মালতীর আড়ালে লক্ষ্মীর গল্প

“ ভিতরের সৌন্দর্য আর কঠোর পরিশ্রম আসল কথা, কিন্তু বাস্তব অন্য কথা বলে। খুব কম মানুষই ভিতরের সৌন্দর্যকে গুরুত্ব দেয়। যোগ্যতা, কাজ করার ক্ষমতা এই সব কিছুর বাইরে একজন কর্মীকে কেমন দেখতে সেটার ওপরেই সব জোর গিয়ে পড়ে’’।

এই কথাগুলো যাঁর, তাঁর দিকে এখন  সারা ভারতের নজর। তাঁর জীবনের গল্প ধরা পড়েছে সেলুলয়েডে। এই বছরের মাচ অ্যায়েটিং ফিল্ম। ‘ছপক’।

ছবিতে এক অ্যাসিড আক্রান্তের ভূমিকায় দেখা যাবে বলিউড ডিভা দীপিকা পাডুকনকে। ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে ছবির ট্রেলার আর পোস্টার। তাঁর অ্যাসিডে ঝলসে যাওয়া মুখ দেখে চমকে গিয়েছে আসমুদ্র হিমাচল।

ছবি জুড়ে দীপিকা হয়ে উঠেছেন মালতী। মালতীর নামের আড়ালে এ গল্প আসলে লক্ষ্মীর। লক্ষ্মী আগরওয়াল।  

দিল্লির খান মার্কেটে ২০০৫ সালে যখন তার ওপর অ্যাসিড হামলা হয় লক্ষ্মীর বয়স তখন ১৫ বছর। বন্ধুর দাদা ৩২ বছর বয়সী  গুড্ডু ওরফে নাঈম খান বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। সেই প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায়  প্রতিশোধ নিতে লক্ষ্মীর ওপর অ্যাসিড আক্রমণ করে সে।

laxmi

লক্ষ্মীর কথায়, ‘যখন ঘটনাটা ঘটে তখনও আমি বুঝতে পারিনি যে ঠিক কী ঘটে গেল! আমি তখনও শকে। অ্যাসিড হামলার দু’মাস পরেও আমি আয়নার সামনে আসতে পারিনি। তাকাতে পারিনি নিজের মুখের দিকে’।  

প্রায় তিনমাস পর আয়নার মুখোমুখি দাঁড়াবার সাহস পান। কিন্তু ফিরে আসার লড়াই সহজ ছিল না। আতঙ্ক, ভয়, ট্রমা এমন জায়গায় যায় যে আত্মহত্যার কথায় ভেবেছিলেন অনেকবার। কিন্তু বাবা-মার মুখ ফিরিয়ে এনেছে মৃত্যুর কিনারা থেকে।

 আশপাশের মানুষজন, পাড়া প্রতিবেশি বিশেষ করে মহিলারা তাঁকে নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলত। পরিবারকেও ছেড়ে কথা বলত না।

লক্ষ্মীর বদ আচরনই অ্যাসিড হামলার মূল কারণ, এই ছিল তাদের বক্তব্য।

তবে লক্ষ্মীর বাবা-মা তাঁকে সাহস জুগিয়েছিল। বেশ কয়েকবার সার্জারি করতে হয়েছে। ২০ লক্ষ টাকা খরচ হয় তার চিকিৎসায়। জমানো টাকা আর বাবার অফিসের সহকর্মীদের সাহায্যে চিকিৎসার খরচ চলত।

 দ্বিতীয়বার জীবন পাওয়া লক্ষ্মী অপরাধীদের বিচার চেয়েছিল। হুমকি আর চাপের মুখে সে কাজ সহজ ছিল না। তবু থেমে যাননি।  

৪ বছর ধরে ট্রায়াল চলে। লক্ষ্মীর ওপর অয়াসিড হামলার শাস্তি হেসেবে গুড্ডুর ১০ এবং তার বোন রাখির ৭ বছরের জেল হয়।

ভারতে অ্যাসিড আক্রমণ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ লক্ষ্মী আগরওয়াল। ২০১৩ সাল থেকে স্টপ অ্যাসিড অ্যাটাক ক্যাম্পেইন শুরু হয়।

২০০২ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ৮৮ শতাংশ অ্যাসিড হামলার ঘটনায় ৭২ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে মহিলারা  সে ঘটনাগুলোর  নেপথ্যে শুধুই পুরুষ। ২০১১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ, ভারত এবং কম্বোডিয়া সারাবিশ্বের অ্যাসিড হামলার নিরিখে শীর্ষস্থানে আছে। ভারতে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিড হামলা হয় উত্তরপ্রদেশে, বছরে প্রায় ৬১টি। এর পরেই পশ্চিমবঙ্গ।

অ্যাসিড সুলভ এবং সস্তা হওয়ার কারনে। একটা মানুষকে সারা জীবনের জন্য বিক্ষত করতে মাত্র তিরিশ টাকাই যথেষ্ট। অ্যাসিডের বিক্রি নিষিদ্ধ করার জন্য ২৭,০০০ হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ করে ভারতীয় সর্বোচ্চ আদালতে গণ আবেদন করেন। 

২০১৪ সালে লক্ষ্মী ইন্টারন্যাশনাল উওমেন অফ ক্যারেজ অ্যাওয়ার্ড পান। তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন মিশেল ওবামা।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...