বিষন্নতা আর প্রতিবাদের মিশেলে এক রকস্টার

মাদকাসক্ত। যৌন নিপীড়িত। স্কুলে সহপাঠীদের নিকট অপদস্থ হওয়া একজন গায়ক।ভেঙ্গে যাওয়া হৃদয় থেকেই গান আসে, যখন হৃদয় ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায় তখনি বাজে গানের ঝঙ্কার-রণবীর কাপুর অভিনীত রকস্টার ছবির একটা সংলাপের বাংলা তর্জমা করলে এমনই শোনায়।ছেলেবেলা থেকেই কাঁচা মনে স্বপ্ন বুনেছিলেন রকস্টার হওয়ার। গিটার হাতে মাতিয়ে তুলবেন রাতের আলো আঁধারির মঞ্চ। সামনে দাঁড়িয়ে অগুনতি মানুষ তাদের রোজের অপমান, লাঞ্ছনা ভুলে মাথা দোলাবে তাঁর সুরে।

এই ছিল জীবনের জলছবি। পেরেওছিলেন মঞ্চে উঠতে।সাদা ধবধবে মুখমণ্ডলের উপর স্পাইক করা রূপোলী ছোট ছোট চুল। কানের লতিতে কালো রঙের দুলের মত কী একটা বস্তু, যা পরবর্তীতে হয়ে উঠবে তাঁর কোটি কোটি ভক্তের সত্তার চিহ্ন বিশেষ।গলায় সুর খেলাতে পারতেন যে কোনও মাত্রায়। যদিও শুধু মাত্রা ছুঁলেই হওয়া সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রক গায়ক। থাকতে হয় আবেগ ভেজা কিছু অনুভূতি। জীবনের সব তিক্ত অভিজ্ঞতা কেই সুর মন্ত্র করেছিলেন তিনি।তাই তাঁর গান গিয়ে ধাক্কা দিয়েছিল সেরকমই নিরন্তর পালিয়ে বেড়ানো বহু শ্রোতাকে।

সাত বছর বয়সে প্রথম ধাক্কা দেয় জীবন। যৌন নিপীড়নের শিকার হন চেষ্টার। অবসাদ ঘিরতে শুরু করে।এগারো বছর বয়সে দেখেন বাবা মার বিচ্ছেদ। একাকীত্ব গ্রাস করে তাঁকে। বাবা মার বিচ্ছেদের পর তিনি থাকতে লাগলেন বাবার সঙ্গেই।প্রথমেই কোনও প্রকার মাদকের শরণাপন্ন হননি।অভিভাবক, বন্ধুহীন এবং একাকীত্ব জীবনের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে ওঠে ধীরে ধীরে মারিজুয়ানা।ঘরময় ধোঁয়ায় চলছে নিজেকে খোঁজা।

chester

ওইদিকে নিজের পথ হাতড়াচ্ছে জিরো থেকে নাম পাল্টে হাইব্রিড থিওরি। সেও ঠোকর খাচ্ছে দ্বারে দ্বারে। রেকর্ড হচ্ছেনা কোনও গান।হবে কী করে? জাদুকরকে যে তারা এখনও পায়নি।জাদুকর চেষ্টার বেনিংটন। আর রক সঙ্গীতের ইতিহাসের পাতায় নাম তুলবে আগামীর লিঙ্কিং পার্ক।

" আমি ধরে আছি, অনেককিছু, সবকিছুই ভারী, আমি যতটা ধরতে পারি তার থেকেও ভারী..."আসলে ভারী হতে থাকে মন। পরপর বিবাহ বিচ্ছেদ। কীর্তি ও যশের সঙ্গে হাত ধরাধরি করেছিল মাদকাসক্তি। নেশা তাঁকে শান্ত হতে দেয়নি।এমন অনেক গানেই খুঁজে পাওয়া যাবে তাঁর মনের আর্তনাদ। তাঁর প্রতিটি গানে বাঁচার ইচ্ছে ছিল অপরিসীম। গানই ছিল তাঁর বাঁচার অবলম্বন।

তাই চেষ্টার কে এখন পাওয়া যাবে তাঁর গানের ভিতর। সঙ্গীত জীবনে গ্র্যামি এ্যাওয়ার্ড সহ অসংখ্য পুরুস্কার পাওয়া এই কিংবদন্তী মানুষ হিসেবে ছিলেন অসাধারণ।“পেটা” নামক প্রাণী সংরক্ষণ মূলক সংস্থাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ওতপ্রোত ভাবে। বন্ধ করে দেন মাছ মাংস খাওয়া। শরীরে উল্কি আঁকেন প্রাণীদের জন্য।

"যতক্ষণ আমি আমার বাইরে থাকি আমি ভালো থাকি কিন্তু যখন আমি আমার ভেতর থাকি আমি ভালো থাকি না। আমার হতাশা আমাকে ভালো থাকতে দেয়না, এটা শুধুই আমাকে নিচে নিয়ে যায়। আমি আমার সাথে সব সময় যুদ্ধ করি, যুদ্ধে হেরে গেলে আমি হয়তো আর বাঁচব না।”না বাঁচার কথা ভাবলেনই বা কেনো তিনি! এই প্রশ্ন আজও তাঁর ভক্ত কুলে বিষাদের কালো মেঘ নামিয়ে আনে।

গতকাল ৪৪ এ পড়লেন মাতোয়ারা গায়ক। জন্মদিনের অসংখ্য শুভেচ্ছাবার্তা ইতিমধ্যেও পড়ে শেষ করে উঠতে পারেননি হয়ত। তারাদের ঠিকানায় চিঠি গিয়েছে অজস্র।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...