কয়েকদিন ধরেই জ্বর এবং সাথে সর্দিকাশি। লক্ষণ খানিকটা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো। কিন্তু চিকিৎসকরা জানালেন, রোগটি ইনফ্লুয়েঞ্জা নয়। তাহলে রোগটি কি? রোগটি হলো, অ্যাডিনো ভাইরাসের আক্রমণে ঘটা একটি রোগ। অ্যাডিনো ভাইরাস হলো এমন একধরণের ভাইরাস যা সাধারণত চোখের লাইনিং, শ্বাসনালী, ফুসফুস, মূত্র সংবহনতন্ত্র প্রভৃতিকে আক্রমণ করে থাকে। এই রোগের সাধারণ লক্ষণগুলি হলো গোলাপি চোখ, ডায়রিয়া, সর্দি এবং কাশি। বড়দের তুলনায় শিশুরাই এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। দেখে গেছে, ১০ বছর বয়সের গন্ডি টপকানোর আগে প্রতিটি শিশু কোনো না কোনো টাইপের অ্যাডিনো ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। এই রোগটি প্রাথমিকভাবে খুব কম লক্ষণ প্রকাশ করলেও আক্রান্ত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই এই রোগের লক্ষণ ভালোভাবে প্রকাশ পায়। দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা বিশিষ্ট মানুষদের ক্ষেত্রে এই রোগটি যথাসম্ভব চেপে বসে। তাই বড়দের তুলনায় ছোটদের ইমিউন সিস্টেম ততটা শক্তপোক্ত না হওয়ার কারণেই শিশুরা এই ভাইরাসের দ্বারা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
এই রোগটি খুবই ছোঁয়াচে প্রকৃতির হয়ে থাকে। সাধারণত সামার ক্যাম্প, টিউশন ক্লাস, স্কুল এই সব জায়গায় একটি বাচ্চা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বাকিদেরও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে এই রোগটি ছড়ায়। এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে করমর্দনের ফলে বা আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা কোনো জিনিস ছোঁয়ার ফলেও এই রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। রোগের প্ৰাথমিক লক্ষণগুলি হলো, গলা ব্যাথা, নাক দিয়ে অনবরত জল পড়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, কাশি, কানের ইনফেকশন, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, এবং জ্বর। এই ভাইরাসের আক্রমণের ফলে যে কাশির উপদ্রব বাড়ে তা খানিকটা শুনতে হুপিং কাশির শব্দের মতো হয়ে থাকে। এর ফলে চোখে যে ইনফেকশন তৈরী হয় তাকে কনজাংটিভাইটিস বলা হয়ে থাকে। এই ইনফেক্শনটি খুবই মারাত্মক আকার নিয়ে ফেলে কিছুদিনের মধ্যেই।
এই রোগটি সাধারণ নিউমোনিয়ার মতো লক্ষণ প্রকাশ করার ফলে প্রথমেই এটি কি রোগ সেটা বোঝা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। সাধারণত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই রোগ নিজে থেকে নির্মূল হয়ে গেলেও কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটি সিরিয়াস ইনফেকশনের আকার নিয়ে থাকে। সেইসব ব্যক্তির নানা রক্তপরীক্ষা, মূত্র পরীক্ষা, বুকের এক্স রে প্রভৃতির মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে। এই রোগের আলাদা কোনো বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। সাধারণত বাড়িতেই এই রোগের ট্রিটমেন্ট করা যেতে পারে। এর জন্য প্রচুর রেস্ট, পর্যাপ্ত পরিমান পানীয় জল পান করা উচিত। জ্বরকে নাগালের মধ্যে রাখতে অ্যাসিটোমিনোফেন জাতীয় ওষুধ খাওয়া উচিত। লক্ষণের উপর নির্ভর করে পরবর্তীকালে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।