গল্পগুলো লিখেছিলেন লি ফক। ম্যানড্রেককে এই কাজে সাহায্য করেন তাঁর স্ত্রী নার্দা, বন্ধু লোথার এবং হোজো।

man 3

কালো পোশাক, সঙ্গে বিশেষ লাল 'জাদু-কেপ'। হাতে ম্যাজিক লাঠি। মাথায় বিশেষ টুপি। এভাবেই ম্যানড্রেককে এঁকেছিলেন ফিল ডেভিস। লি ফকের লেখায় আর ফিল ডেভিসের আঁকায় প্রকাশিত হতে থাকে ম্যানড্রেকের গল্প।

ম্যানড্রেক নিউইয়র্কের ম্যাজিশিয়ান। সম্মোহনী ক্ষমতা তার নখদর্পণে। এর মাধ্যমেই জব্দ করেন অন্যায়কারীদের। ডাকাত, দুষ্টু বিজ্ঞানী, ভিনগ্রহী অপরাধী সকলকে। এই অপরাধ ও অপরাধী দমনে তাঁর প্রধান সহযোগী স্ত্রী নার্দা। তিনি কোকাইজেনের রাজকুমারী। ম্যানড্রেকের রাঁধুনী ও ইন্টারইন্টেলের প্রধান হোজো। ম্যানড্রেকের অন্যতম সহযোগী। ম্যানড্রেক ও তাঁর স্ত্রী নিউ ইয়র্কের একটি উচ্চপ্রযুক্তি সম্পন্ন প্রাসাদে বসবাস করেন। যেখানে প্রবেশ করতে পারে না অপরাধীরা। ম্যানড্রেকের বাবা থেরন। জাদু মহাবিদ্যালয়ের প্রধান। মা অ্যানিমোরা।

ম্যানড্রেকের দুটি কমিক স্ট্রিপ প্রকাশিত হতো। 'ডেইলি স্ট্রিপ' যেটা রোজ প্রকাশিত হতো আর 'সানডে স্ট্রিপ', প্রকাশকাল ছিল প্রতি রবিবার। প্রথমে ছবি আঁকতেন ফিল ডেভিস, তার মৃত্যুর পরে এই ভার নিয়েছিলেন ফ্রেড ফ্রেডরিকস। ১৯৯৯ সালে লি ফকের মৃত্যুর পর ফ্রেডরিকস লেখাও শুরু করেছিলেন ম্যানড্রেক-এর গল্প। ২০১৩ সালের ৬ জুলাই শেষ প্রকাশিত হয় ম্যানড্রেকের গল্প। বর্তমানে পুরনো কাহিনীগুলোই রি-প্রিন্ট হচ্ছে।

man 1

ধারাবাহিক, মিনি সিরিজ এবং রেডিও নাটক হিসেবেও প্রচারিত হয়েছে জাদুকর ম্যানড্রেকের কাহিনী। নানা ভাষাতেও অনূদিত হয়েছে। ‌

আমাদের শৈশবেরও সম্মোহনী শক্তি আছে। 'জাদুকর ম্যানড্রেক সম্মোহনের ভঙ্গি করলেন' এভাবেই শুরু হতো গল্পগুলো। তারপর? দিগন্তের পানে ভাসতে ভাসতে হাওয়ায় মিলিয়ে যেত দুশ্চিন্তা, দুর্দশা আর গ্লানির জটিল চিন্তাগুলো।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...