সবুজ কলাপাতায় লেবু লঙ্কা আর গরম ভাতের গন্ধ। মাটিতে বসে পাত চেটে খাওয়ার অভ্যাস বাঁচিয়ে রেখে এখনও বঙ্গ জীবনের অঙ্গ, কলকাতার পাইস হোটেলগুলো।
পয়সাকে ইংরেজরা বলত পাইস। এক আনার চার ভাগের একভাগ হল পাইস।
একপয়সার বিনিময়ে পেট চুক্তিতে খাওয়া যেত ভাত ডাল মাছ। পেট চুক্তি মানে পেট ভরা। ভাত আর ডাল বা ঝোল যত ইচ্ছা নেওয়া যেত যেত।
পরবর্তী কালে একপয়সার বদলে খাবারের আয়োজন অনুযায়ী, অর্থাৎ নিরামিষ না মাছ, নাকি মাংস এসবের সাপেক্ষে একটা নির্দিষ্ট দাম স্থির হত। কিন্তু পেটচুক্তি ব্যপারটা পাইস হোটেলে বহুদিন পর্যন্ত ছিল।
সেই থেকেই হয়ত লোক মুখে পাইস হোটেল কথাটা চালু।
জগন্মাতা ভোজনালয়
বিবেকানন্দ রোড ধরে সোজা কৈলাস বসু স্ট্রিট। বাস রাস্তা ছেড়ে একটু হাঁটলেই বাঁ দিকের গলিতে একটা সরু লম্বাটে ধরনের বাড়ি। বেশ পুরনো। জগন্মাতা ভোজনালয়। ৪০ নম্বর কৈলাস বসু স্ট্রিট।
পুরনো টিনের হাতে রং করা সাইন বোর্ড। হরফের ব্যবহার দেখে বাইরে থেকেই দোকানের বয়স আন্দাজ করতে পারবেন। বাংলা বোর্ডের তলায় ইংরেজি ও ওড়িয়া ফ্লেক্স।
ওড়িশা থেকে বিকল চন্দ্র দাস রুটি রুজির টানে একদিন এসে পড়েন কলকাতায়। সম্বল বলতে হাতের রান্না। সেই নিয়েই নেমে পড়লেন ভাগ্য পরীক্ষায়। শুরু করলেন ভাতের হোটেল। জগন্মাতা ভোজনালয়।
এখন দেখেন তাঁর তৃতীয় প্রজন্ম। অর্থাৎ বিকল চন্দ্র দাসের নাতি গঙ্গাধর দাস।
বাড়ির গায়েই সরু গলি দিয়ে ভিতরে ঢোকার দরজা। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলেই ক্যাশ কাউন্টার। পাশেই মেনু বোর্ড।
তার পাশের ঘরে খাওয়ার জায়গা। হাঁটু ঠিক থাকলে আপনি বসতেই পারেন মেঝেতে। চেয়ার টেবিলের ব্যবস্থাও আছে।
কাঁসার থালায় কলাপাতা পিছিয়ে আপনাকে দেওয়া হবে ধবধবে গরম ভাত। সঙ্গে লেবু, কাঁচালঙ্কা। পাশের বাটিতে ডাল, নিরামিষ তরকারি। চাটনি।
তারপর আপনার পছন্দ অনুযায়ী মাছ- মাংস। চিংড়ি, চিতল, ভেটকি, ইলিশ। কাঁকড়াও পাবেন। তবে মুরগীর মাংস চাইলে সেটা পাবেন না। পুরনো বাঙালি রেওয়াজ মেনে আজও জগন্মাতার হেঁশেলে ডিম- মুরগির প্রবেশ নিষেধ। শুধু মাত্র পাঁঠার মাংসের ঝোলই পাবেন।
তবে বৃহস্পতিবার বাঙালির লক্ষীবারে মাংস রান্না হয় না।
জগন্মাতায় এখনও রান্না হয় কয়লার উনুনে। প্যাকেট মশলা নয়, সমস্ত রান্না করা হয় শিলে বাটা মশলায়।