অতঃ বনবিবি কথা

বিসর্জন সিনেমার শুরুতে একটা গান  ছিল মনে পড়ে? "গঙ্গা যমুনা সরস্বতী ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর আল্লাহ রাসূল পীর ফকির দেব দৈত্য পিশাচচর"

হয়তো সিনেমার দৃশ্যটিও আপনাদের মনে পড়ছে, কিন্তু বনবিবির সাথে এর যোগ কোথায়? ‌আছে, আছে গ্রাম বাংলার লোকসংস্কৃতি কে এই গানের মধ্যে দিয়েই জীবন্ত করে দিয়ে গেছেন মাটির কাছের মানুষ  কালিকাপ্রসাদ।

       জলে জঙ্গলে ভরা সুন্দরবন শুধু বাংলা নয় সারা ভারতবর্ষের বিস্ময়, এই বদ্বীপ সম্পর্কে একটি বিশেষণ‌ই যথাযথ ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর'। এই সুন্দরবন আর তার সমস্ত প্রাণীকূলের রক্ষাকারীনি হলেন বনবিবি। দেবী একাধারে সনাতন ধর্মের দেবী, আবার ইসলাম ধর্মাবলম্বী দের পিরানী|। সুন্দরবনের এবং এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মধু সংগ্রহকারী, জেলে আর কাঠুরেরা বাঘের উপদ্রব থেকে বাঁচতে বনবিবির অর্চনা করেন। সুন্দরবনের রহস্যময় অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ দক্ষিণরায় বা রায়্মনি, হিংস্র বাঘের রূপধরে মানুষের উপর হামলা করেন আর বনবিবি আর্ত মানুষ কে দক্ষিণরয়ের হাত থেকে রক্ষা করেন। বাংলার মধ্যযুগের ইতিহাস রচয়িতা সতীশ চন্দ্র মিত্র তাঁর যশোহর-খুলনার ইতিহাসে জানান ১৫০০ খ্রীষ্টাব্দে সুন্দরবন এলাকায় দক্ষিণ রায়, বণিক ধোনাই ও মোনাই, গাজী ইত্যাদির অস্তিত্বের কথা।দেবী বনবিবি, ইব্রাহিম নাম এক আরববাসীর সন্তান| ইব্রাহিম তাঁর স্ত্রীকে গুলাল বিবি সতিনের প্ররোচনায় সুন্দরবনে পরিত্যাগ করেন। গভীর জঙ্গলে জন্ম নেন বনবিবি। রাজা দক্খিন্রায় ছিলেন অধুনা বাংলাদেশের যশোরস্থিত ব্রাহ্মন নগরের রাজা মুকুট রায়ের অধীনে ভাটির রাজা। লোককথায় কথিত আছে যে রায়মণির সঙ্গে বনবিবির বহুবার সংঘর্ষ হয় এবং শেষে দক্ষিণ রায় পরাজয় বরণ করে নেন এবং সন্ধি প্রস্তাব দেন।এই লোককথা গুলিতে এই যুদ্ধের কাহিনী বা জয় পরাজয় আসলে প্রতীকী, এখানে, দক্ষিণ রায়ের পরাজয়ের অর্থ আসলে হল অপশক্তির পরাজয়। ভারত এবং বাংলাদেশের জঙ্গলমহলের এক ব্যাপক অঞ্চলের লোকসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেন বনবিবি। মঙ্গলকাব্যের যুগের অন্যান্য লোকায়ত দেবদেবীর মতো বনবিবির‌ও মাহাত্ম্যগাধা লেখা হয়েছিল, সেই দেবীমাহাত্ম্যের নাম "বনবিবির জহুরানামা"।খুব স্বাভাবিক ভাবে মঙ্গলকাব্যের অনুকরণে এই কাব্য রচিত হলেও সময়ের দাবী মেনে আল্লাহ রাসূল, মক্কা ইত্যাদিও উল্লেখিত হয়েছে এই কাব্যে। সহজ মানুষদের মনের কথা আকাঙ্ক্ষা বিশ্বাস অনুচ্চারিত অনুভূতিই ছিল এই কাব্যের অন্তরপিন্ড।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...