বিশ্বের প্রবীণতম সুপার হিরোঃ চাচা চৌধুরী

এক ভিন গ্রহের অধিবাসী যে মানুষ ভালোবাসে। তার প্রিয় খাবার পরোটা আর সুজি। সে পৃথিবীতে থেকে গেছে এই খাবারের লোভে। আর এক বুড়োর নিখাদ বন্ধুত্বের মায়ায়। কে সেই এলিয়েন? তার নাম হল সাবু

 

সাবু এই পৃথিবীর দুটো জিনিস ভালোবাসে। এক তার সঙ্গী বুড়ো। দুই পরোটা-সুজি। সঙ্গী-বুড়োটি আবার বুদ্ধিতে হার মানাতে পারে যেকোনও বয়সের মানুষকে। গিন্নীকে ছাড়া সে কাউকে ভয় পায় না। এই বুড়ো আমাদের ছোটবেলাকে কখনো সাবালক হতে দেয় না। তার নাম চাচা চৌধুরী। হাসির জগতের বয়োজ্যেষ্ঠ অভিভাবক।

 

প্রাণ কুমার শর্মা হিন্দি ভাষার সাহিত্যিক ও কার্টুনিস্ট। তাঁর সৃষ্ট চরিত্র চাচা চৌধুরী। চাচা চৌধুরীর মূল কাহিনীগুলোও হিন্দি ভাষায়। সাহিত্য জগতের সর্বগ্রাহ্য কমিক চরিত্র চাচা চৌধুরী। তাই হিন্দি ও ইংরেজি ভাষা ছাড়াও আরো আটটি অর্থাৎ মোট দশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছিল চাচা চৌধুরীর কাহিনী।

 

প্রাণ কুমার শর্মা এমন এক কমিক চরিত্র সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন যেখানে বয়সের গণ্ডি থাকবে না। কথায় আছে মানুষের বয়স্ক অবস্থা আসলে দ্বিতীয় শৈশব। তাই এই সাহিত্যিক সৃষ্টি করেছিলেন চাচা চৌধুরীর মত চরিত্র যা শিশুদেরও আকর্ষণ করবে, আবার এই দ্বিতীয় শৈশবের আওতায় পড়া মানুষগুলোকেও নির্ভেজাল আনন্দ দেবে।

 

chachachaudhary1

 

চাচা চৌধুরী গ্রাম্য চরিত্র। গ্রামের মোড়লের আদলে এঁকেছিলেন লেখক তাঁকে। তাঁর মাথায় পাগড়ি। হাতে লাঠি। লেখকের মতে 'চাচার মস্তিষ্ক কম্পিউটারের থেকেও দ্রুত গতিতে কাজ করে।' তিনি দুষ্টকে দমন করেন আর শিষ্টের পালনে খুশি হন।

 

১৯৭১ সালে প্রথম আত্মপ্রকাশ করে এই চরিত্র। হিন্দি পত্রিকা 'লোটপোট'-এর জন্য সৃষ্টি করা হয়েছিল এই চরিত্র, মূলত শিশু এবং কিশোর পাঠকদের জন্য। তবে আত্মপ্রকাশ করার পরে বয়সের গন্ডিতে থেমে থাকেনি চরিত্রের বিস্তৃতি। ‌সকল বয়সের মানুষের কাছেই চাচা চৌধুরীর কমিকসমগ্র সমানভাবে সমাদৃত।

 

কিছুদিন আগে শিশুদের 'সবচেয়ে পছন্দের কমিকস' এই বিষয় নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল । সমীক্ষাটি মূলত করা হয়েছিল ১০ থেকে ১৩ বছরের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে। দেখা গেছে তাদের মনের সবচেয়ে কাছের চরিত্র এই চাচা চৌধুরী।

 

সিনেমার জগতেও সাবলীল ভাবে নিজের ছাপ ফেলেছে এই কমিক চরিত্র। বিখ্যাত অভিনেতা রঘুবীর যাদব এই চরিত্রে যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছিলেন।

 

চাচা চৌধুরী অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং জ্ঞানী। তার সঙ্গী সাবুর আছে আশ্চর্য ক্ষমতা। বুদ্ধিমত্তা আর অত্যাশ্চর্য ক্ষমতা মিলে এঁরা দুজন সু-চিন্তা করেন। তাঁদের সেই ভালো কাজকর্মের সঙ্গে মিশে থাকে মজার খোরাক।

 

chachachaudhary2

 

বৃদ্ধ বয়সের দুষ্টুমি ভারি মজার। মিষ্টি। চাচার পোশাক আকর্ষণীয়। রঙিন ধুতি ও ফতুয়া। মাথায় রঙিন পাগড়ি। তবে বাড়ির বাইরে চাচা যতটা স্বাধীন, বাড়িতে তা নয়।

 

চাচার স্ত্রী বিনি চাচি চাচাকে সবসময়ে নজরে রাখেন। তিনি বাড়ির কর্ত্রী। রঙিন ছাপা শাড়ি, সঙ্গে চুলের বাঁধুনি। বেশ আকর্ষণীয় তাঁর চেহারা। প্রান কুমার শর্মা আকর্ষণীয় করেই এঁকেছিলেন চাচা চৌধুরী কমিক্স সিরিজের এই দুই প্রধান চরিত্রকে।

 

বেশ কয়েকটি কাহিনীতে চাচার যমজ ভাইয়ের দেখা পাওয়া গেছে। তার নাম চাজ্জু চৌধুরী। এমনকি এই ভাইকে একবার ভুল করে মঙ্গল গ্রহেও নিয়ে চলে গিয়েছিল এলিয়েনরা। চাচা চৌধুরীর একটি পোষ্য আছে 'রকেট'। বুদ্ধির গতি তার রকেটের মতই।

 

আর আছে চাচা চৌধুরীর এক বিশ্বস্ত সঙ্গী টিংগু মাস্টার। সে বোকাসোকা, সহজ, সরল। বামন। দুর্ভাগ্য তার পিছু ছাড়ে না। তাই মাঝে মাঝেই সে চাচা চৌধুরীর শরণাপন্ন হয় বিপদ মুক্তির জন্য।

 

এমন জাঁদরেল, বুদ্ধিমান, মজাদার মানুষের কোন শত্রু থাকবে না তাই কখনও হয়! গোবর সিং, ধামাকা সিং এবং রাকা। এরা ডাকাত। চাচাকে বিপদে ফেলাই এদের কাজ। কিন্তু বয়স এবং বুদ্ধিতে চাচা এদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। তাই বারে বারে এই দুষ্টু লোকগুলোকে শাস্তি দেন চাচা চৌধুরী।

 

লেখক প্রাণ কুমার শর্মাকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল যে তিনি কেন এরকম একটি চরিত্রের সৃষ্টি করলেন, তাঁর উত্তর ''প্রত্যেক বাড়িতেই বয়স্ক মানুষ রয়েছেন, তাঁরা জ্ঞানী, অভিজ্ঞ, আনন্দ করতে ভালোবাসেন, ছোটদের সঙ্গে তাঁদের যোগসুত্র তৈরির জন্য এইসব মজাদার কমিক সৃষ্টি করা।"

 

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় কমিক চরিত্র চাচা চৌধুরী আসলে আমাদের পরিবার আর শৈশবের সেই ঝাপসা হয়ে যাওয়া ছবি যা আমরা সারাজীবন খুঁজে বেড়াই।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...