ঠাট্টা-রসিকতা ছিল দ্বিজেন্দ্রলালের ঠোঁটের ভূষণ। আর ঐশ্বর্য ছিল প্রাণখোলা হাসি। অজস্র হাসির গানে যিনি বাংলা মাতিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিগতজীবনে সুরসিক হবেন, তাতে আর বিচিত্র কি! তবে, ঠাট্টার পাত্রহিসেবে তাঁর কাছে ছোট-বড় ভেদ একেবারেই ছিল না। গুরুজনদের ঠাট্টা করা যায় না--সমাজ-প্রচলিত এই ধারণাটিকে পাত্তা দেবার আগ্রহ তাঁর মোটেই ছিল না। তিনি বলতেন, 'ঠাট্টা যদি গুরুজনের সঙ্গে না করব তবে তো মেনেই নেওয়া হল যে ওটা খারাপ জিনিস।" ফলে, ঠাট্টার হাত থেকে তাঁর শ্বশুরমশাইও রেহাই পেলেন না। শ্বশুর প্রতাপ মজুমদার, হোমিওপ্যাথ, এবং বেশ রসিক লোক। হাজির-জবাব মানুষ, সহজে জামাইকে ছেড়ে কথা কন না। ফলে, উভয়ত জমে ভালো। হোমিওপ্যাথিতে যে রোগ সারে, এটা দ্বিজেন্দ্র মোটেই বিশ্বাস করতেন না। সুতরাং, এই নিয়ে শ্বশুরের সঙ্গে প্রায়ই রসিকতা চলত। পেশা নিয়ে রসিকতা, যতই হেসে হালকা থাকুন, গায়ে তো একটু লাগেই! একদিন শ্বশুর তাই বলে বসলেন, 'দ্বিজু, হোমিওপ্যাথিতে যদি কোন অসুখ না ই সারে, তবে আমি নিরন্ন থেকে লক্ষপতি হলাম কী ক'রে শুনি?" জবাবে দ্বিজেন্দ্র পেশ অতি সহজ হিসেব : "ধরুন কলকাতায় বিশ লক্ষ মানুষ। তাদের মধ্যে পাঁচ পার্সেন্ট--এক লাখ--কি আর বোকা নেই?...এদের মধ্যে পাঁচ পার্সেন্ট কিনা বিশ হাজার লোকের অসুখে প্রত্যেকে যদি একটিবারও আপনাকে তলব করে--পরে অবশ্য আর করবে না...তাহলে আপনাকে ষোল টাকা ভিজিট দিলে ১৬×২০০০০--লক্ষপতি কি বলছেন শ্বশুরমশায়, আপনার তো অন্তত ত্রিশলক্ষপতি হবার কথা আজ!" বলে নিজেই প্রাণখুলে হাসতে লাগলেন হা হা করে। শ্বশুর তো যুক্তি শুনে স্পিকটি নট! তবে তক্কে তক্কে রইলেন, জামাইকে মাত একবার দিতেই হবে!
বালিকা-স্ত্রী সুরবালাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি গেছেন দ্বিজেন্দ্র। এরইমধ্যে একদিন শ্বশুর বসেছিলেন বাড়ির বাইরে আরাম কেদারা পেতে। হঠাৎ সামনের আমগাছে কোত্থেকে একটি বাঁদর এসে জুটল। অমনি মাথায় দুষ্টুবুদ্ধি খেলে গেল শ্বশুরের। ডাক দিলেন মেয়েকে। হাজির হলেন সুরবালা। তারপর বাপ-মেয়ের কথোপকথনটি এরকম :
'কি বাবা?'
'গাছে কে বলতো?'
'কে বাবা?'
'তোর শ্বশুর!'
অমনি চোখে পড়ল বাঁদরটি। এতক্ষণে বুঝলেন বাপের কথার প্যাঁচ। সেইসঙ্গে পেছনে দ্বিজেন্দ্রকে দেখে সুরবালা পুরো ভেবলে গেলেন। রসিক জামাই কিন্তু উলটো প্যাঁচ খেললেন। যা বললেন, গুছিয়ে নিলে এরকম দাঁড়ায় : মেয়েকে তো ভেবলে দিলেন! আপনিও ভেবলে যাবেন, মেয়েকে যা বললেন, একবার আমায় বলে দেখুন তো!--তারপরই সেই হা হা প্রাণখোলা হাসি!