আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে ওঠা আলোর বেনু ডাক দিয়ে যায় ঘুম থেকে ওঠার। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় মহালয় শুনতে শুনতে কড়া দুধের চায়ে বিস্কুট ডুবিয়ে শুনি সেই গভীর আহ্বান। পারিজাত ধোয়া সকালের সদ্য ঝরা পাতায় হিমের পরশে হাল্কা চাদর বলে দেয় পুজো আসতে আর বেশি দেরি নেই, মা আসছে। সেই ছোটবেলায় রথের মেলা থেকে একটা একটা করে দিন গোনা। হাতে হাফ ইয়ারলির রুটিন পেলেই আগে দেখে নেওয়া কবে শেষ। বাড়ি এসেই ক্যালেন্ডার মিলিয়ে দেখা যে ঠিক মহালয়ের আগেই পরীক্ষা শেষ, তাহলে বোধহয় সাপের পাঁচ পা দেখা তার সঙ্গে সমতুল্য হয়ে উঠত। অন্তত দু-মাস আগে থেকেই মনে কল্পনার পেঁজা তুলো মেঘের আনাগোনা। খুঁটি পুজো দাদা আর কাকুদের পাড়ার থিমের আলোচনা, পুজোর চাঁদার বিলে লেখা দুর্গাপুজোর নির্ঘণ্ট সবেতেই একটা ভাব আস্তে আস্তে বেড়ে উঠত, মা আসছে। মেঘে মেঘে বেলায় বেড়ে উঠলাম। জীবন নিয়ে গেল স্কুল থেকে কলেজে। হোস্টেল লাইফ, কলেজ, প্রোজেক্ট এসবের মাঝেও একটা গন্ধ ঠিক শরতের বাতাসে ভেসে আসতো, যেটা চিনে নিতে কোনদিন ভুল হয়নি। কাশফুলের লম্বা মাথা চিড়িয়াখানার জিরাফের মতই মনে উঁকি দিয়ে বলত, মা আসছে। তারপর সেই কলেজ, ইউনিভার্সিটি শেষ। শুরু হল প্রবাস জীবনের পালা। ওলন্দাজ মাটিতে পা রাখলাম নভেম্বর এ একটা পুজো দেখে। গোটা একটা বছর কাটিয়ে যখন আবার সেই প্রবাস-শরৎ এল, এক সকালে দৌড়তে বেড়িয়ে দেখলাম সেই চিরশুভ্র কাশফুল, সেই মন ভালো করে দেওয়া গন্ধ, সেই অনুরণন। প্রবাস দেশে, মা এর আদর একরকমই রইল তার এই ছেলের জন্য, যেমনটা সব সন্তানের জন্য মার থাকে। আর তাই এই হল্যান্ড দেশও তার উত্তর সমুদ্রের হাওয়ার আঁচলে সুদুর গ্রনিংগেন শহরে বয়ে নিয়ে এল আপামর বাঙ্গালীর এক অখণ্ড বাঙ্গালিয়ানা, মা আসছে...
(Bengali Community of The Netherlands 'হইচই'-এর তরফে প্রবাসে বসে প্রবন্ধটি লিখেছেন: অরুনেশ রায়)
বিশদে জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্ক-