মায়ের মৃত্যুর পর বাড়ি থেকে বের করে দেন বাবা, সেই মেয়ে আজ সাফল্যের শীর্ষে

বিহারে সিবিএসসির দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় তার প্রাপ্ত গড় নম্বর ৯৯.৪। সংস্কৃত আর বিজ্ঞানের বিষয়ে ১০০। অঙ্কে ৯৯। ইংরেজিতে ৯৯। এমন সোনালী ফলাফলে চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছে বিহারের শ্রীজা।

এ বছর সিবিএসসি পরীক্ষায় বিহার থেকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে টপার হয়েছে সে। গোটা বিহারে এই মুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে শ্রীজা। মিডিয়া থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

আসলে, শুধুমাত্র পরীক্ষার মার্কশিটে সাফল্যের কারণে শিরোনামে জায়গা করে নেয়নি সে, শ্রীজা সাফল্য পেয়েছে তার জীবনের কঠিন লড়াইয়েও।

বিহারের এই কন্যা তার সাফল্য উৎসর্গ করেছে তার দিদিমা আর দাদুকে। যাঁরা না থাকলে ভেসে যেত তার জীবন।

শ্রীজার বাবা কন্যাসন্তান চাননি। শ্রীজার যখন চারবছর বয়স তখন সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যু হয় তার মায়ের। দ্বিতীয় শিশুও মেয়ে। সেই রাগে দুই দুধের শিশুকেই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

লোকমুখে সেই খবর পেয়ে দুই শিশুকে উদ্ধার করে নিজেদের কাছে নিয়ে যান শ্রীজার দিদিমা-দাদু। অর্থকষ্ট, হাজার রকম ঝড়-ঝাপটা সামলে বড় করে তোলেন দুই মেয়েকে। তাদের বাবা কোনও যোগাযোগ রাখেননি।

সেই শ্রীজা আজ মেধায় নজর কেড়েছে। শুধু নিজের রাজ্য বিহারের নয়, গোটা দেশের। তার কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। স্কুলের শিক্ষকরাই ছিল তার প্রধান বল ভরসা। নিজের পরিশ্রম আর মেধার জোরে সব বাধা কাটিয়ে সাফল্যের পথ পেয়েছে সে। ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় শ্রীজা। তার লক্ষ্য চেন্নাই আইআইটি।

কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিল শ্রীজা? এই প্রশ্নের উত্তরে সে জানিয়েছে, দিনের মধ্যে যতটা সময় পাওয়া যায় ততক্ষণই পড়ত সে। এক মুহুর্ত নষ্ট করেনি। এমনও দিন গিয়েছে বই থেকে মুখ তোলার সময় পায়নি। তার প্রিয় বিষয় অঙ্ক। কিন্তু অঙ্কে ৯৯ তাকে বেশ কষ্ট দিয়েছে। প্রিয় বিষয়ে এমন ফল সে আশা করেনি। তবে সে যে বিহার-সেরা হবে এমনটাও আন্দাজ করতে পারেনি। নিজের জন্য নিজের তাগিদে তাকে ভাল ফল করতেই হবে, এই টুকুই সে কেবল জানত।   

নাতনির এমন সাফল্যে প্রচন্ড খুশি দিদিমা শ্রীজাকে তিনি মাতৃস্নেহে মানুষ করেছেন। মেয়ে ছাড়া আর কোনওদিন কিচ্ছু ভাবেননি। সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “ আজ আমাকে মানুষ মেয়ের জন্য চিনছে, এর চেয়ে খুশির ার কী হতে পারে, আফসোস হয় সেই বাবার জন্য, যে দুধের মেয়ে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল একদিন…”

মেয়ের এমন সাফল্যের পর শ্রীজার দাদু ও মামার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন তার বাবা। মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে চান তিনি। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে সাফল্য এলে জীবন কখনও সিনেমার মতো নাটকীয় হয়ে ওঠে। শ্রীজার আজকের বাস্তব অন্তত সেই কথাই বলছে।    

     

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...