একই অঙ্গে বহু রূপ

একজন প্রকৃত শিল্পী কখনই থেমে থাকেন না, আমৃত্যু কিছু না কিছু সৃষ্টির তাড়না থেকে যায় তার সঙ্গে। অনেকেরই এ প্রশ্ন থাকতে পারে যে, ছ'টা জাতীয় পুরস্কার, দু'টি অস্কার, দু'টি গ্র্যামি, একটা গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড, ১৫ টা ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড, পদ্মভূষণ -দেশে বিদেশে এহেন সম্মান পাওয়ার পরও একজন আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিষ্ঠিত সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালকের জীবনে আর কী কী করার থাকতে পারে? উত্তরটা বোধহয় হবে- 'অনেক কিছুই'। হ্যাঁ, সেই দৃষ্টান্তই তুলে ধরেছেন অস্কারজয়ী সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমান। সঙ্গীত পরিচালকের পর এবার তাঁর প্রতিভা-শিরোপায় যুক্ত হয়েছে আরও কয়েকটি পালক।

২০১৫ থেকেই হাওয়ায় ভাসছিল এ আর রহমান ছবি পরিচালনার কাজে হাত দিতে চলেছেন। সেই খবরে সিলমোহর দিয়ে সম্পূর্ণ বিরল প্রযুক্তির মাধ্যমে তিনি বানিয়ে ফেলেছেন আস্ত একটি সিনেমা! ফ্রান্সের ভূমধ্যসাগরের কোল ঘেঁষা কান শহরে ২০১৯, ৭২ তম 'কান' আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনা হয়েছে ১৪ মে। আর কান চলচ্চিত্র উৎসবের এবারের বিশেষ আকর্ষণ ছিলো এ আর রহমানের পরিচালিত সিনেমা লে মুস্ক’ স্বল্পদৈর্ঘের এই সিনেমাটি বানানো হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে অভিনব প্রযুক্তিতে। এই ছবি দেখতে হলে প্রয়োজন পড়বে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বহুমাত্রিক ভি আর-এর। তবে বিশ্বের আধুনিক দেশ গুলোতেই এই প্রযুক্তির সহজলভ্যতা নেই এবং সেকারনেই ভারতে এই ছবি দেখতে না পাওয়ার সম্ভবনা নেই বললেই চলে।

পরিচালক এ আর রহমানের এই ছবিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফ্রান্সের নোরা আরনেজেদার এবং ব্রিটিশ অভিনেতা গাই বারনেট। ইতালির রাজধানী রোমে ১৩ দিনে ছবিটির শুটিং হয়। এ আর রহমান বলেন, “লে মুস্ক”-এর মতো স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির মুক্তির জন্য ভিআর (ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি) সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। দুঃখজনকভাবে আমাদের থিয়েটারগুলো সে জন্য এখনো প্রস্তুত নয়। ভিআরের শর্ত পূরণ করবে এমন কোনো হল আমাদের দেশে নেই। তাই এ ধরনের সিনেমা প্রথমবার তৈরি করাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।’

এই ছবির বিষয়বস্তু সম্পর্কে এ আর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো একদিন আমি আমার স্ত্রী'র সঙ্গে ঘরোয়া কথাবার্তা বলছিলাম। সে আবার পারফিউম খুব পছন্দ করে। ওইই আমাকে পারফিউম নিয়ে একটা ছবি বানানোর পরামর্শ দেয়। সেই ছবিটিই “লে মুস্ক”।

এই ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন এ আর রহমান আর তাঁর স্ত্রী সায়রা বানু, দু'জনে মিলেই। ছবিটি জন্ট ওয়ান নামের অত্যাধুনিক দুটি ক্যামেরা দিয়ে শ্যুট করা হয়েছে। পুরো ৩৬০ ডিগ্রির আবহকে ধরার জন্য প্রতিটি ক্যামেরায় ছিল ২৪টি করে সেন্সর।

তাই 'রহমানের “লে মুস্ক”-কে কোনও গড়পড়তা ভিআর ছবির খাতে ফেললে চলবে না। সব ইন্দ্রিয়কে ব্যবহার করে এ ছবি উপভোগ করতে হবে। এর জন্য উন্নত ভিআর গিয়ারের পাশাপাশি দরকার ডিমের মতো দেখতে মোশন কন্ট্রোল রিগড চেয়ার”

এক সংবাদপত্রের প্রতিনিধি,  যিনি এ ছবি দেখেছেন তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেছেন, 'চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখে ভিআর গিয়ার পরার পর বেশ আরামই বোধ হবে। ছবি শুরু হওয়ার পর মনে হবে, চলে গেছি ভিন্ন কোনো জগতে। চেয়ারটি ছবির দৃশ্য-কাহিনির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আগে-পিছে, ডানে-বাঁয়ে কাঁপতে থাকবে। সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু দৃশ্যের সময় হঠাৎ করেই একধরনের সুঘ্রাণ এসে লাগবে নাকে।’

তবে রহমানের প্রতিভা এখানেই শেষ নয়। এ আর রহমান এইমুহূর্তে সপরিবারে কান-এ রয়েছেন কিন্তু কর্মক্ষত্রে তিনি এখন ব্যস্ত রয়েছেন তাঁর পরবর্তী ছবি নাইনটি নাইন সংস’-এর কাজ নিয়ে। এই ছবিটি আবার রোমান্টিক মিউজিক্যাল ধাঁচের। ছবিটির কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন এ আর রহমান এবং পরিচালক বিশ্বাস কৃষ্ণমূর্তি। অন্যদিকে, এ আর রহমান ছবিটির একজন সহপ্রযোজকও। কাহিনীকার ও সহপ্রযোজক হিসেবে নাইনটি নাইন সংস’ তাঁর প্রথম ছবি।

এ আর রহমানের কথায়, ‘নাইনটি নাইন সংস’ মানে এই না যে ছবিতে ৯৯টা গান থাকবে। তবে গান নির্ভর এই ছবিতে ১৪ বা ১৫টা গান থাকবে। সেগুলো হিন্দি, তামিল ও তেলেগু ভাষার।' তিনি এই গানগুলোর ওপর প্রায় বছর পাঁচেক ধরে কাজ করেছেন। এই ছবিতে কয়েকজন আন্তর্জাতিক শিল্পীও কাজ করেছেন। মাইকেল জ্যাকসন থেকে শুরু করে অস্কারজয়ী মিউজিক্যাল রোমান্টিক ফিল্ম ‘লা লা ল্যান্ড’-এর মিউজিকে কাজ করা র‍্যান্ডি কারবারও যুক্ত রয়েছেন এই প্রজেক্টের সঙ্গে। চলতি বছরের ২১ জুন ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...