কেঁপে উঠল মঙ্গল

রহস্যে আবৃত এক গ্রহ আর তাকে নিয়েই জল্পনা তুঙ্গে| বিগত ৫০ বছর ধরে এই গ্রহ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা| তারপরেই এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ| সেই গ্রহ থেকেই ভেসে এলো এক চাপা কান্নার শব্দ| সেই কান্নার শব্দ নাড়া দিয়ে গেল গোটা মহাকাশকে| এই ঘটনা আবার একদিন বা দুইদিনের নয়| টানা চারদিন ধরে শোনা যেতে থাকে এই গোঙানির শব্দ| বরাবরই রহস্যে মোড়া লাল গ্রহ মঙ্গল| এবার সেই মঙ্গলেই ঘটল এক ভয়াবহ ভূমিকম্প| যার ফলে পৃথিবীতে বসে মঙ্গলের গোঙানির আওয়াজ শুনতে পেলেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা|

দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে শুধুমাত্র এই ঘটনা যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় নাম দেওয়া হয়েছে মার্সকোয়েক’| আর্থকোয়েকের ন্যায় মার্সকোয়েক আর তাতেই মহাকাশ বিজ্ঞানে খুলে গেল নতুন দরজা| লাল গ্রহ যে এখনো মরে যায়নি তারই প্রমান এবার মিলল হাতে নাতে| বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মঙ্গলের অন্দরমহলে ধীরে ধীরে পরিবর্তন ঘটছে| পৃথিবীর বুকে ভূমিকম্প ঘটলে যেমন সারা পৃথিবী দুলে ওঠে, কেঁপে ওঠে পাহাড়, নদী সেরকমই ভূমিকম্প লাল গ্রহের বুকেও ঘটেছে বলে জানা গেছে| আর তার ফলেই একধরনের গোঙানির মতো শব্দ ভেসে এসেছে মঙ্গলযান ইনসাইটের কানে| ইনসাইটের ল্যাডারে থাকা ‘সিসমিক এক্সপেরিমেন্ট ফর ইন্টেরিয়র স্ট্রাকচার’ বা সংক্ষেপে ‘সিস’ যন্ত্রটিই প্রথম মঙ্গলের অন্দরমহল থেকে আসা কান্নার শব্দ রেকর্ড করে পাঠায় আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা-তে| নাসার কার্যালয়ে সেই শব্দ মানুষের শ্রবণযোগ্য করে তোলা হয়| জানা গেছে, সর্বপ্রথম মঙ্গলের কান্নার শব্দ শোনা যায় মার্চ মাসে| মার্চ মাসের ১৪ তারিখে প্রথম এই শব্দ শোনেন বিজ্ঞানীরা| এতেই শেষ নয়| এর পরে এপ্রিল মাসের ৬, ১০ এবং ১১ এই তিনদিনেও মঙ্গল থেকে কান্নার শব্দ শোনেন বিজ্ঞানীরা| বিজ্ঞানীরা জানান,  এই চারদিনের মধ্যে ৬ই এপ্রিল যে শব্দ পাওয়া গেছে সেই শব্দটিই এখনো পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে স্পষ্ট শব্দ|

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই ঘটনা সত্যিই এক অভূতপূর্ব ঘটনা| এই ঘটনা যে ভবিষ্যতে মঙ্গলের সম্পর্কে আরও অজানা কথা জানতে সাহায্য করবে তা স্পষ্ট বিজ্ঞানমহলে| বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন,  মঙ্গলে ঘটা এই কম্পন যেহেতু তরঙ্গ তাই এটি ধীরে ধীরে আরও প্রসারিত হবে ফলে মঙ্গলে বারবার কম্পন হতে থাকবে আর বারবার কম্পন হলে ইনসাইটের ‘সিস’ যন্ত্র সেই শব্দ আবারও তুলে নাসায় পাঠাবে ফলে আরও একধাপ এগোবে মঙ্গল অভিযান| বিজ্ঞানীদের আশা, এইভাবেই ধীরে ধীরে মঙ্গল সম্পর্কে নানা জানা অজানা কথা যেমন মঙ্গল কবে জন্মেছিল, কিভাবে তার জন্ম হয়েছিল, এই গ্রহের অভ্যন্তরে কি কি আছে সবটাই জানা যাবে|

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, লাল গ্রহের অভ্যন্তরের তাপমাত্রা দেড় হাজার সেলসিয়াসেরও বেশি| আর এর ফলেই গ্রহের অভ্যন্তরে থাকা ক্রাস্ট সেই জলন্ত লাভার মধ্যে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে আর এর ফলেই কেঁপে উঠছে মঙ্গলের পিঠের নিচের দিকটি| প্রতি ভূমিকম্পের ফলে যেমন পৃথিবীতে দিন ও রাতের আয়ু একটু করে কমতে থাকে সেরকম ঘটনা ঘটে মঙ্গলেও| তাই জন্মের পর কতটা জোরে এই গ্রহ ঘুর্নায়মান ছিল তার কক্ষপথে তার হদিসও এবার পাওয়া যাবে এই কম্পনের ফলে, জানালেন মহাকাশবিজ্ঞানীগণ|   

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...