নিউইয়র্ক শহরের এক নামি স্কুল। সেখানে মেধাবী ছাত্র পিটার পার্কার। কাকা বেন এবং কাকিমা মে'র সঙ্গে থাকে সে। ছোট থেকেই পিটার উৎসাহী, মেধাবী এবং অনুসন্ধিৎসু। স্কুলের বিভিন্ন প্রদর্শনীতে আগ্রহ নিয়ে অংশগ্রহণ করে। একবার এমনই এক প্রদর্শনীতে মাকড়সার কামড়ে আক্রান্ত হয় পিটার।
এই কামড়ের পর স্বাভাবিক জ্বালা-যন্ত্রণার বাইরেও সে অনুভব করে এক অদ্ভুত পরিবর্তন। যেকোনো কাজ স্বাভাবিকের থেকে অনেকটা তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করতে পারছে সে। এই কিশোর নিজের মধ্যে খুঁজে পায় এক অদ্ভুত শক্তি। যে শক্তি বা দক্ষতা তাকে স্বাভাবিকের গন্ডির বাইরে নিয়ে যায়।
ধীরে ধীরে পিটার বুঝতে পারে কোনো স্বাভাবিক মাকড়সার দ্বারা আক্রান্ত হয়নি সে। মাকড়সাটি ছিল বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন। পিটার অনুভব করে সে মাকড়সার মতোই দেওয়াল বেয়ে উঠতে পারছে। মানব হোক বা অতিমানব আক্রমণ, ছলনা এবং হিংসের মধ্যে দিয়ে সকলকেই যেতে হয়। পিটারও তার ব্যতিক্রম ছিলনা। তার অতি-ক্ষমতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং হিংসার শিকার হতে শুরু করে সে।
এই অনুভব পিটারকে আরো অনুভূতির মুখোমুখি করে। পিটার বুঝতে পারে, তার উপর কোন আক্রমণ হওয়ার আগেই সে তার আভাস পায়। চেষ্টা করে তা প্রতিহত করার। নিজের বৈজ্ঞানিক দক্ষতা দিয়ে পিটার একটা ছোট যন্ত্র তৈরি করে। মন্ত্রটির মাধ্যমে শত্রুর উপর আঠালো জাল নিক্ষেপ করতে থাকে পিটার পার্কার অর্থাৎ স্পাইডারম্যান। এক কিশোর কমিক সুপারহিরোর জন্ম হয় সেই সময়। আমাদের শৈশবের স্মৃতিকে আঠালো জালে ধরে রাখা কমিক চরিত্র।
তখন ষাটের দশক। কমিক হিরোদের জগতে জনপ্রিয় নাম ছিল ‘ফ্যান্টাসটিক ফোর’। এই কমিক সিরিজের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশ-ছোঁয়া। লেখক ও সম্পাদক স্ট্যান লি। তিনি তখন কমিক চরিত্রদের বয়সের গন্ডির বাইরে নিয়ে যেতে চাইছেন। এমন এক কমিক চরিত্র সৃষ্টি করতে চাইছেন যে হবে ছোটদের বন্ধু। সুপারহিরোর রূপে এলেও সে হয়ে থাকবে বন্ধুদের মত। সেই ভাবনা থেকেই স্কুল-ছাত্র পিটার পার্কার হয়ে ওঠে স্পাইডারম্যান।
প্রথমবার ১৯৬২ সালে ‘অ্যামেজিং ফ্যান্টাসি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় স্পাইডারম্যানের কাহিনী। এই চরিত্রকে রেখাদান করেছিলেন স্টিভ ডিটকো। মার্ভেল কমিক্সের অংশ স্পাইডারম্যান। স্পাইডারম্যানের আগে পর্যন্ত বেশীরভাগ কমিক সুপারহিরোর সঙ্গে পার্শ্ব-চরিত্র হিসেবে থাকত সাহসী কিশোরেরা। স্পাইডারম্যানের মাধ্যমেই মূল চরিত্রে আত্মপ্রকাশ কোনো কিশোর কমিক নায়কের। তারপর পাঠকের কাছে জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে ছিল না কোনো বয়সের গন্ডি। মার্ভেল কমিক্সের ‘বেস্ট সেলিং’ কমিক নায়ক ছিল স্পাইডারম্যান।
স্পাইডারম্যানের জনপ্রিয়তা তাকে পৌঁছে দিয়েছিল ভাষারও ঊর্দ্ধে। অনেক ভাষায় অনূদিত হতে থাকে এই নায়কের কাহিনী। সিনেমা, নাটকেও পরিচিত হতে থাকে স্পাইডারম্যান। এই চরিত্রের সহযোগী চরিত্ররাও সমান জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ন্যায়-অন্যায়ের বোধ শেখানো এই কমিক নায়ক অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। শুভশক্তির প্রতীক সে। সাদা-কালোর যুদ্ধে সে সাদার প্রতীক। তার সহযোগী চরিত্ররাও তেমন ভাবেই বিভক্ত। স্পাইডারম্যানকে আরো আকর্ষনীয় করে তুলেছে তার পোশাক। তার এই বিশেষ পোশাক অনেক শিশুর কাছেই উৎসবের পোশাক হয়ে উঠেছে একসময়।
শৈশব বা কৈশোর আসলে একটা পাহাড়ের মত সময়। বয়সের বিচারে নেহাতই হয়তো সামান্য। বেশ কয়েকটা বছর। কিন্তু আসলে আস্ত একটা স্মৃতি-ঘর। এই সব কমিক সুপারহিরোরা যেন সবসময় বসে থাকে সেই পাহাড়ে। আমাদের স্মৃতির পাহারাদার হয়ে।