প্রায় ৩০ বছরের যাত্রাপথ অবশেষে তার ঠিকানায় পৌঁছালো| শেষ হলো দিন রাত এক করে করা গবেষনার এক সুন্দর সমাপ্তি| কিছু বছর আগেও ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার কাছে হার মেনে বসেছিলেন বিজ্ঞানীমহল| যে সময় তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল সেইসময় বিজ্ঞানীদের হাতে ধরা দেয়নি সে| কিন্তু অবশেষে তাকে পাওয়াই গেল| আবিষ্কৃত হল ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক| অন্য সব রোগের জন্য আগে থেকে প্রতিষেধকের ব্যবস্থা থাকলেও ম্যালেরিয়ার জন্য এতদিন কোনো প্রতিষেধক ছিল না| এছাড়া ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার জন্য বিশেষ কোনো ওষুধও এতদিন আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি| তাই এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াত|
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(হু)আফ্রিকার কয়েকটি দেশের সাথে হাত মিলিয়ে অবশেষে এই প্রতিষেধক আবিষ্কার করে| প্রাথমিকভাবে মালাউয়িতে দুই বছর পর্যন্ত শিশুদের এই প্রতিষেধক দেওয়া হবে| এরপর পাইলট প্রজেক্টের অঙ্গ হিসেবে ঘানা ও কেনিয়ায় আরটিএসএস নামে এই প্রতিষেধক দেওয়া হবে| জানা গেছে, তিন লক্ষেরও বেশি শিশুকে এই প্রতিষেধক দেওয়া হবে| এরপরই অন্য আর কোন কোন দেশে এই প্রতিষেধক পাঠানো যায় সেই নিয়ে ভাববে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা|
প্রতিবছর ম্যালেরিয়ার প্রভাবে যেভাবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, সেই কথা মাথায় রেখেই এই প্রতিষেধক তৈরির কথা ভাবা হয়েছে| হু এর ডিরেক্টর জেনারেল জানিয়েছেন, বিগত ১৫ বছর ধরে মশারি বিতরণ থেকে শুরু করে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে| বহুদিন ধরে একই পন্থা চলার ফলে এই কর্মসূচি মাঝরাস্তাতেই থেমে গেছিল| এবার এই জায়গায় নতুন কর্মসূচির প্রয়োজন পড়েছিল| সেই জায়গায় এই প্রতিষেধক ভালো কাজ করবে বলেই আশাবাদী সকলে| তিনি জানান, এর আগে আফ্রিকাতে শিশু মৃত্যুর জন্য মূলত দায়ী ছিল ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া। তাই আফ্রিকার শিশুদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য এই প্রতিষেধকটি আবিষ্কার করা খুবই দরকার ছিল। আদতে এটি পাইলট প্রজেক্ট হলেও এই প্রতিষেধকের আবিষ্কারকে সম্মান জানিয়েছেন দেশ বিদেশের গবেষকরাও।
কলকাতা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক জানালেন, ২০১৮ সালে ভারতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ ৯৯ হাজার। এই দেশে মূলত দুই ধরণের ম্যালেরিয়া দেখা যায়- ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়া এবং ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া। প্রথম প্রকারটি ক্ষতিকর না হলেও দ্বিতীয় প্রকারটিকে সাধারণত ক্ষতিকর বলেই ধরা হয়। এই দ্বিতীয় প্রকার অর্থাৎ ফ্যালসিপেরামকে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া বলা হয়ে থাকে। ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়া সাধারণত বেশি হয় এশিয়ার দেশগুলিতে। কিন্তু এই আবিষ্কৃত প্রতিষেধকটি মূলত শিশুদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে।
চিকিৎসকেরা জানালেন, এই প্রতিষেধকের ডোজের ব্যাপারে। তারা জানালেন, প্রথম বছরে অর্থাৎ শিশুর বয়স ১ পূর্ণ হওয়ার আগেই এই প্রতিষেধকের ৩টি ডোজ দিতে হবে। এরপর শিশুর বয়স দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগে দিতে হবে চতুর্থ ডোজটি। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় এই প্রতিষেধকের সাফল্যের হার অন্য ওষুধের থেকে ৪০ শতাংশ বেশি। তাই ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় পদক্ষেপ মানছেন বিদেশের বিজ্ঞানীরাও।