সুপারহিরো 'অরণ্য-মানব' টারজান

এক ব্রিটিশ অফিসার পশ্চিম আফ্রিকার একটি উপনিবেশে পৌঁছানোর লক্ষ্যে পাড়ি দেন। কৃষ্ণাঙ্গদের উপর অত্যাচারের অভিযোগের তদন্ত করার ভার ছিল তাঁর উপর। কিন্তু সমুদ্রপথেই অভিযাত্রীরা বিদ্রোহ করেন জাহাজে। নাবিকরা তাঁকে হত্যা করে। সেই জাহাজেই ছিল এক ইংরেজ দম্পতি। নাবিকরা সেই দম্পতিকে তাঁদের শিশুসন্তানসহ আফ্রিকার গহীন অরণ্যে নিক্ষেপ করেন। কয়েক দিন পরে মারা যান সেই দম্পতি। বেঁচে যায় সেই শিশু সন্তান। তখন তার বয়স ছয়-সাত মাস।

 

শিশুটি যে জঙ্গলে পড়েছিল সেখানে বাস করত বিশেষ প্রজাতির গরিলারা। জঙ্গলে প্রথমবার মানব-শিশুকে দেখে অবাক হয়ে যায় কালা নামের এক গরিলা। ছোট্ট পুতুলকে স্নেহ, আদরে বড় করে। তার নাম দেয় 'টারজান' অর্থাৎ 'সাদা চামড়া'। মুছে যায় মানুষ ও পশুতে বিভেদ।

Tarzan1

জঙ্গলেই বড় হওয়ার কারণে টারজানের আদব-কায়দা হয়ে ওঠে পশুদের মত। গাছে চড়া তার নখদর্পণে। নানা বিচিত্র ভঙ্গিতে মুখে আওয়াজ করে সে। পশুদের সঙ্গে তার কথা চলে নিজস্ব ভাষায়। পশু, পাখির মতই চলাফেরা তার। তবে স্নেহ, ভালোবাসার মতো অকৃত্রিম অনুভূতিগুলো তাকে সঙ্গ দেয় সর্বদা। তাই সে বাঘ, সিংহ, কুমির, পাখি এদের শোনায় নিজের মনের কথা। তার মা 'কালা' গরিলার কাছে আবদার করে। জঙ্গলের প্রাণীদের অধিকারের হয়ে টারজান লড়াই করে। অরণ্যকে ভালবেসে টারজান হয়ে ওঠে অরন্যের নায়ক। তার রক্ষাকর্তা।

Tarzan3

একবার সেই জঙ্গলে বেড়াতে আসে বাল্টিমোরের এক সুন্দরী। জেন পোর্টার। টারজানের সারল্য, সাহসে মুগ্ধ হয় সেই সুন্দরী। তারা ভালোবেসে ফেলে একে অপরকে। জেন বুঝতে পারে আর পাঁচজন পুরুষের থেকে অনেকটাই আলাদা টারজান। এটাই তাকে আকৃষ্ট করে। কিন্তু মনের কথা একে অপরকে বলার আগেই জেন ফিরে যায় তার শহরে।

 

মানুষের ভালোবাসার মুগ্ধতা ভুলতে পারেনা টারজান। জেনকে খুঁজতে প্রথমবার অরন্যের গডি পার করে টারজান। খুঁজে পায় তার ভালোবাসা। বিয়ে হয় দু'জনের। শহরে বসবাস করতে শুরু করে টারজান ও জেন। কিন্তু অরণ্য-মানব অনুভব করতে পারে নিজের শূন্যতা। টারজানকে স্বাভাবিক নাগরিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছিল জেন। নিশ্চিন্ত জীবন, অর্থ, প্রতিপত্তি কোন কিছুই টারজানের অরন্যের প্রতি টানকে ভোলাতে পারেনি। নিজের সন্তানকে রেখে টারজান ফিরে আসে অরণ্যে। তার ভালোবাসার কাছে। সঙ্গী হয় জেন।

Tarzan2

অরণ্যের মায়া এভাবেই অরন্যের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিল তার নিজের সন্তানকে। টারজানকে। ঠিক যেমন টারজানের গল্পগুলো এক নিমেষে ফিরিয়ে দেয় আমাদের শৈশব। এই কমিক সুপারহিরো অরণ্য, শহর, গ্রামের গন্ডি পেরিয়ে আমাদের মনের অনন্ত সীমানায় পৌঁছেছে।

Tarzan4

আমেরিকার সাহিত্যিক এডগার রাইজ বারোজের রচিত কমিক চরিত্র টারজান। ১৯১২ সালে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় প্রথমবার। প্রকাশের কয়েকদিনের মধ্যেই জনপ্রিয়তার চরম সীমায় পৌঁছোয় এই সুপারহিরোর কাহিনী। লেখক তখন প্রকাশ করেন একটি উপন্যাস। 'টারজান অফ দ্য এপস'। ১৯১৪ সালে। প্রায় আড়াই কোটি কপি বিক্রি হয় এই উপন্যাসের। ১৯১৮ সালে এই উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয় একটি নির্বাক চিত্র। টারজান চরিত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় হন সাঁতারু জনি ওয়েস্মুলার। নিউইয়র্ক টাইমসে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে এই কমিক স্ট্রিপ। বিভিন্ন ভাষাতেও অনূদিত হয়।

আমাদের শৈশবের সুপার হিরোরা টারজানের মতোই মায়াময়। কাল্পনিক এই চরিত্ররা সমস্ত গন্ডি পার করে ছুঁয়ে ফেলে মনের সীমানা। তারপর কোথাও আমাদের স্মৃতিতে নিজেদের স্থায়ী বাসা গড়ে নেয়। আমরা মাঝে মাঝেই সেই স্মৃতি-ভান্ডার থেকে মণিমুক্তো কুড়িয়ে চলি।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...