দুই ক্ষুদে সুপারহিরো: ছোটা ভীম ও চুটকি

এই তো গত বছরের কথা। ভারত সরকারের একটি বিশেষ বিজ্ঞাপন নজর কেড়েছিল। তখন মারীকাল সবে শুরু হয়েছে। কাল্পনিক নগর ঢোলকপুরে এক অভিনব প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিযোগিতার বিষয় - দুষ্টু করোনাভাইরাসকে কী করে শায়েস্তা করা যায়! কে জিতল এই প্রতিযোগিতায়? কমলা রঙের ধুতি পরা এক ক্ষুদে নায়কঢোলকপুরের বাসিন্দা সে। তাকে চিনি ছোটা ভীম নামে।

 

তা কীভাবে এই প্রতিযোগিতায় জিতল সে? শুধুমাত্র বাড়িতে থেকে। ঢোলকপুরের এক গণ্যমান্য ব্যক্তি ঘোষণা করছেন এই প্রতিযোগিতার ফলাফল। এই ঘোষণার আসরে হাজির লাল বক্সিং গ্লাভস পরা সবুজ করোনাভাইরাস। ভীমের জ্বালায় সে রেগে গিয়ে পালাচ্ছে দেশ ছেড়ে। ভারত সরকারের একটি বিশেষ অ্যাপ্লিকেশনের ফেসবুকের পাতায় এরকম এক বিজ্ঞাপন সেই সময় আমাদের মনোরঞ্জন করেছিল। ছোটা ভীম এমনই এক মন ভালো করে দেওয়া কমিক চরিত্রের নাম।

ChhotaBheem1

২০০৮ সালে পোগো টিভিতে প্রথমবার টেলিভিশন সিরিজ হিসেবে ছোটা ভীম আর ছুটকির জুটি আত্মপ্রকাশ করে। অ্যানিমেটেড কার্টুন সিরিজ হিসেবে এদের আবির্ভাব। কাল্পনিক শহর ঢোলকপুরের বাসিন্দা ভীম আর ছুটকি। নেহাতই ক্ষুদে তারা। ভীম সাহসী ও বুদ্ধিমান। তার অনেক বন্ধু আছে। ছুটকি, জগ্গু, রাজু।

 

এই কাহিনীতে রয়েছে 'দুষ্টু লোক'। কালিয়া। আর তার দুই বন্ধু ঢোলু আর ভোলু। কালিয়ার লক্ষ্য নিজেকে ভীম-এর থেকেও বেশি বুদ্ধিমান ও সাহসী প্রমাণ করা। আর প্রমাণ করতে গিয়ে সে ভীম আর তার বন্ধুদের বিপদে ফেলে বারবার। তবে কাবু করতে পারে না এই ছোট্ট নায়ককে। ভীম লড়াই করে শুভশক্তির হয়ে। ঢোলকপুরকে সে মুক্ত করতে চায় কালিয়ার দুষ্টু বুদ্ধি থেকে। লড়াই চলে সাদা আর কালোর।

ChhotaBheem3

গ্রীন গোল্ড অ্যানিমেশনস মেগা ফিল্মস-এর প্রযোজনায় পোগো টিভিতে ২০০৮ সালে শুরু হয়েছিল এই সিরিজ। পরে দূরদর্শন এর স্বত্ব কিনে নিয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জন্য বন্ধ হয়ে যায় সম্প্রচার। মোট ৬২৪টি এপিসোড দেখানো হয়েছিল।

 

বয়সের গন্ডির বাইরেও জনপ্রিয় ছিল ছোটা ভীম আর চুটকির কাহিনী। এই কাহিনীর মূল চরিত্র দুজন। ছোটা ভীম আর চুটকি। খালি গা, কমলা রঙের ধুতি, এই ছিল ভীম। দু'পাশে দুই বেণী দুলিয়ে ছোট্ট চুটকি মন কেড়েছিল সকলের। টিভি সিরিজ হয়ে আসার পাশাপাশি বই হিসেবেও প্রকাশিত হয় এই গল্পগুলি। এই কমিক সিরিজ-এর মূল ভাষা হিন্দি। তবে অন্য নানা ভাষাতেও অনূদিত হয়েছে জনপ্রিয়তার কারণে।

 

ছোটা ভীম, চুটকির পাশাপাশি রাজু, জগ্গু এরাও যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল ছোটদের কাছে। রাজু সাহসী এবং মজাদার। ভীমের অনুগামী। রাজুকে নিয়ে পরে একটি বিশেষ কমিক সিরিজও তৈরি হয়েছিল। নাম ‘মাইটি রাজু’

ChhotaBheem2

সমাজের ভালো-মন্দ শেখানোর পাশাপাশি ভীমের গল্পগুলোতে ছিল রূপকথার ছোঁয়াও। ঢোলকপুরের রাজা, রাজকন্যা, ভালো জাদুকরী আর দুষ্টু জাদুকরীরাও এই কমিক সিরিজকে রূপকথার গল্পের মতো আকর্ষণীয় করে তুলেছিল। এমনকি কৃষ্ণ, গণেশ এই সকল দেবদেবীকেও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে দেখানো হয় ছোটা ভীমের গল্পে।

 

কোন একটা নির্দিষ্ট ধাঁচে ফেলা হত না এই কমিক সিরিজকে। প্রযোজকরা তেমনভাবেই সাজিয়েছিলেন গল্পগুলো। প্রথমদিকে একেবারেই নির্ভেজাল, সরল সাদাকালো গল্প দেখানো হতো। দর্শকের বয়সের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে জনপ্রিয়তা বয়সের গন্ডির ঊর্ধ্বে চলে যাওয়ায় ধীরে ধীরে পাল্টানো হয় এই কমিক সিরিজের কাহিনীর ছাঁচ। রূপকথা, ভালো মন্দের বোধ, দেবদেবীর উপস্থিতি সবকিছু মিলিয়ে ছোটা ভীম আর চুটকি এখনও আমাদের বয়সকে শৈশবের দোরগোড়ায় আটকে রেখেছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...