১৯২৭ সাল। ইউনিভার্সাল পিকচারসের জন্য 'অসওয়াল্ড দা লাকি র্যাবিট' নামে এক কার্টুন চরিত্র সৃষ্টি করলেন ওয়াল্ট ডিজনি এবং তাঁর বন্ধু ইউবি আয়ার্ক। একটি অ্যানিমেটেড সিরিজের মুখ্য চরিত্র হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়েছহিল কার্টুন খরগোশটি। চার্লস মিন্টজও যুক্ত ছিলেন এই অসওয়াল্ড সিরিজটির সঙ্গে। হঠাৎ করেই মনোমালিন্য শুরু হয় ওয়াল্ট ডিজনি এবং চার্লস মিন্টজের মধ্যে। ডিজনির স্টুডিও দু'ভাগ হয়ে যায়। কিছু পুরনো কর্মীকে নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করেন ওয়াল্ট ডিজনি। নতুন কার্টুন চরিত্র সৃষ্টি করতে মনোনিবেশ করলেন। প্রাণীর আদলেই চরিত্র তৈরি করার চেষ্টা করলেন এবারও।
ইউবি আয়ার্ককে এই কাজের দায়িত্ব দিলেন ওয়াল্ট ডিজনি। একে একে সব রকম প্রানীদের আঁকার চেষ্টা চলল। কুকুর, বিড়াল, ব্যাঙ, ঘোড়া এমনকি গরুও। কাউকেই মনে ধরল না ওয়াল্ট ডিজনির। মিসৌরির স্টুডিওতে তাঁর ডেস্কে ঘুরে বেড়ায় একটা ছোট্ট ইঁদুর। তার আদলেই অবশেষে ইউবি আয়ার্ক আঁকলেন এক বিশেষ ইঁদুর। ছোট্ট মিষ্টি মিকি মাউস-এর জন্ম হল। ইঁদুর যার হাব-ভাব মানুষের মতন।
তার গায়ে জামা উঠল। বড় লাল রঙের জামা। হলুদ রঙের জুতো। তবে এসবই অনেক পরের কথা। প্রথমদিকে সাদাকালো নির্বাক অ্যানিমেশন ছবি হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেছিল মিকি। পরে রং দেওয়া হয়। কিন্তু চেহারা একই থেকে গেছে শুরু থেকেই। ফোলা, ফোলা গাল। গোল্লা গোল্লা চোখে কালো বিন্দু আর মিষ্টি নাক। এই পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। গোল বাঁধল হাতের আঙ্গুলের সংখ্যা নিয়ে। তিনটে নাকি চারটে আঙ্গুল? অবশেষে সংখ্যা চারেই একমত হয় সকলে।
১৯২৮ সালের মে মাসে প্রথমবার শর্ট ফিল্ম হিসেবে অ্যানিমেটেড মিকি মাউস দর্শকদের সামনে আসে। কিন্তু ব্যর্থ হয় তখন। কিছুদিন পরে আবার চেষ্টা করেন ওয়াল্ট ডিজনি। সেবারেও ছিলনা কোন ডিস্ট্রিবিউটার। অবশেষে 'স্টিমবোট উইলি' নামে একটা শর্ট ফিল্ম আসে মিকি মাউসকে নিয়ে। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি মিকি মাউসকে। বয়সের সীমা পেরিয়ে সে পৌঁছে যায় সকলের হৃদয়ে।
প্রথমে নির্বাক চলচ্চিত্র হিসেবে মিকি মাউসকে দেখা গেলেও পরে নানা কমিকস্ট্রিপে মিকি মাউসের গল্পগুলো প্রকাশিত হতে থাকে। পথ চলা যদিও শুরু হয়েছিল নির্বাক অ্যানিমেটেড কার্টুন ফিল্ম হিসেবে, কিন্তু পরে সবাক চলচ্চিত্রেও দিব্যি সাবলীল ছিল মিকি মাউস। রংচঙে দুষ্টু এই ইঁদুর নিমেষে মন ভালো করে দেওয়ার দাওয়াই। ওয়াল্ট ডিজনি নিজেই ভয়েজ দিতেন মিকি মাউসের জন্য। মিনি মাউস-এর ভয়েজও শুরুর দিকে তিনি নিজেই দিয়েছেন।
মিকি মাউস-এর বেশিরভাগ গল্পগুলোতে থাকে তার বন্ধু মিনি মাউস আর কুকুর প্লুটো। কখনো ডোনাল্ড ডাকও সঙ্গ দিয়েছে মিকি আর মিনিকে। মূল ভাষা ইংরেজি হলেও অন্য ভাষাতেও অনূদিত হয়েছে মিকি মাউস-এর গল্প। এইসব গল্পের অ্যানিমেটেড রূপের মিউজিক আকর্ষণ করেছিল সকলকে। ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত মিকি ছিল সাদা-কালো। তারপর তাতে রং লেগেছে। রঙিন অ্যানিমেটেড ফিল্ম মিকি মাউস প্রথম আত্মপ্রকাশ করেছে পঞ্চম একাডেমী পুরস্কার অনুষ্ঠানে। প্রযোজনা করেছিল 'টেকনিকালার প্রোডাকশন'। মিকিকে নিয়ে প্রথম সিনেমা ‘ফান্টাসিয়া’। পরে টেলিভিশন, তথ্যচিত্রেও পাওয়া গেছে মিকির উপস্থিতি। আর কয়েক বছর বাদেই শততম জন্মবার্ষিকী পালন করবে মিকি মাউস ও মিনি মাউস। তবে প্রিয় কার্টুন চরিত্রদের ক্ষেত্রে বয়স শুধুমাত্র একটা সংখ্যা, বয়স তাদের কখনই বাড়ে না।