অনেক তো ইতিহাস হল। তা টানা কি আর ইতিহাস পড়ে যেতে ভাল লাগে? ধৈর্য ধরুন হে পাঠকবৃন্দ... এবার আসছি সেই সব ভাল ভাল কথায়... অর্থাৎ কিনা বেড়ানো এবং... ঠিক ধরেছেন - পেটপুজো - মানে খাওয়া দাওয়ার কথায়।
নদিয়ার নাম মনে পড়লেই প্রথম যে শহরের নাম মনে পড়ে তা হল কৃষ্ণনগর। আর কৃষ্ণনগরের নাম মনে এলেই লাইন দিয়ে বেশ কিছু নাম মনে আসতে থাকে। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র, রাজবাড়ি, জগদ্ধাত্রী পূজা, গোপাল ভাঁড় এবং..... এবং সেই অমৃতসম মিষ্টি.. সরভাজা এবং সরপুরিয়া।
কে বলে শুধুমাত্র দেবতারাই অমৃতের স্বাদ পেয়েছেন! যারা একথা বলে তারা ভুল বলে। তারা কখনো কৃষ্ণনগরের আসল সরভাজা আর সরপুরিয়ার স্বাদ পায়নি। দুধের সর আর ঘি দিয়ে তৈরি পৃথিবী বিখ্যাত এই মিষ্টি দুটি স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় সত্যিই। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই নয়, ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজ্য থেকেও মানুষ আসেন সরপুরিয়া এবং সরভাজার স্বাদ গ্ৰহন করার জন্য। এই মিষ্টি দেশের বাইরে রফতানিও হয়। স্বয়ং মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র সেরা ময়রাদের আনিয়েছিলেন নিজের রাজধানী কৃষ্ণনগরে। তাঁদের নতুন নতুন মিষ্টি তৈরিতে উৎসাহ দিতেন। দক্ষ ময়রাদের দেওয়া হতো “দাক্ষী” উপাধি।
এরপর আছে নবদ্বীপের মিষ্টি দই। নবদ্বীপ শুধু শ্রীচৈতন্যদেব এবং শিক্ষা সংস্কৃতির প্রাচীন বিখ্যাত নয় নবদ্বীপ তার মিষ্টির জন্যও বিখ্যাত। যেমন শান্তিপুর.... যেমন ভাল তাঁতের কাপড় তৈরি হয় তেমনি ভালো মিষ্টিও। রানাঘাট ও ভালো মিষ্টি তৈরিতে পিছিয়ে থাকেনি। পান্তুয়া বাংলার এক প্রসিদ্ধ মিষ্টি। এর মধ্যে নদীয়া জেলার রানাঘাটের পান্তুয়া সব থেকে বেশি বিখ্যাত। রানাঘাটের জগু ময়রাকে পান্তুয়ার জনক বলা হয়।তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে নদিয়ার মানুষজন শুধু জ্ঞানীই নন, গুণী এবং এই নিবন্ধ লেখিকার মতো খাদ্যরসিকও।
নদিয়ার বিখ্যাত মানুষদের নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। কৃতি মানুষের তো অভাব নেই নদিয়ায়।
তার মধ্যেও যে মানুষটি সবথেকে বেশি বিখ্যাত তাঁর নাম বিশ্বম্ভর মিশ্র। চিনতে পারলেন না? শ্রীচৈতন্যদেবের পিতৃদত্ত নাম এটাই ছিল যে। এছাড়াও নদিয়ার বিখ্যাত মানুষদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়, কৃত্তিবাস ওঝা, রামতনু লাহিড়ী, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, নীলদর্পণ খ্যাত দীনবন্ধু মিত্র এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
এবার আসি বেড়ানোর গল্পে। কৃষ্ণনগর বেড়ানোর একটি আদর্শ জায়গা। এখানে রাজবাড়ি একটি দ্রষ্টব্য স্থান। এছাড়া দেখার জায়গা কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজ, কৃষ্ণনগর পৌরসভা এবং ঘূর্ণি। এই ঘূর্ণিতে গেলে কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল কীভাবে তৈরি করা হয় সেটা দেখা যেতে পারে। আর বিখ্যাত মিষ্টির দোকানগুলো তো আছেই।
এরপর নদিয়াতে আছে মায়াপুর। ভাগিরথীর তীরে মায়াপুরে রয়েছে ইসকনের মূল কেন্দ্র এবং বিশাল মন্দির। আছে বেথুয়াডহরির অভয়ারণ্য যেখানে অনায়াসে দেখা পাবেন প্রচুর হরিণ এবং পাখির। আর মহাপ্রভুর জন্মস্থান হিসেবে এবং প্রাচীন ঐতিহ্যের জন্য নবদ্বীপ তো বিখ্যাতই। এছাড়াও নদিয়ায় বহু গ্ৰামে এখনো বহু পুরনো মন্দির, ঢিপি বা পুরনো নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ রয়ে গেছে দর্শনীয় স্থান হিসেবে যাদের গুরুত্ব কম নয়।
নদিয়া জেলার কথা এবারের মতো শেষ করি... পরের সপ্তাহে আসব নতুন জেলার "কথা ও কাহিনী" নিয়ে।।