রাজ্যে তথা শহরে ডেঙ্গুর আক্রমনে প্রতি বছরই প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হন। বেশ কিছু মানুষের মৃত্যুও ঘটে। গত বছর এই হার একটু কম থাকলেও একেবারে নির্মূল করা যায়নি। তাই এবারে অন্যরকম ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। পয়লা জুলাই থেকে টানা চার মাস ডেঙ্গুর চিকিৎসায় গোটা রাজ্যে নজরদারি চালাবে স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক টিম। কলকাতা ও তার পার্শ্ববতী ছ'টি জেলায় ঘুরবে স্বাস্থ্যভবনের বিশেষ টিম। বাকি অন্যান্য জেলাগুলির সমস্ত সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা কেমন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখবে সেই সব জেলার নিজস্ব স্বাস্থ্য টিম। সম্পূর্ণ কাজ যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, তার জন্য এই কাজে সম্পর্কযুক্ত সকলকে নিয়ে তৈরী করা হয়েছে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রূপ। স্বাস্থ্য দফতরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে গত মঙ্গলবার।
সূত্রের খবর, ডেঙ্গুর চিকিৎসার খবরাখবর জানতে সম্প্রতি স্বাস্থ্য ভবন কলকাতা এবং লাগোয়া ২২টি সরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথম ধাপে ১২টি হাসপাতাল পরিদর্শন করা হয়। আজ ২৬জুন থেকে শুরু হচ্ছে আরও ১০টি হাসপাতাল পরিদর্শন। এই পরিদর্শন চলবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত। তারপর ১লা জুলাই থেকে শুরু হবে ভিজিট এবং উপযুক্ত নজরদারি।
স্বাস্থ্য দফতর থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, ডাক্তার ও নার্সদের একাধিক প্রতিনিধিদল গত ক'দিনে কলকাতার দুটি মেডিক্যাল কলেজ সহ ১২টি সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা কেমন হচ্ছে, কোথায় কোথায় খামতি রয়েছে খতিয়ে দেখছে এবং তার ভিত্তিতে রিপোর্ট তৈরী করে দিচ্ছে। পরবর্তীতে হেলথ টিম পরিদর্শন করার সময় সেই সব খামতিগুলি আদৌ ঠিক কি না, অথবা খামতি কেন থাকছে, তা বিচার করে সেগুলি দূর করার দিকে বিশেষ নজর দেবে।
উক্ত নজরদারি করার সময় কি কি বিষয়ে খামতি দেখা দিয়েছে, তা দেখা যাক- ডেঙ্গু রোগীর তাপমাত্রার তালিকা ঠিক মতো মানা হচ্ছেনা। প্লেটলেট কাউন্ট দিনে দু'বার দেখার কথা। তা হচ্ছেনা, কোনওরকমে দায়সারা গোছের কাজ হচ্ছে। বহু হাসপাতালে রোগীর তুলনায় অ্যালাইজা মেশিনের সংখ্যা কম, তার ফলে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। একাধিক সরকারি হাসপাতালে অপ্রশিক্ষিত নার্সদের দিয়ে রোগী দেখাশোনার কাজ চলছে। ওয়ার্ডে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীদের বেশ কিছু জায়গায় ঠিকমতো ফ্লুইড দেওয়া হচ্ছেনা। রোগীর বেড হেড টিকিট বা বিএইচটি পর্যন্ত ঠিকমতো দেখা হচ্ছেনা।
উপরোক্ত বিষয়গুলিকে যথাসম্ভব খতিয়ে দেখা হবে পরবর্তী পরিদর্শনে। দফতরের একাধিক পদস্থ সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, যেসব ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের অভাবে এইসব সমস্যা হচ্ছে, সেসব ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে পাশাপাশি নিজেদের গাফিলতির জন্য যেন কোনোরকম সমস্যা তৈরী না হয়, সে বিষয়েও স্বাস্থ্যকর্মীদের বোঝানো হবে এবং প্রয়োজনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।