এক দস্যি ছেলের গল্প: ডেনিস দ্য মেনেস

নিজের স্টুডিয়োর মধ্যে মন দিয়ে কাজ করছেন এক বাবা। হ্যাংক কেচাম। বাড়ির লাগোয়া স্টুডিয়ো। তিনি চেষ্টা করছেন এক কার্টুন চরিত্র সৃষ্টির। তাঁর বাড়িতে আছে এক দস্যি ছেলে। তার দুষ্টুমিতে অতিষ্ঠ সকলে। সামলাতে নাজেহাল হ্যাংক এবং তাঁর স্ত্রী। গত রাতেই সে ঘুমোতে গিয়ে তছনছ করেছে বাড়ির সব জিনিসপত্র। কিছুতেই তার চোখে ঘুম আসে না। সারাক্ষণ দুষ্টুবুদ্ধি। স্টুডিয়োয় কর্মরত হ্যাংককে চমকে দিয়ে প্রবেশ করল তাঁর স্ত্রী। 'ইয়োর সন ইজ আ মেনেস', অর্থাৎ 'তোমার ছেলে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে'। ছেলের দুষ্টুমি সামলাতে গিয়ে নাজেহাল মায়ের স্বগতোক্তি জন্ম দিয়েছিল সেদিন এক কমিক চরিত্রের। 'ডেনিস দ্য মেনেস'।

 

Dennis1

 

হ্যাংক কেচাম তখন একটি কমিক স্ট্রিপ তৈরীর চেষ্টা করছেন। মোটামুটি খসড়া করে কার্টুন চরিত্রটি আঁকা হয়ে গেছে। কি নাম দেওয়া হবে সেই চরিত্রের? বাড়িতে নিজের দস্যি ছেলের দুষ্টুমি দেখে সেই চরিত্রের নাম রাখা হয় 'ডেনিস'। কিন্তু বাকিটা কি হবে? শুধু ডেনিস নাম দিয়ে কি আর একটা কার্টুন চরিত্র সম্পূর্ণ হয়? অবশেষে সেই ছেলের দুষ্টুমির কথা শুনে নামকরণ সম্পূর্ণ হয়। 'ডেনিস দ্য মেনেস'।

 

Dennis2

 

১৯৫১ সালের ১২ মার্চ প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে এই কমিক চরিত্রের। লেখা, আঁকা দুই-ই হ্যাংক কেচামের। শুরুর হতে না হতেই অসম্ভব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই কমিক সিরিজ। প্রথমদিকে প্রায় ১৬টি খবরের কাগজে প্রকাশিত হতো এই কার্টুন চরিত্রের গল্প। 'সিন্ডিকেট' প্রকাশনা সংস্থা ছিল এর দায়িত্বে। ডেনিসের দুষ্টুমি ভরা কাণ্ডকারখানা এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে পরবর্তীকালে প্রায় ১০০০ টি খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছিল ডেনিসের গল্প। ৪৮টি দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল এই দস্যি ছেলের দুষ্টুমির কাহিনী। ১৯টি ভাষায় অনূদিত হয়েছিল এই কাহিনীগুলি।

 

Dennis3

 

বর্তমানে ডেনিসের গল্প এবং ছবি দুই-ই রচনা করেন তাঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট হ্যামিল্টন এবং রন ফার্ডিন্যান্ড। তবে ২০০০ সাল থেকে হ্যাংক কেচামের ছেলে স্কট কেচামের দায়িত্বে রয়েছে এই কমিক চরিত্রের প্রকাশ। সিনেমা, টিভি সিরিজ, নাটক সবক্ষেত্রেই আত্মপ্রকাশ ঘটেছে 'ডেনিস দ্য মেনেস'-এর। সাধারণত খবরের কাগজে একটি নির্দিষ্ট অংশে প্রতি সপ্তাহে প্রকাশিত হয় ডেনিসের গল্প। আর রবিবার? এক পাতা-ভর্তি দস্যি ছেলের গল্পে মন ভালো হয়ে যায় শৈশবের।

 

কানসাসের এক অঞ্চলের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে 'ডেনিস দ্য মেনেস'। কাল্পনিক ঠিকানা ২২৫১,পাইন স্ট্রীট। দুষ্টু ডেনিস মিশেলের বাবা হেনরি মিশেল আর মা অ্যালিস মিশেল। ডেনিস-এর সঙ্গী রাফ, তার প্রিয় কুকুর। এছাড়াও মাঝে মাঝেই ডেনিসের সঙ্গ দেয় তার পোষ্য বেড়ালরা।

 

Dennis4

 

ডেনিসের দুষ্টুমির সঙ্গে মিশে থাকে ছেলেমানুষি। একদিন ডেনিস শাস্তি পেয়েছে তার মায়ের থেকে। ডেনিসের সঙ্গী জোয়ি ফিরে গেছে বার কয়েক ডেকে। অবশেষে শাস্তির মেয়াদ ফুরোলে ডেনিস তার আদরের কুকুর 'রাফ'কে নিয়ে চলল তার বন্ধুকে খুঁজতে। তারপর খেলা শুরু হলো। খেলার শুরুতেই ডেনিসের বলে ওদের প্রতিবেশী 'মিস্টার উইলসন'-এর চায়ের কাপ কুপোকাত।

 

ডেনিস-এর গল্পে তার এই প্রতিবেশীর ভূমিকা অত্যন্ত মজাদার। দস্যি ছেলের যাবতীয় দুষ্টুমির অনেকখানিই এই প্রতিবেশীর ওপর দিয়ে যায়। অনেক সময় এরকম দুষ্টুমি করতে গিয়ে ডেনিসের ধরা পড়ে যাবার উপক্রম হয়। এই যেমন মিস্টার উইলসনের কাপ ভেঙে দেওয়ার পর ডেনিসের নজরে আসে যে তার বাবা ওই পথেই আসছে। কিন্তু বাবা কিছু করার আগেই ডেনিসের প্রিয় কুকুর তার পা বাড়িয়ে দেয়। ব্যাস বাবা চিৎপটাং। আর ডেনিস এই সুযোগে উল্টো দিকে দৌড় দেয়। এমন সব দুষ্টুমি ভরা এই দস্যি ছেলের গল্প আজও আমাদের মনের কাছাকাছি।

তাবে আমাদের শৈশবের স্মৃতির অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য 'ডেনিস দ্য মেনেস'-এর মত এমন একজন দস্যি ছেলের উপস্থিতি যথেষ্ট।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...