মুম্বইয়ের ঘিঞ্জি বসতিতে বেড়ে ওঠা। ছোটবেলাটা সেখানেই। পাঁচ ভাইবোনের সংসার। দুখ-বিষাদী বাবা আর অভাবী মা। টানাটানির সংসার। তবু টাকা জমত গোপন বাক্সে। সিনেমা দেখতে হবে যে!
অথচ এরকম হওয়ার কথা ছিল না। বাবা ছিলেন ইঞ্জিনিয়র। ইন্ড্রাস্ট্রি ছাড়ার আগে প্রায় চল্লিশটি হিন্দি ছবিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। মা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী। অভিনয়ও করতেন। বোম্বাইয়ের আপ মার্কেট কার্টার রোডে নিজেদের বাংলোতে থাকতেন বাবা-মা। স্বচ্ছল পরিবার। কিন্তু লক্ষ্মী বড়ই চঞ্চলা। আহুজা পরিবারের সুখের দিনে মেঘ ঘনাল একদিন। তাও আবার গৃহকর্তা অরুণ আহুজার সিদ্ধান্তের জেরে। হঠাৎ ঠিক করলেন ছবি বানাবেন। লগ্নিও করলেন। ছবির ভরাডুবি ঠেকানো গেল না। ফল হল মারাত্মক। দাম দিতে হল গোটা পরিবারকে। ধার-দেনায় ডুবে ছাড়তে হল বাংলো।
অভিজাত কার্টার রোড থেকে ঠাঁই নিতে হল ভিরার-এ। মুম্বইয়ের এক ঘিঞ্জি বসতিতে। সেইখানেই জন্ম গোবিন্দ অরুণ আহুজার।
বাবা অরুণ আহুজা আর মা নির্মলা দেবীর জীবনের রঙিন দিন সে দেখেনি। রংহীন ফ্যাকাশে জীবনের সাক্ষী সে। তার ফাটাবল আর গোল্লাছুটের ছোটবেলায় ম্যাজিকের মতো টানত সিনেমা। যে কোনওভাবে পৌঁছতেই হবে হলে। কী এক নেশার টান। বয়স যখন বছর পনেরো তখন যেতে শুরু করল রাজশ্রী স্টুডিয়োতে। একবার যদি শিকে ছেঁড়ে সিনেমায়। ট্রায়ালের সুযোগও এল কয়েকবার। প্রতিবারই বাতিল! বয়সটা যে বড্ড কম!
তবে হাল ছাড়েনি সে। স্টুডিয়োপাড়ায় যেতে আসতে অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে যেত। তাই বাড়ি ছেড়ে চলে এল মামার কাছে। স্ট্রাগল তার চলছেই।
সুযোগও এল একদিন। সালটা ১৯৮৬। ছবির নাম ‘তনবদন’। অন্য মতে ‘ইলজাম’। এখান থেকেই শুরু অভিনেতা গোবিন্দার জার্নি। এই জার্নি আসলে জিরো থেকে হিরো হওয়ার।
গোবিন্দার নিজের কথায়, “জীবনে টিকে থাকার।” বলিউডে তাঁকে আর তাঁর পরিবারকে টিকে থাকার মাটি দিয়েছে।
দুরন্ত নাচ, হাসি, নিখাদ মজা তাঁর সিনেমার বিষয়। গোবিন্দাকে মানুষ পর্দায় খোঁজে হাসির খোঁজে। তিনি যতটা কমেডিয়ান ততটাই সিরিয়াস অভিনেতা। যতটা ভালো ওয়েস্টার্ন কোরিওগ্রাফিতে ততটাই ভাল শাস্ত্রীয় নৃত্যে। সরোজ খানের ছাত্র ছিলেন।
গান গাইতে পারেন। গান লিখতেও পারেন। নিজের জন্য নিজের ভালোবাসায় কলম চলেছে। প্রায় একশো থেকে দেড়শোর বেশি গান লিখেছেন।
প্রতিটা জন্মদিনে সব আনন্দের মধ্যেও সবচেয়ে বেশি অনুভব করেন তাঁর মায়ের না থাকা। মায়ের জন্য মন্দিরে যান। একা একা। সবটুকু পাওয়া আর না পাওয়া নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার পাঠ পেয়েছেন তাঁর থেকেই। নিখাদ হাসির মধ্যে দিয়ে দর্শকদেরও দিতে চেয়েছেন তার ভাগ…
গোবিন্দ অরুণ আহুজা ওরফে গোবিন্দার জন্ম হয় আজকের দিনে। ১৯৬৩তে। আজ ৫৮ বসন্তে পা দিলেন।