৭.৪ কেজি ওজনের কিডনি নিয়ে সমস্যায় পড়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন একজন রোগী| চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দুজন সদ্যজাত শিশুর ওজন একত্রিত করলে যা ওজন হয় সেইসমান ওজন হয়েছে এই রোগীর কিডনির| ঘটনাটি দিল্লির| সম্প্রতি, ৫৬ বছর বয়সী একজন রোগী এসে হাসপাতালে ভর্তি হন কিডনির সমস্যা নিয়ে| জানা গেছে, সেই রোগীর আগে থেকেই জিনঘটিত অসুস্থতা ছিল| এই ঘটনায় স্তম্ভিত চিকিৎসকেরাও|
চিকিৎসকদের বক্তব্য, একজন সুস্থ সবল মানুষের কিডনির ওজন হয় ১২০ থেকে ১৫০ গ্রাম| চিকিৎসকদের সন্দেহ ভারতে এখনও পর্যন্ত অপারেশনের ফলে যত কিডনি রোগীর শরীর থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে এটিই সবচেয়ে বৃহৎ| এমনকি পৃথিবীর মধ্যেই তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে এই কিডনির ওজন| এর আগে, ইউএসএ-তে একজন রোগীর শরীর থেকে ৯ কেজির একটি কিডনি অপারেশন করে বার করে আনা হয়েছিল| তারপরে নেদারল্যান্ডে একজন রোগীর কাছে পাওয়া যায় ৮.৭ কেজি ওজনের একটি কিডনি| এরপরেই স্থান পেল ভারত| এইক্ষেত্রে কিডনির ওজন গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৪ কেজি, জানালেন এই অপারেশনের মুখ্য চিকিৎসক ড: শচীন কাঠুরিয়া|
জানা গেছে, এই রোগী একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী| ২০০৬ সাল থেকে তিনি জিনঘটিত রোগ অটোজোমাল ডমিন্যান্ট পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজে আক্রান্ত| এটি একধরনের জেনেটিক রোগ যা বংশ পরম্পরায় একজন থেকে অপরজনের কাছে চলে যায়| এই রোগের ফলে কিডনির চারপাশে কিছু ফ্লুইড-ফিল্ড সিস্ট তৈরী হয় যা কিডনির স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা দেয়| এর ফলে কিডনিটি ফুলে ওঠে এবং তার ওজন বৃদ্ধি হতে থাকে| এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মূলত বয়স ৪০ এর কোঠা ছোঁয়ার আগেই কিডনি ফেলিওরের শিকার হন|
জানা গেছে, প্রতি ৭০০ থেকে ১০০০ জনের মধ্যে ১ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে| চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এই মুহুর্তে পৃথিবীতে প্রায় ১২.৫ মিলিয়ন মানুষ এই রোগকে সাথে নিয়ে বেঁচে আছেন| হাসপাতাল সূত্রের খবর, দিল্লির এই রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন পাচনতন্ত্রের সমস্যা নিয়ে| কিডনিটি অ্যাবডোমিনাল ক্যাভিটির বেশিরভাগ দখল করে ফেলাতেই হজমের সমস্যা হচ্ছিল এই রোগীর| প্রায় ২ ঘন্টার অপারেশনের পরে রোগীর শরীর থেকে বাদ দেওয়া গেছে তার বামদিকের কিডনিটি| রোগীর শরীরের ডানদিকের কিডনিটিও আকারে বেড়েছে| কিন্তু একসাথে দুটি কিডনি বাদ দিলে রোগীকে সারাজীবন ডায়ালিসিসের উপর নির্ভর করেই থাকতে হবে| এছাড়া এই মুহূর্তে ডানদিকের কিডনিটি রোগীর শরীরে খুব বেশি সমস্যার সৃষ্টি করছে না তাই এই মুহূর্তে তা বাদ দেওয়ার কথা ভাবছেন না চিকিৎসকেরা| যতদিন না কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা যাচ্ছে ততদিন ডানদিকের কিডনির অপারেশন করতে চাইছেন না তারা|