উচ্চ মাধ্যমিকের পর আর বেশি পড়াশোনা নিয়ে জীবনে এগোতে পারেননি। তবে, ছোট্ট বাচ্চাদের সেই শিক্ষাটা দিতে চেয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে সেই চেষ্টায় সফল হতে পেরেছেন। উচ্চ মাধ্যমিকের পর সংসার টানতে শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি। তাই রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতে শুরু করে। সেই কাজ করেই এলাকার শিশুদের পড়াতে স্কুল খুলেছেন কুলতলির দেউলবাড়ির বাসিন্দা পুলক মণ্ডল।
প্রত্যেক পড়ুয়ার কাছ থেকে দিনে এক টাকা করে নিয়ে গত দু বছর ধরে চলছে স্কুল। এই স্কুলের পোশাকি নাম ‘স্বামীজি শিশু পাঠশালা’। তবে সেই স্কুল গোটা এলাকায় ‘এক টাকার পাঠশালা’ নামেই পরিচিত।
২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন পুলক। তারপরে নিজের ইচ্ছা থাকলেও অভাব-অনটনের জন্যে কলেজে ভর্তি হতে পারেনি সে। তাই সংসার চালাতে ঢুকে পড়েন কাজে। স্কুলে পড়াকালীনই এলাকার শিশুদের পাশে দাঁড়ানো শুরু। লকডাউনে সেই কাজ আরও বাড়ে যায়। এলাকার প্রচুর শিশুকে শিক্ষা সামগ্রী, বই খাতা দিয়ে সাহায্য শুরু করেন তিনি।
কিন্তু পরে বুঝতে পারেন বই খাতা দিয়ে শিশুদের পড়াশোনায় মন বসানো যাবে না, তাই সিদ্ধান্ত নেন একটা স্কুল খোলার। নিজের আনাজ ক্ষেতের এক কোনে দরমার বেড়া দিয়ে তৈরি করেন সেই পাঠশালাটি। তারপর ২০২১ সালে কুড়িজনকে নিয়ে পথ চলা শুরু হয় পুলকের। পুলক, তার কলেজ পড়ুয়া দুই বোনকে পড়ানোর দায়িত্ব দেন সেই সময়।
প্রাথমিক ভাবে নিজের খরচেই শুরু করেন তিনি। পরবর্তীকালে ইয়াস ঝড়ে ত্রাণ দিতে কিছু সংস্থা আসে সেই এলাকায়। তখন পুলকের উদ্যোগের কথা শুনে তারাও পাশে দাঁড়ায়। বর্তমানে পাঠশালার পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি। এখন তিনজন মতন শিক্ষক রয়েছেন।
মূলত সরকারি স্কুলের প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদেরই সাহায্য করা হয় এই পাঠশালায়। পড়ুয়াদের বই থেকে শুরু করে খাতা, নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার সবকিছু দেওয়া হয় এই পাঠশালাতেই। সেই সঙ্গে বছরে দুবার করে নতুন পোশাক ও দেওয়া হয় তাদের।
এই বিষয়ে পুলক এক সংবাদ্মাধ্যমের দ্বারা জানান যে তিনি দিনে এক টাকা করে বছরে ৩৬৫ টাকা করে প্রতি পড়ুয়াদের কাছ থেকে নেন। তবে টাকা দেওয়া নিয়ে কোনও জোরাজুরি করা হয় না এই খুদে পড়ুয়াদের। কেউ সেটুকুও দিতে না পারলেও কোনো অসুবিধা নেই।
জানা গিয়েছে, বছর পঁচিশের পুলক এখন অসুস্থ রয়েছে। চিকিৎসা চলছে তার। তাই ভারী কাজকর্ম তেমন করতে পারেন না। তবুও স্কুল বন্ধ হতে দেননি।
এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন,"স্কুল ঘিরে অনেক স্বপ্ন। অনেকে পাশে দাঁড়িয়েছেন। সকলের সাহায্য নিয়ে ছেলেমেয়েগুলোর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই।"